আদিবাসীদের জমি বেদখল করে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ তুলে গুয়াহাটির অদূরে কচুতল গ্রামে গুলি চালিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার মুসলিম মানুষকে উচ্ছেদ করেছে অসমের হিমন্ত বিশ্বশর্মা সরকার। আর ঘটনার রেশ মেটার আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ গৌতম আদানির হাতে বিপুল পরিমাণ জমি তুলে দিতে কয়েক হাজার আদিবাসী মানুষের হাতে উচ্ছেদের নোটিশ ধরিয়ে দিল অসমের বিজেপি সরকার।
অসমের খনিজ সম্পদে ভরপুর ডিমাহাসাও জেলার উমরাংশুতে ৫,৬২৫ একর জমি আদানির হাতে তুলে দিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এজন্য এই এলাকার নয়টি গ্রামের প্রায় চার হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষকে জমি ছাড়তে উচ্ছেদ নোটিশ ধরিয়ে দিয়েছে বিজেপি পরিচালিত উত্তর কাছাড় পার্বত্য স্বশাসিত পরিষদ। আচমকা উচ্ছেদের নোটিশ পেয়ে হতচকিত হয়ে পড়েন গ্রামের আদিবাসী মানুষজন।
অরণ্যের অধিকার আইনে জমির অধিকার পেয়েছেন আদিবাসীরা। উমরাংশুর মাটির নিচে চুন ও শিলাপাথরে ভরপুর। কয়েক মাস আগে আদানির লোকজন এসে এলাকা ঘুরে দেখে গিয়েছেন। আদানি এখানে সিমেন্ট কারখানা খুলতে আগ্রহী। তাই চুপিসারে আদানিদের হাতে জমি তুলে দেওয়ার কাজটা শেষ করতে চায় অসমের বিজেপি সরকার। এতে আদানিকে খুশি করার পাশাপাশি মোদী-শাহকেও সন্তুষ্ট করতে আগ্রহী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
আদিবাসীদের উচ্ছেদ করে আদানিদের হাতে জমি তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ জানাতে স্থানীয় মানুষজন ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। বিক্ষোভ দেখিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, ‘এই জমি উপজাতিদের জন্য সংরক্ষিত। আমরা বহু পুরুষ ধরে এখানে বসবাস করছি। কিন্তু এখন আদানির জন্য আমাদের ভিটেমাটি ছাড়া করতে চাইছে বিজেপি সরকার। তা কোনও অবস্থায় মেনে নেওয়া যায় না। গ্রামের কিছু মানুষকে প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামছাড়া করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে স্থানীয় বিজেপি নেতারা। ভয় দেখানো চলছে। পাশাপাশি, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ কী দেওয়া হবে, কোথায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে, স্পষ্ট করে তা বলা হচ্ছে না। তবে কোনওভাবেই আমরা জমি ছাড়ছি না।’
উপজাতিদের সংরক্ষিত জমি বেদখল করার অভিযোগ তুলে গুয়াহাটি শহরের অদূরেই সোনাপুর সার্কেলের কচুতল গ্রামে উচ্ছেদ অভিযান চালায় হিমন্ত বিশ্বশর্মার পুলিশ। এতে দু’জন গ্রামবাসী নিহত এবং ৫০ জনের বেশি জখম হন। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আবারও ওই গ্রামে উচ্ছেদ চালায় পুলিশ। এরপরে গ্রামবাসীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন। শীর্ষ আদালত উচ্ছেদ অভিযানে স্থগিতাদেশ জারি করে অসম সরকারের কাছে জবাব তলব করেছে।
রাজ্যের বিরোধীদের অভিযোগ, সাম্প্রদায়িক রং চড়িয়ে রাজ্যের গরিব মানুষদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে বিজেপি-ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি আদানি, রামদেবের মতো মোদী-শাহর একান্ত আপনজনেদের হাতে হাজার হাজার হেক্টর জমি তুলে দিচ্ছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা। এতদিন মুসলিমদের উচ্ছেদ করেছেন। এখন আদানির স্বার্থে উপজাতিদের উচ্ছেদ করতে উদ্যত হয়েছেন। রাজ্যের কৃষিজমি ও বনভূমি আদানিদের হাতে তুলে দিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট করছেন।
আদানিদের রক্ষক নরেন্দ্র মোদীকে খুশি করতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও এখন এগিয়ে এসেছেন। দেশের সমুদ্র-বন্দর, বিমানবন্দর, খনিজ সম্পদ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা আদানিদের হাতে তুলে দেওয়ার পরে এবার আদিবাসীদের জমিও চলে যাচ্ছে আদানিদের মতো হাঙড়দের মুখে। অপদার্থ মোদী সরকারের এই দায় এখন বইতে হবে সারা দেশকে। এই সরকারের উৎখাতেই মিলবে সমস্যার সমাধান সূত্র।