কারণ না হয়েও কারণের শিকার দিল্লি শহরের বাসিন্দারা- শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা সাংঘাতিক রকম বৃদ্ধি পাওয়ায় চিন্তিত প্রশাসনিক প্রধান কেজরিওয়াল এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত কয়েকদিনে হঠ করে শহরের বায়ুদূষণের মাত্রাও ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল- যা আজ অসহনীয় হয়ে দাড়িয়েছে। শহরে বায়ুতে দূষণের মাত্রা বিপজ্জনক আকার ধারণ করার জন্য হরিয়ানা ও পাঞ্জাব সরকারকে দোষারােপ করেছেন।
দিল্লি শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা ৬০০ ছাড়িয়ে যাওয়ায় স্বভাবতই দৃশ্যমান্যতা কম থাকায় ৩২টি বিমানের পথ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স মােতাবেক- বায়ু দূষণের মাত্রা গতকাল ৪০৭ ছিল, রাতারাতি হঠ করে বেড়ে ৬২৫ হয়ে গেছে। ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকার ফলে সকাল থেকে আকাশে ও রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম শুরু হয়। পাশ্ববর্তী নয়ডাতেও মঙ্গলবার পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেজরিওয়াল টুইট করে লেখেন, ‘উত্তর ভারত জুড়ে বায়ু দূষণের মাত্রা অসহনীয় হয়ে দাড়িয়েছে। দিল্লি প্রশাসনের তরফে দুষণের পরিমান নিয়ন্ত্রণ করতে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বাসিন্দাদের ভুগতে হচ্ছে, অথচ তাদের কোনও দোষ নেই। পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শীঘ্রই কেন্দ্রের প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত– আমরা কেন্দ্রের সমস্ত উদ্যোগকে সমর্থন করব’। তিনি বলেন, শহরের ক্রমবর্ধমান বায়ু দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হলেও কোনও সুরাহা করা সম্ভব হচ্ছে না।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পরিষদের তরফে জানানাে হয়, বায়ু দূষণের মাত্রা এমার্জেন্সি ক্যাটাগরিতে প্রবেশ করেছে- সেক্ষেত্রে জরুরি ভিত্তিতে জোড়-বিজোড় স্কিম চালু করে দেওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে ট্রাক ঢুকতে দেওয়া হবে না, নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে। স্কুলও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হবে। শহরের প্রাতঃভ্রমণকারীদের দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না- বেশিরভাগ সহ বাসিন্দা ঘরের মধ্যে থাকতে পছন্দ করছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং ও হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী খাট্টরের কঠোর সমালােচনা করে মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল বলেন, ‘পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলােয় ফসল পুড়িয়ে দেওয়ার কারণে উৎপন্ন হওয়া গ্যাস দিল্লি শহরকে গ্রাস করছে। ধীরে ধীরে শহর একটা গ্যাস চেম্বারে পরিণত হচ্ছে। দুষিত বায়ু থেকে শহর ও শহরবাসীকে রক্ষা করার প্রয়ােজন রয়েছে। প্রশাসনের তরফে সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের জন্য ৫০ লাখ মাস্ক বিলি করা হয়েছে। আমি দিল্লিবাসীদেরকেও মাস্ক ব্যবহার করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি’।
পাঞ্জাব রিমােট সেন্সিং সেন্টার জানাচ্ছে, ‘রেকর্ড পরিমাণ খড় পােড়ানাে হয়েছে। পাশের রাজ্য হরিয়ানাতেও পরিস্থিতি এক রকমের। সেখানেও প্রচুর খড় পােড়ানাে হয়েছে। দুই রাজ্যের খড় পােড়ানাে গ্যাসে দিল্লি শহর গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে। দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা স্থানীয় কৃষকদের খড় পােড়াতে বাধ্য করছে। আগেও একাধিকবার অনুরােধ করা হয়েছে কোনও ফল হচ্ছে না’।
শহরের বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে থাকা ৩৭টি এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং স্টেশনের তরফে জানানাে হয়েছে, বায়ু দূষণের মাত্রা এমার্জেন্সি ক্যাটাগরিতে রয়েছে। শহরে বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের প্যানেলের তরফে দিল্লি ও এনসিআরে পাবলিক হেলথ এমার্জেন্সি ঘােষণা করা হয়েছে। তারপরই শহরে স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। ইপিসিএ প্রধান ভুরে লাল পাশ্ববর্তী রাজ্যগুলাের মুখ্য সচিবদের চিঠি লিখে পাবলিক হেলথ এমার্জেন্সি পালন করতে অনুরােধ করেন।