• facebook
  • twitter
Friday, 17 January, 2025

১২ ডাক্তারের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের দায়

মেদিনীপুর মেডিক্যাল

প্রতীকী চিত্র

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনায় গাফিলতিতে অভিযুক্ত ১২ জন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা রুজু করা হল। মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানায় এই মামলা রুজু করা হয়েছে। শুক্রবার সিআইডির একটি দল কোতোয়ালি থানায় গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মামলার তদন্তভার হাতে নেয়। এর আগে পর্যন্ত এই ঘটনায় অনুসন্ধান চালাচ্ছিল তারা।

গত সপ্তাহে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে সন্তানের জন্ম দেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে পড়েন পাঁচজন প্রসূতি। তাঁদের মধ্যে এক প্রসূতির মৃত্যু পর্যন্ত হয়। অভিযোগ উঠেছিল, নিম্নমানের স্যালাইন ব্যবহার করায় মৃত্যু ও অসুস্থ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অসুস্থ প্রসূতিদের মধ্যে ৩ জনকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। অন্যদিকে মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন এক প্রসূতির সদ্যোজাত শিশুরও মৃত্যু হয়েছে। প্রসূতি মৃত্যুর ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ১৩ সদস্যের একটি তদন্তকারী কমিটিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয় স্বাস্থ্য দপ্তর। পাশাপাশি ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিআইডির হাতে। তদন্ত কমিটি ও সিআইডির রিপোর্টে চিকিৎসকদের গাফিলতির ইঙ্গিত পাওয়া যায়। এই দুই রিপোর্টের ভিত্তিতেই মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার সহ ১২ জন চিকিৎসককে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপরই ওই ১২ জনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অনিচ্ছাকৃত খুনের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, রাজ্য সরকার নিজের দোষ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তুলছে।

এদিন জেলা উপমুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক থানায় গিয়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ জমা দিয়েছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এরপর সরকারিভাবে মামলার তদন্তভার হাতে নেয় সিআইডি। জানা গিয়েছে, চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুন, কাজে গাফিলতি, সরকারি কর্মচারী হয়ে আইন না মেনে কারও ক্ষতি করার মতো একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। শুক্রবার তদন্তভার হাতে নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান সিআইডির তদন্তকারীরা। সেখানে তাঁরা নতুন সুপার ইন্দ্রনীল সেনের সঙ্গে কথা বলেন।

উল্লেখ্য, চিকিৎসকদের সাসপেনশন প্রত্যাহার করার দাবিতে বৃহস্পতিবার পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা। শুক্রবার থেকেই সম্পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়িয়ে আংশিক কর্মবিরতির পথে হাঁটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা। শুক্রবার সারাদিনই হাসপাতালের আইসিইউ, প্রসূতি, শিশু বিভাগ এমনকী বহির্বিভাগেও পরিষেবা মোটের উপর স্বাভাবিক ছিল।

শুক্রবার সিআইডি আধিকারিকরা কোতোয়ালি থানায় গিয়ে এফআইআর-এর কপি সংগ্রহ করেন। কানাঘুষো শোনা গিয়েছে, এফআইআর-এ নাম থাকা ডাক্তাররা গ্রেপ্তার হতে পারেন।

রাজ্য সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করায় কর্মবিরতি ও আন্দোলনের হুমকি দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। তবে শুক্রবার সকাল থেকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিত্র ছিল অন্য দিনের মতোই স্বাভাবিক। রোগী ভর্তি থেকে আউটডোর পরিষেবা সবই স্বাভাবিক ছিল।

রোগী মৃত্যু নিয়ে রাজ্য সরকার এতটা কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করবে তা অনেকেই মনে করেননি। এনিয়ে দিনভর গুঞ্জন শোনা গেছে চিকিৎসক মহলে।

দু-একজনকে জুনিয়র ডাক্তারদের সমর্থনে হাতে পোস্টার নিয়ে ঘুরতে দেখা গেলেও ওইটুকুই। শুক্রবার সন্ধ্যায় সুপারের ঘর থেকে বেরিয়ে সিআইডি দল সোজা চলে যায় কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মৌসুমী নন্দীর অফিসে। আজই তাঁরা গ্রেপ্তার করতে পারেন সাসপেন্ড হওয়া সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারদের।

এদিন সন্ধ্যায় জুনিয়র ডাক্তাররা পুনরায় তাঁদের আন্দোলনের রূপরেখা তৈরি করতে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন। তবে সন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেননি।

এদিন রাতে সুপার জানান, এখনো পর্যন্ত কোনো জুনিয়র বা সিনিয়র ডাক্তার কাজে যোগ দিতে অনিচ্ছুক বা কাজ করছেন না, এমন কোনো খবর তাঁর কাছে নেই। রোগী ভর্তি থেকে পরিষেবা সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে। আরএল স্যালাইন ব্যবহার নিয়ে রাজ্য স্বাস্থ্যভবন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর থেকে সেই স্যালাইন ব্যবহার করা হচ্ছে না।