মর্মান্তিক একটা মৃত্যু। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর গড়িয়ে রাত, রাত শেষে ফের নতুন একটা দিন। তারিখ বদলে গেলেও বাঁশদ্রোণীতে দেখা মিলল না ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অনিতা কর মজুমদারের। কাউন্সিলরের সঙ্গে সাক্ষাতের দাবিতে স্থানীয়রা লাগাতার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। দফায় দফায় রণক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বাঁশদ্রোণী। তারপরেও গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন কাউন্সিলর। কোথায় তিনি? কেনই বা অন্তরালে রয়েছেন অনিতা কর মজুমদার? উঠছে প্রশ্ন।
মহালয়ার সকালে এক ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে বাঁশদ্রোণীতে। বাড়ির সামনেই যে মৃত্যু অপেক্ষা করছিল তা ধারণাতীত ছিল নবম শ্রেণির ছাত্রটির। কলকাতা পুরসভার ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ওই এলাকার রাস্তায় বেশ কয়েকদিন ধরেই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছিল। অভিযোগ, কোচিং সেন্টারে যাওয়ার সময়ই ওই ছাত্রকে ধাক্কা মারে জেসিবি। পিষে দেয় গাছের সঙ্গে। মাথায় গুরুতর আঘাত নিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও শেষরক্ষা হয়নি।
ছাত্রের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে বাঁশদ্রোণী। মৃত্যুর দায় কে নেবে? প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভে সামিল হন স্থানীয়রা। কাউন্সিলরের সঙ্গে দেখা করার দাবিতে সুর চড়ান তাঁরা। কিন্তু বুধবার দিনভর কাউন্সিলরের দেখা না পেয়ে বাড়তে থাকে স্থানীয়দের ক্ষোভ। মাঝে শোনা যায়, থানায় আশ্রয় নিয়েছেন কাউন্সিলর। ফলে পুলিশকে দেখেও ক্ষোভে ফেটে পড়ে আমজনতা। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে তাদের ঘিরেও চলে বিক্ষোভ। পাটুলি থানার ওসিকেও ছেড়ে দেয়নি উত্তেজিত জনতা। ওসিকে কাদা জলে নামিয়ে চলে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ। পরে বিক্ষোভের মুখ থেকে ওসিকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
ছাত্র-মৃত্যুর ঘটনার পর বুধবার দিনভর ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে উত্তেজনা থাকলেও বৃহস্পতিবার ধীরে ধীরে পরিস্থিতি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়েছে। বেড়েছে মোতায়েন পুলিশের সংখ্যা। দফায় দফায় চলছে টহলদারি। থানা থেকেও এলাকার উপর নজর রাখা হয়েছে। নতুন করে উত্তেজনা দেখা যায়নি ঠিকই, কিন্তু স্থানীয়দের মনে চাপা ক্ষোভ এখনও রয়ে গিয়েছে। কারণ ঘটনার পর থেকে কাউন্সিলরের দেখা মেলেনি। জানা গিয়েছে, বার বার তাঁকে ফোনে চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি। যদিও এলাকার পরিস্থিতির উপর তিনি নজর রাখছেন বলেই জানিয়েছে কাউন্সিলরের দফতর। তবে এখনই তিনি সাধারণ মানুষের সামনে আসতে চাইছেন না বলে খবর।
এদিকে বৃহস্পতিবার অনিতা কর মজুমদারের জন্মদিন। একইদিন জন্মদিন টালিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসেরও। অরূপের বিধানসভা কেন্দ্রেই ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। একদিকে যখন অনিতার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না, তেমনই বাঁশদ্রোণিতে দেখা যায়নি অরূপ চক্রবর্তীকেও। কোথায় তিনি? কোথায়ই বা অনিতা? রাইফেল ক্লাব রোডের বাড়ি ফাঁকা। বাড়ির ভিরতে কাউন্সিলরের অফিসেও ঝুলছে তালা। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গেও সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ রেখেছেন তিনি। আর এই ‘অন্তর্ধান’ ক্রমশই স্থানীয়দের কাছে ভিলেন বানিয়ে দিচ্ছে কাউন্সিলর অনিত কর মজুমদারকে।
অন্যদিকে বাঁশদ্রোণীর ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই দলের তরফে বার্তা পৌঁছেছে। নতুন করে উত্তেজনা তৈরি হয় এমন কাজ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে কি কাউন্সিলর আগাম আঁচ পেয়েছেন যে ঘটনাস্থলে গেলেই জনতার রোষের মুখে পড়তে হবে পারে তাঁকে? সেই কারণেই কি এখনও অন্তরালে থেকে পুরো পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছেন তিনি? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে অন্য কোনও কারণ? প্রশ্ন তুলছে রাজনৈতিকমহলের একাংশ।