আর জি কর কাণ্ডে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে এবং আরও ১০ দফা দাবিকে সামনে রেখে ধর্মতলায় গত শনিবার থেকে পাঁচদিন ব্যাপী আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন ছয়জন জুনিয়র চিকিৎসক। তাঁদের সমর্থন জানিয়ে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন সিনিয়র চিকিৎসকরাও। তাঁরাও কখনও ১২ ঘণ্টা তো কখনও ২৪ ঘন্টা অনশনে যোগ দিচ্ছেন। আর এবার জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়ালো কলকাতার মুকুন্দপুর এলাকার একটি হাসপাতালের চিকিৎসক সংগঠন। বৃহস্পতিবার থেকে সোমবার পর্যন্ত পাঁচ দিনব্যাপী আংশিক কর্মবিরতের ডাক দিলেন সেই হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফা যে দাবি রয়েছে, সেই দাবি যদি সরকার সোমবারের মধ্যে পূরণ না করে, তাহলে সোমবার থেকে তাঁরা পুণ্য কর্ম বিরতির পথে হাঁটতে বাধ্য হবেন।
উল্লেখ্য, শনিবার থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের ছয় প্রতিনিধির একটি দল ধর্মতলায় বসেছেন অনশনে। প্রথম দিন থেকে তাঁরা ১০ দফার দাবি জানিয়ে অনশনে সামিল হয়েছেন। সেই দাবি যতদিন না পূরণ হবে, ততদিন তাঁরা আমরণ অনশনে অনড় থাকবেন বলে জানান। তারপরই সরব হন সিনিয়র চিকিৎসকরা। আরজি করের সিনিয়র চিকিৎসকরা সরকারের কাছে দাবি তোলেন, আমরণ অনশনে জুনিয়র চিকিৎসকরা বসার পরও কেন সরকার তাঁদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন না? কেন তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে না? এই অভিযোগ তুলে অনশনের তৃতীয় দিন, অর্থাৎ সোমবার সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন আরজি করের সিনিয়র চিকিৎসকরা। বেঁধে দেন ২৪ ঘন্টার সময়সীমা। সেই সময়সীমার মধ্যে যদি সরকার কোনও পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে সিনিয়র চিকিৎসকদের একটি দল গণ ইস্তফার পথে হাঁটবেন বলে সাফ জানিয়ে দেন।
এই ঘোষণার পর ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যায়, তবুও সরকার কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ায় আরজি করের সিনিয়র চিকিৎসকরা ‘গণ ইস্তফা’ দেন। তারপরই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে আবারও সরকারকে ২৪ ঘন্টা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। সেই সময়সীমার মধ্যে সরকারের কাছে দাবি করা হয়, তাঁরা যেন জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসেন। কিন্তু তাঁদের দাবি পূরণ না
হওয়ায় গতকাল, আর জি করের সিনিয়র চিকিৎসকদের পথ অবলম্বন করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরা দেন ‘গণ ইস্তফা ‘। একই পথে হাঁটতে দেখা যায় উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকদের।
গতকাল বিকেলবেলায় ‘ গণ ইস্তফা ‘ দেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরাও। এমনকি তারপরেই গণ ইস্তফার হুঁশিয়ারি দেন এন আর এস এবং সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা। এরপর মহা ষষ্ঠীর দিন রাতেই মুখ্যসচিবের পক্ষ থেকে জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে একটি মেল যায়। সেখানে মুখ্য সচিব জুনিয়র চিকিৎসকদের ৭ থেকে ১০ জনের একটি দলকে স্বাস্থ্য ভবনে বৈঠকের জন্য আহ্বান জানান। জুনিয়র চিকিৎসকরা সেখানে ১২ জনের একটি দল নিয়ে উপস্থিত হন। যার মধ্যে ছিলেন ৬ অনশনরত চিকিৎসকও। তবে বৈঠক ফলপ্রসূত না হওয়ায়, বাইরে এসে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যতদিন না পর্যন্ত ১০ দফা দাবি মানা হচ্ছে, ততদিন তাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।
মনে করা হচ্ছে, সিনিয়র চিকিৎসকদের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে গণ ইস্তফায় প্রভাব ফেলতে পারে রাজ্যের চিকিৎসা পরিকাঠামোয়। যার জেরে তড়িঘড়ি গতকাল রাতেই মুখ্যসচিব মনোজ পান্থের পক্ষ থেকে বৈঠকের ডাক দেওয়া হয়। কিন্তু সেই বৈঠক ফলপ্রসূত না হওয়ায় এবার অনশনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়াতে পাঁচ দিনব্যাপী আংশিক কর্মবিরতির ডাক দিলেন মুকুন্দপুর এলাকার একটি হাসপাতালের চিকিৎসকরা।