পিতৃপক্ষের অন্তিম দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের হাত ধরে বঙ্গের বুকে হল ‘শারদোৎসবের সূচনা’। পিতৃপক্ষেই ‘পুজোর উদ্বোধন’ নয়, স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরেই রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর পুজো শ্রীভূমি স্পোটিং ক্লাবের পুজো প্রাঙ্গনে দাঁড়িয়ে ‘উৎসব উৎসারিত’-এর মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হল। তবে পুজোর উদ্বোধন কি মহালয়ার প্রাক্কালেই? এ প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্য, ‘আজ (মঙ্গলবার) পুজোর উদ্বোধন না হলেও মহালয়ার দিন হবে। তাই অনুষ্ঠানের নামকরণ হয়েছে উৎসব উৎসারিত। পিতৃপক্ষেই পুজোর উদ্বোধন নয়। আজ আমি এখানে আসলেও পুজোর উদ্বোধন করি না। মহালয়ার পর অর্থাৎ মাতৃপক্ষের সূচনার পর এ কাজ আমি করি। ধর্ম, শাস্ত্র আমিও কিছুটা জানি।’
কেন বঙ্গের দুর্গোৎসব বিশ্বের বুকে বিকশিত এবং প্রশংসিত? তাঁর ব্যাখ্যা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীভূমি থেকে বলেন, ‘কলকাতা শহরের পুজোগুলির থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানে জেলার পুজোগুলিও দুর্দান্ত হয়। এবছর আমরা ৪৮ থেকে ৫০ হাজার পুজো ক্লাবকে অনুদান দিয়েছি। এটা আমি অনুদান মনে করি না, ‘উৎসাহ দান’। পাশাপাশি ৭৫% বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়া হয় পুজো কমিটিগুলিকে, ফায়ার ব্রিগেড থেকে বিজ্ঞাপন কাউকেই অর্থ দিতে হয় না তাদের। তৃণমূল থেকে কর্পোরেশন কাউকেই টাকা দিতে হয় না। তাই বাংলার দুর্গাপুজো আজ বিশ্বে সমাদৃত।’
এদিন ফের মুখ্যমন্ত্রীর কণ্ঠে অনুরণিত হয়েছে ‘ম্যান-মেড বন্যা’র তত্ত্ব। পূর্বেই উত্তরকন্যার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘উৎসবের আবহে বন্যার্ত মানুষদের ভুললে চলবে না।’ মঙ্গলেও একই বার্তা মমতার। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ডিভিসি-র জলে দক্ষিণবঙ্গ ভেসেছিল এবার নেপালের ছাড়া কোশী নদীর জলে উত্তরবঙ্গে বন্যা হয়েছে। মালদার রতুয়া, হরিশ্চন্দ্রপুর, গাজোলের পরিস্থিতি ভয়াবহ। গাজোলে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ত্রাণ পাঠানো হলেও তৃণমূলের পক্ষ থেকে পৃথক ভাবে অতিরিক্ত শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করার বিষয়টিও জানিয়েছেন মমতা।
এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের সেবা করাটাই পরম ধর্ম, এটাই পুজো, এটাই উৎসব। মানুষের মুখে হাসি না থাকলে দেবীর মুখেও হাসি থাকে না।’ পাশাপাশি বন্যা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের তৎপরতা প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, ‘উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বন্যা বিদ্ধস্ত সব জায়গার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আমি বৈঠক করেছি, ত্রাণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এমনকি দলের নাম ব্যবহার করে নয়, আমাদের প্রতিনিধিরা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নামে ত্রাণের ব্যবস্থা করা থেকে সবরকম সাহায্য করেছে বন্যা-বিধ্বস্তদের।’
এরপরই ঘাটাল, মালদার ভূতনি, খানাকুল সহ কোন কোন বন্যা-বিদ্ধস্ত অঞ্চলে ত্রাণের বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তার স্বল্প খতিয়ান পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, মহালয়াকে কেন্দ্র করে দুর্যোগের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
জনসাধারণকে সাবধান-বাণী শুনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীভূমি থেকে বলেন, ‘মহালয়ার দিন ভরা কোটাল আছে। তার মাঝেই আবার সূর্যগ্রহণও রয়েছে। সুতরাং, গঙ্গার ধারে বসবাসকারীদের এই জোড়া প্রভাব থেকে সতর্ক থাকতে হবে।’
শ্রীভূমির পুজো মানেই উপছে পড়া ভিড়। ফি-বছরেও তৈরী হয়েছিল যানজট। এবারে যাতে পুনরায় ওই যানজটের পরিস্থিতি না হয়, সেদিকে উদ্যোক্তাদের বাড়তি নজরের পরামর্শ দেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘ট্র্যাফিকের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বিমানবন্দর যাওয়ার রাস্তা এটি। কোনো মানুষ যেন বিমান-ছুট না হন, সেদিকে সতর্কদৃষ্টি রাখতে হবে।’ পাশাপাশি উৎসবের মরশুমে এদিন দমকলমন্ত্রীকে পাশে নিয়ে বীরপাড়া এবং দুবরাজপুরে দুটি নয়া দমকল স্টেশনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ প্রসঙ্গে মমতার বক্তব্য, ‘বিশেষত শহরাঞ্চলে অনেক ঘিঞ্জি এলাকা রয়েছে, ঘন-ঘন জনবসতি। যেখানে ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। সেই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ফায়ার ব্রিগেডে মোটরসাইকেল এবং ই-সাইকেলের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।’
এদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, সুজিত বোস, ব্রাত্য বসু, সাংসদ সৌগত রায়, ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার, পার্থ ভৌমিক, বিধানসভার মুখ্যসচেতক নির্মল ঘোষ, বিধায়ক সুপ্তি পান্ডে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, সঙ্গীতশিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তী সহ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।