জুনিয়র চিকিৎসকদের পাশে দাঁড়িয়ে ‘গণইস্তফা’র পথে হাঁটলেন বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের পর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরা ‘গণইস্তফা’ দিলেন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে ‘গণইস্তফা’ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন সিনিয়ররা। অপরদিকে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়রদের তরফেও সরকারকে গণইস্তফার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নাম। বুধবার এনআরএস ও সাগর দত্ত মেডিক্যালের সিনিয়র চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পদক্ষেপ না করলে গণইস্তফা দেওয়া হবে। উল্লেখ্য, জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
মঙ্গলবার আরজি কর হাসপাতালের ৫০ জন সিনিয়র ডাক্তার ‘গণইস্তফা’ দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই ছড়িয়ে পড়ে এর আঁচ। মঙ্গলবারই গণইস্তফার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন কলকাতা মেডিক্যালের সিনিয়ররাও। বুধবার সেখানকার ৭৫ জন সিনিয়র ডাক্তার গণইস্তফা দিয়েছেন। একই পথে হেঁটেছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সিনিয়ররাও। এদিন এই হাসপাতালের ৩৫ জন ইস্তফাপত্রে সই করেছেন। পাশাপাশি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের প্রায় ৫০ জন সিনিয়র ডাক্তার ‘গণইস্তফা’ দিয়েছেন। ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে এই তালিকা।
বুধবার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়ররা একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে এতদিন পর্যন্ত পরিশ্রম করে রোগীদের পরিষেবা দিয়েছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই কাজ ক্রমশ কঠিন হয়ে পড়ছে। আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের সমস্ত দাবিকে আমরা সমর্থন করি। ওদের দাবি পূরণের জন্য আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি। অনশনকারীদের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। যত দিন যাচ্ছে তাঁদের শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। আমরা চাই ওঁদের স্বাস্থ্যের বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে দ্রুত দাবিগুলো মেনে নিক সরকার।’
এরই মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে ইস্তফা দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আরজি কর, কলকাতা ও উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র ডাক্তাররা। তাঁরা জানিয়েছেন, জুনিয়রদের দাবিপূরণে রাজ্য সদর্থক ভূমিকা না নিলে তাঁরা একে একে ব্যক্তিগতভাবে ইস্তফা দেবেন । এই সব সিনিয়র চিকিৎসকদের বক্তব্য, অনশনরত জুনিয়র ডাক্তারদের শারীরিক অবস্থার আর বিন্দুমাত্র অবনতি হলে একে একে ব্যক্তিগত ইস্তফার পথে হাঁটবেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, রাজ্য সরকারকে দ্রুত ইতিবাচক পদক্ষেপ করতে হবে। এত সিনিয়র ডাক্তার একসঙ্গে ইস্তফা দিলে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের আন্দোলনের সমর্থনে অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। ১৪ অক্টোবর সোমবার থেকে তাঁরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই দিন থেকে জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কোনও পরিষেবা তাঁরা দেবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। তাঁদের হুঁশিয়ারি, সরকারের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে তাঁরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না।
মঙ্গলবার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ৫০ জন সিনিয়র চিকিৎসক ‘গণইস্তফা’ দিয়েছিলেন। তবে তাঁদের ইস্তফা গৃহীত হয়নি হবে জানা গিয়েছে। বাকিদের ইস্তফাও গৃহীত হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। সরকারি একটি সূত্রের দাবি, গণইস্তফা নিয়ম মেনে হয়নি। তাই এবার ব্যক্তিগতভাবে নিয়ম মেনে ইস্তফা দিতে চলেছেন ৩ মেডিক্যাল কলেজের সিনিয়র চিকিৎসকরা।