• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

নাবালিকার দেহ গ্রামে পৌঁছতেই ক্ষোভে ফুঁসে উঠল গোটা গ্রাম, ভাঙল পুলিশের গাড়ি

ঘটনাস্থলে বারুইপুর পুলিশ জেলার এসডিপিওর গাড়ি ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভের জেরে গাড়ি ঘুরিয়ে এলাকা ছাড়তে হয় এসডিপিওকে।

৯ বছরের নাবালিকাকে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। আদালতের নির্দেশে কাল্যাণী এইমসে হয় ময়নাতদন্ত। ময়নাতদন্তের পর সোমবার রাতে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় নাবালিকার নিথর দেহ। নাবালিকার দেহ নিয়ে পুলিশ গ্রামে ঢুকতেই রাতেই দোষীর ফাঁসির দাবিতে গর্জে ওঠে গোটা গ্রাম। সোমবার রাতের পর মঙ্গলবার সকালেও চলে বিক্ষোভ। নির্যাতিতার দেহ নিয়ে সকালে গ্রামবাসীরা মিছিল করেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আসলে পুলিশের গাড়ি ঘিরে চলে বিক্ষোভ, পুলিশের গাড়ি করা হয় ভাঙচুর। এমনকি ঘটনাস্থলে বারুইপুর পুলিশ জেলার এসডিপিওর গাড়ি ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভের জেরে গাড়ি ঘুরিয়ে এলাকা ছাড়তে হয় এসডিপিওকে।
ঠিক কী হয়েছিল?
স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার দুপুরে টিউশন পড়তে গিয়েছিল চতুর্থ শ্রেণির ওই ছাত্রী। পড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পর বাড়িতে ফোন করেও তা জানায় নাবালিকা। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেলেও বাড়ি ফেরে না ঘরের মেয়ে। পরিবারের তরফে শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। পরে শুক্রবার গভীর রাতে একটি জলাভূমি থেকে উদ্ধার হয় নাবালিকার দেহ।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, নিখোঁজ থাকাকালীনই ছাত্রীর খোঁজে পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দায়ের করতে যান বাবা-মা। কিন্তু পুলিশ কোনও তৎপরতা দেখায়নি বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যান বাবা-মা। পরে গভীর রাতে বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দূরে নাবালিকার দেহ উদ্ধার হয়। এর পর পুলিশ দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, পুলিশ আরও আগে তৎপর হলে হয়তো ওই নাবালিকাকে খুন হতে হত না।
তবে পরে পুলিশ তদন্তে নেমে সিসিটিভির ফুটেজের সূত্র ধরে নাবালিকাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় ৯ বছরের নাবালিকাকে সাইকেলে চাপিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিবেশী যুবক মোস্তাকিন। আর তার বিরুদ্ধেই ওঠে নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ। যার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই প্রতিবেশী যুবক মোস্তাকিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মোস্তাকিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ৯ বছরের নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়। এমনকি ময়নাতদন্তের রিপোর্টেও তা স্পষ্ট দাবি করা হয়। ঘটনাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকেই কার্যত ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় জয়নগরে। জয়নগর থানার মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালায় উত্তেজিত জনতা। লাঠি, ঝাঁটা হাতে পুলিশকর্মীদের তাড়া করেন গ্রামবাসীরা। প্রাণভয়ে এলাকা ছেড়ে পালায় পুলিশ। পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর চালানোর পাশাপাশি আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামানো হয় র‍্যাফ। ছোঁড়া হয় কাঁদানে গ্যাসের সেলও।

ময়নাতদন্তের পর নাবালিকার দেহ গ্রামে নিয়ে যাওয়া হলে পরিস্থিতি যে আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে সেই আন্দাজ আগেই করেছিল পুলিশ। তাই আগে থেকেই পুলিশের তরফে কড়া নিরাপত্তায় দেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামে। রাতেই গ্রামবাসীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিশ। ধর্ষকের ফাঁসির দাবি চেয়ে গর্জে ওঠেন গ্রামবাসীরা। সোমবার রাতের পর মঙ্গলবার সকালেও অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে কুলতলি। রাতেই দেহ গ্রামে আসার পর ওঠে ধর্ষকের ফাঁসির দাবি এবং সকালে নির্যাতিতার দেহ নিয়ে  কৃপাখালি এলাকা থেকে মহিষমারি পুলিশ ফাঁড়ি পর্যন্ত করা হয় মিছিল। বেশ কিছুক্ষণ রাস্তা অবরোধও করা হয়। আর তখনই গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে পড়ে পুলিশ। এসডিপিওকে ঘিরেও চলে বিক্ষোভ।

অন্যদিকে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। নির্যাতিতার বয়েস ১০ বছরের নীচে হওয়া সত্ত্বেও কেন পকসো আইনে মামলা দায়ের করা হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি। ইতিমধ্যেই আদালতের নির্দেশে পকসো আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে বলে খবর।