মঙ্গলবার আরজি কর মামলার শুনানিতে এবার সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। এই ব্যাপারে রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামা চেয়েছে শীর্ষ আদালত। আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের নাম। রাজ্যের কাছে এদিন সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন ছিল সিভিক ভলান্টিয়ারদের কারা নিয়োগ করে ? এদের নিয়োগের যোগ্যতা কী ? পরবর্তী শুনানিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে যাবতীয় তথ্য চাইলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্যকে হলফনামায় নিশ্চিত করতে হবে কোন স্কুল, হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা যাবে না। এমনকি কোনও থানা এবং তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্য সরকারকে।’ এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছে দেশের শীর্ষ আদালত। এর পাশাপাশি প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইন্টিগ্রেটেড হসপিটাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ১ নভেম্বরের মধ্যে শেষ করতে হবে। সব হাসপাতালে চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে।’ দীপাবলির পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
রাজ্যে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকারের কাছে হলফনামা তলব করল সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্যাতিতা চিকিৎসকের বাবা – মায়ের তরফে থাকা আইনজীবী। এরপরই আদালত রাজ্যকে হলফনামা পেশের নির্দেশ দেয়।
এদিন আদালতে নির্যাতিতার বাবা মায়ের আইনজীবী বলেন, অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই গার্হস্থ হিংসার অভিযোগ ছিল। তারপরেও কোনও কিছু খতিয়ে না দেখে তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী বলেন, অভিযুক্তের কাছ থেকে কলকাতা পুলিশের মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়েছে। আইনজীবী ফিরোজ এদুলজি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে গোটা থানা পরিচালনা করছেন সিভিক ভলান্টিয়াররা।
শোনার পর প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় রাজ্যের আইনজীবীকে প্রশ্ন করেন, কোন আইনে সিভিক ভলান্টিয়ারদের নিয়োগ করা হয়েছে। জবাবে তিনি বলেন, ২০১১ সালে জারি একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে। এরপর আইনজীবী ফিরদৌস শামিম জানান, সেই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা চলছে।
প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘সিভিক ভলান্টিয়ারদের কে নিয়োগ করে? কী ভাবে নিয়োগ হয় তাঁদের? এখন রাজ্যে কত জন সিভিক ভলান্টিয়ার আছেন?’ রাজ্য জানায়, সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হয়।পরের শুনানিতে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে যাবতীয় তথ্য চাইলেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে বিস্তারিত জানাতে হবে কী ভাবে সিভিক ভলান্টিয়ারের নিয়োগ হয় ? নিয়োগের শিক্ষাগত যোগ্যতা কী ? নিয়োগের আগে কী ভাবে তাঁদের দেওয়া তথ্য যাচাই করা হয় ? কোন কোন প্রতিষ্ঠানে সিভিক ভলান্টিয়ার দায়িত্বে আছে, সিভিক ভলান্টিয়ারকে কী ভাবে বেতন দেওয়া হয় ? তার জন্য কত বাজেট বরাদ্দ করা হয় ?’
মঙ্গলবারের শুনানিতে প্রশ্ন ওঠে রাজ্য সরকারের ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হচ্ছে। কেন সিভিক ভলান্টিয়ারকে নিয়োগ করা হবে? রাজ্য জানায়, কেন্দ্রীয় আইনের বলেই ‘রাত্তিরের সাথী’ প্রকল্পে নিয়োগ হচ্ছে ।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্যকে হলফনামায় নিশ্চিত করতে হবে কোন স্কুল, হাসপাতালে সিভিক ভলান্টিয়ার রাখা যাবে না। এমনকি, কোনও থানা এবং তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কোথাও সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা যাবে না।’ প্রধান বিচারপতি রাজ্য সরকারকে সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়ে তথ্য চেয়ে হলফনামা জমা দিতে নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি, এদিন শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জানতে চান, জুনিয়র চিকিৎসকেরা কি কাজে ফিরেছেন ? জবাবে জুনিয়র চিকিৎসকদের আইনজীবী জানান, সকলেই কাজে ফিরেছেন। রাজ্যের আইনজীবী বলেন, ‘সাত জন যাঁরা অনশন করছেন, তাঁরা বাদে সকলেই কাজে ফিরেছেন।’
এদিন শুনানির শুরুতেই সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সিবিআইয়ের তরফে সর্বশেষ স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি জেবি পারদিওয়াল এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রর বেঞ্চে। মেহতা আদালতে জানান, এই ধর্ষণ ও খুনের মামলায় গত ৭ অক্টোবর চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই।
আরজি কর কাণ্ড মামলায় প্রথম চার্জশিট শিয়ালদহ আদালতে জমা দিয়েছিল সিবিআই। আর জি কর কাণ্ডের ষষ্ঠ শুনানিতে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, জাতীয় টাস্ক ফোর্স যে গঠিত হয়েছিল, তার কাজের বিশেষ কোনও অগ্রগতি হয়নি। প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় সিবিআইয়ের তরফে হাজির সলিসিটর জেনারেলের কাছে জানতে চান, জাতীয় টাস্ক ফোর্সের অবস্থী কী? তাদের কাজের গতিপ্রকৃতি কী? প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা দেখতে চাই টাস্কফোর্স কী কাজ করেছে? সলিসিটর জেনারেল জানান, তারা এ ব্যাপারে হলফনামা জমা দিয়েছেন। তা পড়ে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন, ‘৯ সেপ্টেম্বর শেষ বার টাস্ক ফোর্স বৈঠক করেছিল। তার পর আর কোনও বৈঠক করেনি ?’ তুষার জানান, তার পর কোনও বৈঠক হয়নি। এক মাসের বেশি সময় কেন কোনও বৈঠক হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন প্রধান বিচারপতি।
সিবিআইয়ের তরফে আদালতে জানানো হয় যে, ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সঞ্জয় রায় ছাড়া আর কার কার ভূমিকা আছে তা নিয়ে আরও তদন্তের প্রয়োজন। এছাড়াও আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আমলে যে আর্থিক অনিয়ম হয়েছিল, তা নিয়েও তদন্ত চলছে। এদিন সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, আরজি কর মামলায় তদন্ত করছে সিবিআই। তাই সেই মেডিক্যাল কলেজে কাজ করতে গেলে সিবিআইয়ের অনুমতি প্রয়োজন। সেই অনুমতি পাওয়ার পরই কাজ শুরু করা হয়। ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যাবে।
আদালতের পূর্বতন নির্দেশ অনুযায়ী আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার আদালতে জানান, ইলেকট্রনিক অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি একটি নোডাল অফিসার নিয়োগ করেছে। যে নোডাল অফিসার নির্যাতিতার পরিচয় প্রকাশ সহ তাঁকে নিয়ে অনলাইনে যেসব প্রচার চলছে সে সম্পর্কিত বিষয়গুলি দেখবে।
এছাড়াও মেডিক্যাল কলেজগুলিতে কত কাজ হয়েছে তার খতিয়ান সুপ্রিম কোর্টের কাছে জানিয়েছে রাজ্য সরকার। মেডিক্যাল কলেজগুলিতে সিসিটিভি বসানো, শৌচালয়, বিশ্রাম কক্ষ নির্মাণের কাজ কত দূর এগিয়েছে সে সম্পর্কে তথ্য জমা দিয়েছে রাজ্য সরকার। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, এই কাজের জন্য হাজার কোটির বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কাজ এগিয়ে গেছে। বাকি কাজ ২৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। আর আরজি করের কাজ শেষ হবে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে। ইতিমধ্যেই হাসপাতালগুলোর নিরাপত্তার বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যদিও তা মানতে চাননি চিকিৎসকদের আইনজীবীরা।