ট্যাব-কাণ্ডে মোট ধৃত ১০, রয়েছেন একজন শিক্ষকও

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

স্কুল পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ট্যাবের টাকা গায়েবের ঘটনায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয়েছিল চারজনকে। বুধবার আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ট্যাবের টাকা হাতানোয় ধৃতদের একজন পেশায় কৃষক! সাইবার দুর্নীতিতে তার সঙ্গী চা বাগানের এক শ্রমিক। ছয়জনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মালদহ থেকে। আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে উত্তর দিনাজপুর থেকে। তাদের জেরা করে মিলেছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মালদহে ধৃতদের নাম রকি শেখ, পিন্টু শেখ, শ্রবণ সরকার এবং জামাল শেখ। মালদহের বৈষ্ণবনগর এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই চারজনের সকলেরই সাইবার ক্যাফে আছে। সেই ক্যাফেতে বসেই দুষ্কৃতীরা এই প্রতারণা চক্র চালিয়ে যাচ্ছিল। এদের মধ্যে একজন শিক্ষকও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এর আগে একই অভিযোগে উত্তর দিনাজপুর থেকে তিনজন ও মালদহ থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। এই নিয়ে জালিয়াতির ঘটনায় কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে মোট দশ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত ট্যাব কাণ্ডে কলকাতা বাদে জেলাগুলিতে মোট অভিযোগ জমা পড়েছে ৫৬টি। তাতে গ্রেপ্তার হয়েছে মোট আটজন। ঝাড়গ্রামের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ১০টি।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ চার অভিযুক্তকে আটক করে বৈষ্ণবনগর থানায় নিয়ে যায়। রাতভর তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের থেকে একাধিক জিনিস উদ্ধার করে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে ১৫টি পেনড্রাইভ, ল্যাপটপ, কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক, ডায়েরি, ব্যাঙ্কের নথি সহ আরও বেশ কিছু জিনিসপত্র। তদন্তকারীদের অনুমান, এই ট্যাব কেলেঙ্কারির সঙ্গে একটি বড় চক্র জড়িত রয়েছে। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।

অন্যদিকে জেলার পর খাস কলকাতার দুই স্কুলে ট্যাবের টাকা গায়েব হওয়ার অভিযোগের তদন্তে নেমে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। মঙ্গলবার যাদবপুর এবং সরশুনা থানা এলাকার দুটি স্কুল মিলিয়ে মোট ৪৩ জন পড়ুয়ার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। বুধবার নতুন করে আরও ১৯ জন পড়ুয়ার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যার মধ্যে বেনিয়াপুকুর ৫ জন, মানিকতলায় ২জন, ওয়ার্ডগঞ্জে ২জন এবং কসবা থানা এলাকায় ১০জন স্কুল পড়ুয়ার প্রতারিত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে মোট প্রতারিত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৬২টি। যার ভিত্তিতে ইতিমধ্যে কলকাতা পুলিশে ইতিমধ্যেই কলকাতা পুলিশে ৬টি অভিযোগ জমা পড়ে। তদন্তে নেমে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে কৃষ্ণপদ বর্মন ও শরিফুল ইসলাম নামে এই দুইজনকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশ। যাদের ট্রানজিট রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ইসলামপুর আদালত।


কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এই দুই ব্যক্তির অ্যাকাউন্টকে প্রতারণার কাজে লাগানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমান, কমিশনের লোভ দেখিয়ে ব্যবহার করা হয়েছিল এইসব অ্যাকাউন্ট। তদন্তে আধিকারিকরা জানতে পেরেছেন, এই দুই ব্যক্তির অ্যাকাউন্ট টাকার বিনিময়ে কাজে লাগিয়েছিল উত্তর দিনাজপুরের এক বাসিন্দা। যদিও তার নাম তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করতে চায়নি কলকাতা পুলিশ।

মঙ্গলবার কলকাতার ঠাকুরপুকুর এবং যাদবপুর থানা এলাকার দুই স্কুল কর্তৃপক্ষ ট্যাবের টাকা চুরির অভিযোগ দায়ের করেছিল। অভিযোগ, ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্প বাবদ মোট ৪৩ জন পড়ুয়ার ১০ হাজার টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে ঢুকেছিল। তা নিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় সরশুনা এবং যাদবপুর থানায়। ঘটনার তদন্তে নেমে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দুই ব্যক্তিকে উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া থেকে গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ।

প্রসঙ্গত এই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মঙ্গলবার হাসেম আলি নামে এক সাইবার ক্যাফে মালিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। আশারুল হোসেন নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয় উত্তর দিনাজপুর থেকে। তিনি এই জেলার রামগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। আর চোপড়া থানার দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা সাদিক হোসেন ও মোবারক হোসেনকেও এদিন গ্রেপ্তার করে। বুধবার মালদহ থেকে আরও চারজন গ্রেপ্তার হতেই এই ঘটনায় জড়িত একটি বড় চক্রের হদিশ মিলতে চলেছে।

উল্লেখ্য, ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াদের দশ হাজার টাকা করে দেয় রাজ্য সরকার। মূলত অনলাইনে পড়াশোনার সুবিধার্থে ট্যাব কেনার উদ্দেশ্যে এই টাকা দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। কিন্তু সেই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা পড়া নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ ওঠে। প্রথম অভিযোগ ওঠে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। গত কয়েক দিন ধরেই রাজ্যজুড়ে শোরগোল শুরু হয়ে যায়। অভিযোগ, ৩০০-র বেশি পড়ুয়ার টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ঢোকেনি। কোথাও কোথাও আবার অভিযোগ, এক জনের টাকা চলে গিয়েছে অন্য আরেকজনের অ্যাকাউন্টে। এ ছাড়াও, ‘হ্যাক’ করে ট্যাবের টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে হাতানোর অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীকালে সেই অভিযোগ ওঠে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে।