‘নো সিএএ, নো এনআরসি’- এই অবস্থানে অনড় রাজ্যের শাসকদল। তৃণমূলের বক্তব্য, দেশের জনগণের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলাই উচিৎ নয় যদি সংশ্লিষ্ট নাগরিকের আধার ও ভোটার কার্ড সহ সকল নথি উপলব্ধ থাকে। এই প্রসঙ্গে এনআরসি-র বিরোধিতা করে সর্বদাই অসমের চিত্রকে সামনে রেখেছে তৃণমূল, যেখানে লক্ষাধিক মানুষ সিএএ-এনআরসির জালে পা দিয়ে গৃহহীন হয়েছেন। তৃণমূলের দাবি, এনআরসি-র তাসে ভর করেই বিজেপি নির্বাচন বৈতরণী পার করতে মরিয়া। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে বাংলার ক্ষেত্রেও সিএএ-এনআরসিকে তুরুপের তাস হিসাবেই কাজে লাগাতে চেয়েছিল বিজেপি। যদিও তাতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি।
এবার ঝাড়খন্ডের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ফের এনআরসি-তত্ত্ব অনুরণিত হলো কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের কণ্ঠে। সোমবার শিবরাজ সিং চৌহান বলেন, ‘ঝাড়খন্ডের আসন্ন বিধানসভা ভোটে জিতে ক্ষমতায় এলেই এ রাজ্যে প্রয়োগ করা হবে এনআরসি৷’ কেন তিনি এমন দাবি করছেন, তার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘ঝাড়খন্ডের অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়িত করে খাদ্য, মাটি এবং নারীর সুরক্ষা প্রদানের জন্যই প্রয়োগ করা হবে এনআরসি৷’ এরপরই সরব হয়েছে তৃণমূল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া এই যুক্তির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুস্মিতা দেব। তাঁর প্রশ্ন, ‘অসমে এনআরসি প্রক্রিয়ার নাম করে কী করা হয়েছে?’ সুস্মিতার আরও সংযোজন, ‘এখনও এনআরসি বাস্তবায়নের গোটা প্রক্রিয়া শেষ করা হয়নি, ওদিকে ১৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে ৷ শুধু হাওয়ায় হাওয়ায় প্রতিশ্রুতি দেয় বিজেপি ৷ অসমের পরে এবার ঝাড়খন্ডের জনতাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে বিজেপি৷’
সুস্মিতার এই বক্তব্যের পর্যালোচনার জন্য ইতিহাস ঘেঁটে দেখা প্রয়োজন। সালটা ২০১৮-২০১৯, অসমে চূড়ান্ত জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি-তে বাদ পড়েছিল প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষ। সারা অসম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের দাবি ছিল, এর মধ্যে বাঙালি হিন্দুর সংখ্যা ১০ থেকে ১২ লক্ষ। বাঙালি মুসলিম বাদ পড়েছিলেন দেড় থেকে দু’লক্ষ। আপাতভাবে বাদ পড়াদের তালিকায় মূলত সংখ্যালঘুদের নাম থাকার কথা ছিল, কিন্তু বাস্তবে হয়েছিল ঠিক তার উল্টো। যাঁরা বাদ পড়েছিলেন, তাঁদের অর্ধেকের বেশিই ছিলেন হিন্দু, গোর্খা এবং স্থানীয় আদিবাসী সমাজের লোক। এই ১২ লক্ষ হিন্দুর ঠাঁই হয়েছিল ডিটেনশন ক্যাম্পে। এই পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি চায় না তৃণমূল। সে কারণেই লোকসভা ভোটের নির্বাচনী প্রচার থেকে অসংখ্য বার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় গর্জে উঠে বলেছিলেন, ‘প্রাণ থাকতে এ রাজ্যে সিএএ-এনআরসি হতে দেবো না।’
একই পথে হেঁটে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ও বিজেপিকে প্রকাশ্য হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘নোটিফিকেশন করে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তর যদি বলে ভারতবর্ষে আমরা সিএএ-র পর এনআরসি করব না তাহলে আমি সিএএ সমর্থন করবো।’ কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি বিজেপি। প্রসঙ্গত, এর আগে বাংলার বিধানসভা ভোটের আগেও বিজেপি দাবি করেছিল, বাংলায় তাঁরা ক্ষমতায় এলেই প্রয়োগ করা হবে এনআরসি৷ বাংলায় বিধানসভা ভোটে বিজেপি পর্যুদস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের দাবির জলাঞ্জলি হয়েছে। এবার সেই ধাঁচেই ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার হাতে থাকা রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে ফের এনআরসি প্রয়োগের ঘোষণার মাধ্যমে ভোটব্যাঙ্ককে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি, এমনই অভিযোগ তুলে বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হলো তৃণমূল।