বাংলার বাড়ি প্রকল্পে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পে দুর্নীতি রুখতে তৎপর নবান্ন। ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের ১২ লক্ষ উপভোক্তার প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে। এই টাকা দিয়ে বাড়ি তৈরির প্রথম পর্যায়ের কাজ ৩–৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। এর আগে আবাস যোজনায় মধ্যস্বত্বভোগীদের বিরুদ্ধে উপভোক্তাদের থেকে টাকা আত্মসাতের একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। এর জেরে উপভোক্তাদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল। এই ঘটনায় সরব হয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এরকম ঘটনা যাতে বাংলার বাড়ি প্রকল্পের অধীনে না ঘটে সেই বিষয়টি নজর দিতে চাইছে নবান্ন। বাড়ি বানাতে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে বিডিওদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা বাড়ি তৈরির কাজে উপভোক্তাদের সরাসরি সহযোগিতা করবে। রাজ্য চায়, উপভোক্তারা প্রকল্পের টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করুক।
এই বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে পঞ্চায়েত দপ্তর। পাশাপাশি বিডিওদের নতুন একটি এসওপি-ও পাঠানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চান, কোনও মধ্যস্থতাকারীর সহযোগিতা না নিয়ে উপভোক্তারা যেন নিজেরাই বাড়ি তৈরির কাজটি করেন। নবান্নের পাঠানো নির্দেশ অনুযায়ী, বাড়ি তৈরির কাজ শুরুর আগে বিডিওদের নিজ নিজ ব্লকের মার্কেট কমিটি এবং বাড়ি তৈরির উপকরণের বিক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এর মাধ্যমে সঠিক দামে গুণগত মান বজায় রেখে ইট, বালি, স্টোনচিপ, অ্যাসবেস্টস ইত্যাদি উপকরণ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক করে সামগ্রী মজুত করার দায়িত্ব থাকবে জেলাশাসকদের উপর। প্রয়োজনে নিতে হবে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতা।
ইতিমধ্যেই ১২ লক্ষ উপভোক্তা বাংলার বাড়ির প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের বাড়ি তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। সেই কাজের অগ্রগতি খতিয়ে দেখার পর রিপোর্ট সন্তোষজনক হলে তবেই মিলবে দ্বিতীয় কিস্তির টাকা। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পাওয়ার পর ৩ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে।
বাংলার বাড়ি প্রকল্পের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে প্রতি মাসে অন্তত একবার করে নির্মাণকাজ পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিদর্শনের পর নির্দিষ্ট রিপোর্ট জমা দিতে হবে সরকারি আধিকারিকদের। রিপোর্ট জমা পড়বে অ্যাপের মাধ্যমে। এর ফলে কাজের প্রকৃত অগ্রগতি সম্পর্কে সম্মক ধারণা পেয়ে যাবে পঞ্চায়েত দপ্তর।
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রীর মতো বাংলার বাড়ি প্রকল্পকেও প্রচারের বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে শাসকদল। এই প্রকল্পের প্রচার করতে গিয়ে উঠে আসবে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রসঙ্গও। তাই বাংলার বাড়ি প্রকল্পের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কোনও খামতি রাখতে চাইছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।