• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

কালীঘাটে ‘মানতপুরী’, সাড়ে পাঁচ হাজার বাল্বের ব্যবহার মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার পুজোয় 

তাৎপর্যপূর্ণ হল, নানা মাপের বিশেষ ধরনের সাড়ে ছয় হাজার বাঁশ সেই বালুরঘাট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। নদিয়া, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর থেকে পুজোর নানা উপকরণ সংগ্রহ করে ৬৫ ফুট উঁচু এই বর্ণময় মণ্ডপ তৈরী করেছেন।

মণ্ডপে পদার্পন করলেই মনে হবে জগতের এক জাগ্রত মন্দিরে এসে পড়েছেন। যেখানে লক্ষাধিক ভক্ত মানত করে আসছেন বহু বছর ধরে। আর ভক্তের সেই মনোস্কামনা পূরণ করে চলেছেন জাগ্রত অধিষ্ঠাত্রী দেবী দশভূজা। মণ্ডপের গা বেয়ে ঝুলছে লক্ষাধিক ছোট ছোট পাথরের টুকরো, মিনি পিতলের ঘণ্টা, লাল বেনারসির টুকরো, সিঁদুর চুপড়ি, শাঁখা-পলা, মঙ্গলঘট, কুলোর মতো অজস্র পুজোর উপকরণ ইত্যাদি। সাড়ে পাঁচ হাজার বাল্বের আলো ঝলমল আকাশছোঁয়া এই মণ্ডপটি কোথায় হয়েছে জানেন? কালীঘাট মন্দির থেকে বেরিয়ে ঠিক উল্টো দিকে হরিশ চ‌্যাটার্জি স্ট্রিটে ঢুকে একটু এগোলেই ‘কালীঘাট মিলন সংঘ’। এই পুজো ক্লাবের এবছরের থিম ‘মানতপুরী’। কেবল মণ্ডপ নয়, মণ্ডপের প্রবেশপথের সজ্জাও নজরকাড়া।
প্রায় দেড়শো মিটার প্রবেশপথের দুপাশেও একইভাবে ভক্তের ভগবানের কাছে আর্তি জানিয়ে ‘মানত’ চিহ্ন ফুটে উঠেছে। প্রসঙ্গত, কালীঘাট মিলন সংঘ মানেই ট্রেন্ডিং থিমের চমক। আর হবে নাই বা কেন? এটি খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের পাড়ার পুজো বলে কথা। উত্তর বনাম দক্ষিণের দর্শকের ঢল কিংবা থিমের রেষারেষিতে নেই মিলন সংঘ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ার পুজো বরাবরই স্বতন্ত্র এবং সাবেকিয়ানায় ভরপুর। এমনকি, ইউনেস্কো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী কলকাতার দুর্গাপুজোর মধ্যে কালীঘাট মিলন সংঘ অন্যতম। চলতি বছরে ৮১ বর্ষে পদার্পন করলো এই ক্লাবের পুজো। মুখ্যমন্ত্রী ফিতা কেটে এবং প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে এই পুজোর উদ্বোধন করেছেন।
 ‘মানতপুরী’র ভাবনার পশ্চাতে যাঁদের নাম উল্লেখ না করলেই নয়, তাঁরা হলেন এই পুজো কমিটির সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ‌্যায়, সাধারণ সম্পাদক কার্তিক বন্দ্যোপাধ‌্যায়, যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত বন্দোপাধ্যায় এবং সত্যজিৎ দে। মণ্ডপ-সজ্জা প্রসঙ্গে কার্তিক জানিয়েছেন, ‘মণ্ডপে পা রাখলে মনে হবে এক পুরাতনী ঐতিহ্যে ঘেরা দেবী মহামায়ার জাগ্রত মন্দিরে এসেছেন। ভক্তরা মানত করছেন, ভক্তের মনোবাসনা পূরণ করে চলেছেন ভগবান। মণ্ডপের উচ্চতা ভক্তের আকাশচুম্বী আকাঙ্খাকে প্রতিফলিত করছে। মিলন সংঘের মানত, সকল অসামাজিক কাজ থেকে যাবতীয় অশুভ শক্তির বিনাশ হোক এবং শুভ শক্তির উদয় হোক। আপনারাও আসুন, আপনাদেরও মানত পূরণ করবেন দেবী।’
উৎসবের মরশুমে মুখ্যমন্ত্রী নিজ ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিবারই দুস্থদের নতুন বস্ত্র দান করে থাকেন। কলকাতার পুজোগুলির উদ্বোধন সেড়ে দুস্থদের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিচ্ছেন মমতা, এমন ছবি প্রায়ই ধরা পড়ে। ব্যতিক্রম হলো না মুখ্যমন্ত্রীর পাড়ার পুজো ক্লাব, মিলন সংঘ। তৃতীয়ায় পৌরমাতা কাজরী বন্দোপাধ্যায় এবং কার্তিক বন্দোপাধ্যায় মিলন সংঘের পুজোয় উপস্থিত থেকে অসংখ্য দরিদ্র মানুষের হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দেন। এবার মণ্ডপ সজ্জার খুঁটিনাটি বিবরণ দেওয়া যাক। উল্লেখ্য, মণ্ডপ নির্মাণশিল্পী রাজ নারায়ণ সাহা চৌধুরী বহু বছর ধরে উত্তরবঙ্গের হিলি, রায়গঞ্জ, ময়নাগুড়ির অনেক বিখ‌্যাত পুজোর মণ্ডপ গড়লেও এই প্রথম কলকাতার পা দিয়ে একেবারে মুখ‌্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাড়ায় শারদভাবনা ফুটিয়ে তুলেছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, নানা মাপের বিশেষ ধরনের সাড়ে ছয় হাজার বাঁশ সেই বালুরঘাট থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। নদিয়া, বর্ধমান, দুই মেদিনীপুর থেকে পুজোর নানা উপকরণ সংগ্রহ করে ৬৫ ফুট উঁচু এই বর্ণময় মণ্ডপ তৈরী করেছেন। প্রতিমা গড়ছেন কালীঘাট পটুয়াপাড়ার প্রখ‌্যাত শিল্পী দীপেন মণ্ডল। লৌকিক বিশ্বাস এবং ধর্মীয় আবেগে পরিপূর্ণ এই ‘মানতপুরী’ নিঃসন্দেহে কালীঘাটের শোভা বৃদ্ধি করেছে।