অভিষেকের সঙ্গে বৈঠকের পরে সুর নরম হুমায়ুনের

হুমায়ুন কবীর। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বহরমপুর, ২০ মার্চ— অবশেষে রণে ভঙ্গ৷ গলার স্বর ও সুর একেবারে নরম করে দলের প্রার্থীকেই সমর্থন করে ভোটের ময়দানে নেমে পড়ার অঙ্গিকার৷ অবশেষে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে জানিয়ে দিলেন তিনি সামনের রবিবার থেকে প্রচারে নামছেন৷ নিজের কেন্দ্রের ভোটার এবং অনুগামীদের কাছে আবেদন করলেন মাঠে নেমে পড়ে দলের প্রার্থীর সমর্থনে ভোট প্রচারের৷ তিনি অর্থাৎ মুর্শিদাবাদের ভরতপুর কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের ‘বিতর্কিত’ বিধায়ক হুমায়ুন কবীর৷ গত ১০ মার্চ ব্রিগেডের জনসভা থেকে রাজ্যের ৪২টি কেন্দ্রের প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেখানে বহরমপুর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী পাঁচবারের সাংসদ অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসাবে নাম ঘোষণা করেন বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য ইউসুফ পাঠানের৷ এই ঘোষণার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে দলীয় প্রার্থীকে বহিরাগত বলে উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন হুমায়ুন কবীর৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে খুব পরিষ্কার ভাষায় জানিয়েছিলেন অন্য রাজ্য থেকে খেলোয়াড় বা কলকাতা থেকে গায়ক নিয়ে গিয়ে পাঁচবারের সাংসদ অধীর চৌধুরীকে পরাস্ত করা যাবে না৷ শুধু তাই নয়, প্রার্থী বদল না হলে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে সময় মতো উত্তর দেওয়ার হুঁশিয়ারিও তিনি দিয়েছিলেন৷ যদিও মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রে দলের প্রার্থী আবু তাহের খান এ নিয়ে উত্তর দিতে গিয়ে হুমায়ুনকে বহিরাগত বলে পাল্টা আক্রমণ করেন৷ এদিকে গত ১৬ মার্চ বহরমপুরে কর্মীসভা করতে এসে হুমায়ুনের সঙ্গে আলাদাভাবে কথাও বলেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম৷ কিন্ত্ত তারপরেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ থেকে তিনি সরে আসেননি৷

অবশেষে ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে একান্তে কথা বলার পরে বিদ্রোহ থেকে সরে আসার ঘোষণা করেন হুমায়ুন কবীর৷ এক ভিডিও বার্তায় (যদিও এই ভিডিও-র সত্যতা ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ যাচাই করেনি) তিনি জানিয়েছেন, দলীয় নেতৃত্বের প্রতি আস্থা থেকে বহরমপুর কেন্দ্রে ইউসুফ পাঠানের সমর্থনেই প্রচারে নামবেন৷ কলকাতায় বসে যে ভিডিও বার্ত হুমায়ুন কবীর দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে তার গলায় স্বর একেবারে নরম৷ মাথা এবং চোখ নিচু৷ সেই অবস্থায় ভরতপুরের বিধায়ক বলছেন, ‘বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের সমস্ত ভোটার এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ কর্মী, সমর্থক, বুধ-অঞ্চল-ব্লক স্তরের নেতৃত্ব প্রমুখ সবার কাছে আমার আবেদন, আমি গত ১১ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত দলের মনোনীত প্রার্থী ক্রিকেট খেলোয়াড় ইউসুফ পাঠানকে নিয়ে আমার যে বক্তব্য ছিল, নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রাখতে গিয়ে সেই বক্তব্য থেকে অনেকটাই আমাকে সরে আসতে হয়েছে৷ ১৯ মার্চ সন্ধ্যায় ক্যামাক স্ট্রিটে আমাদের দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমার রুদ্ধদ্বার আলোচনা হয়েছে৷ নেতৃত্বের প্রতি আমি আস্থা-ভরসা রাখছি৷ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নেতা মেনে তার ঘোষিত প্রার্থী ইউসুফ পাঠানকে সমর্থন করছি এবং আপনাদের কাছে তাকে ভোট দেওয়ার আবেদন করছি৷’

তিনি আরও বলেছেন, ‘আগামী রবিবার থেকে ভরতপুর বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের কাছে এবং আমার হোম ভিলেজ বেলডাঙ্গা ২ ব্লকের ১১টি অঞ্চলের মানুষের কাছে আমি ইউসুফ পাঠানকে ভোট দেওয়ার জন্য আবেদন নিয়ে যাব৷ ঘরে ঘরে মানুষের কাছে যাব৷ দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে আমার খুব সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে আলোচনা হয়েছে৷ সেই আলোচনার ভিত্তিতে আমি আমার সাত দিনের বিরোধিতা থেকে সরে আসছি৷