রঘুনাথপুর, ১৩ জানুয়ারি: পুরুলিয়ায় তিনজন সাধুকে নিগ্রহের ঘটনায় জড়িত ১২ জনকে গ্রেপ্তার করল পুলিশ। আজ শনিবার তাদের রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সকালে এই গ্রেপ্তারির তথ্য দেন। তিনি বলেন, সাধুদের নিগ্রহে জড়িত থাকার ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাধুদের অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা রুজু করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে আমরা তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নিয়েছি।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, “আমরা ওই তপস্বীদের সম্ভাব্য সবরকম সহযোগিতা করছি। এবং তাঁদের গাড়িও মেরামত করে দিয়েছি। ঘটনার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং সাধুদের যতটা সম্ভব সহযোগিতা করে।”
ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, গত ১১ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার স্থানীয় তিন নাবালিকা অবাঙালি ওই সাধুদের ভাষা বুঝতে না পারার ফলে এই ঘটনা ঘটে। সাধুরা তাঁদের গাড়িতে চড়ে কাশিপুর রোডের কাছে চাকনার দিকে যাচ্ছিলেন। সেসময় ওই তিন নাবালিকা স্থানীয় কালী মন্দিরে পুজো দিতে যাচ্ছিল। তাদের সামনে সাধুরা গাড়ি থামান। এবং তাদের কাছে কিছু জানতে চান। মেয়েগুলো সাধুদের ভাষা বুঝতে না পেরে ভাবে, তাদের পিছনে সাধুরা ধাওয়া করেছে। তখন তারা অহেতুক চিৎকার ও কান্নাকাটি করে স্থানীয় লোকজন জোগাড় করে। স্থানীয় জনতা মেয়েদের অভিযোগ শুনে সাধুদের আটক করে স্থানীয় দুর্গা মন্দিরে নিয়ে যায়। তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে। এমনকি সাধুদের মারধরও করে। পুলিশ খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তাঁরা উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে জানান, এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি ছাড়া আর কিছু নয়।”
পুলিশ সুপার ফের বলেন, গঙ্গাসাগরের তীর্থযাত্রী ওই তিন সাধুর সঙ্গে নাবালিকাগুলির ভাষাগত ভুল বোঝাবুঝির ফলেই এই ঘটনা ঘটেছে। মেয়েগুলো ভয় পেয়ে গিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।
মধুর গোস্বামী নামে সাধুদের মধ্যে একজন বলেন,”আমরা গঙ্গাসাগর যাওয়ার পথে বেশ কিছু লোকজন আচমকা আমাদের গাড়ি থামিয়ে গালিগালাজ করে। এরপর ভাঙচুর ও মারধর করে। প্রায় দুই থেকে তিনশো জনতা আমাদের আক্রমণ করে। আমরা তাদের আক্রমণে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”
এই ঘটনার পর আজ সাত সকালে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ জ্যোতির্ময় মাহাতো নিগৃহীত সাধুদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি সেখানে দাবি করেন,”এই ঘটনার পিছনে শেখ আনোয়ার নামে একজন ব্যক্তি জড়িত আছে। যে গেরুয়া পোশাক পরা সাধুদের দেখে গ্রামের লোকজনকে দলবদ্ধ করে আক্রমণ চালায়। এই ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করলে বড় কোনও মাথা সামনে চলে আসবে। পুলিশ বিষয়টাকে ধামা চাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
এদিকে ঘটনার পর একজন তৃণমূল নেতা এক্স হ্যান্ডেলে অভিযোগ করে বলেন,”এই সাধুরা বিজেপির এজেন্ট। তাঁরা নারী পাচারের সঙ্গে যুক্ত। আমরা তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি।” তৃণমূল নেত্রী শশী পাঁজাও একই কথা বলেন। তিনি দাবি করেন, বিজেপি বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছে, ওই সাধুরা তাদের যাওয়ার পথে গ্রামের মেয়েদের অপহরণের চেষ্টা করছিল।