• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়, তবে  ‘ঠাণ্ডা’ বাজার ব্যবসায়ীরা

চলতি বছর যা অবস্থা তাতে সমাজের আর্থিক অবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।

শপিং মল (Representational Image: iStock)

ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিন ঢুকেছে দিন দশেক আগেই। হাতে গোনা কয়েকদিন বাদেই দুর্গোৎসব। আরজি কর আবহের ‘নিম্নচাপ’ সামান্য কাটতেই উৎসবের তোড়জোড় শুরু করেছেন পুজো উদ্যোক্তারা। কিন্তু তাতেও হাল ফেরেনি শহরের বাজারগুলির। তবে আগের থেকে ভিড় বাড়লেও মহালয়ার আগে বাজারের এই করুণ অবস্থা আগে কখনও দেখেননি বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। উত্তরে হাতিবাগান, দক্ষিণে গড়িয়াহাট কিংবা মধ্য কলকাতার ব্যস্ততম এলাকা নিউ মার্কেট সব বাজারের ছবিটা একই রকম। ব্যবসায়ীদের মতে, আগের থেকে বাজারে মানুষের আনাগোনা বাড়লেও সেই অর্থে বিক্রি নেই। কার্যত দেখাও গেল তাই। কোনও কোনও দোকানে দাঁড়িয়ে হাতেগোনা খদ্দের। কোথাও আবার হকারদের ‘হাফ দাম’ হাঁক শুনে ক্রেতারা ভিড় জমালেও আখেরে লাভ কিছু নেই বলেই জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। ঠিক একইভাবে নিউ মার্কেট চত্বরের এক ছোট ব্যবসায়ী মহম্মদ মাসুম বললেন, ‘গতকাল সারাদিনে মাত্র দুটো জামা বিক্রি করতে পেরেছি। বাজারের যা অবস্থা, তাতে মনে হচ্ছে এবার মহাজনের টাকা শোধ করতে কালঘাম ছুটে যাবে’।

শুক্রবার নিউ মার্কেটে বাজার করতে এসে মৌসুমী পাল নামে এক তরুণী বললেন, ‘মহালয়ার আগের মুহূর্তে প্রতিবার বাজার এলেও সেই অর্থে ভালো কিছু জোটে না। শুধু ঝাড়া বাছা কিছু পড়ে থাকে। কিন্তু এবার দেখছি কোনও কিছুই বিক্রি হয়নি’। ব্যবসায়ীদের কথায়, প্রতিবছর এই সময় বাজারে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। স্নান খাওয়া ভুলে যেতে হয়। কিন্তু এবার একদিকে আরজি করের ঘৃণ্য ঘটনা অন্যদিকে নিম্নচাপ, জোড়া ফলায় বাজারমুখী হচ্ছেন না বহু মানুষ। ঠিক একই অবস্থা শহরের নামী শপিংমল গুলিরও। সায়ন্তন চক্রবর্তী নামে শপিংমলের এক ম্যানেজার বলছেন, ‘আগের বছর যে পরিমাণে লাভ হয়েছিল, চলতি বছর তার থেকে প্রায় এক কোটি টাকার লোকসানে চলছে। এই ভাবে চলতে থাকলে কর্মচারীদের বেতন দেওয়াও দুষ্কর হয়ে উঠবে। তবে আগের রবিবার কিছুটা হলেও ভিড় হয়েছিল। এখন দেখা যাক হাতে তো দুটো রবিবার আছে’। অন্যদিকে যে জুতোর দোকানে ভিড় সামাল দিতে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয় পুলিশকর্মীদের, সেখানেও দেখা গেল একই ছবি। দোকানের মহিলা বিভাগে একটুআধটু ভিড় লক্ষ্য হলেও পুরুষদের বিভাগ কার্যত ‘গড়ের মাঠ’।

একই ছবি ধরা পড়ল গড়িয়াহাট এবং হাতিবাগান এলাকাতেও। ফাঁকা ফুটপাথ ধরে হাঁটা যাচ্ছে অনায়াসেই। নেই ক্রেতাদের ধাক্কাধাক্কি। দু-একজন ক্রেতা চোখে পড়লেও চেনা ভিড় যেন উধাও। তবে সেখানকার ব্যবসায়ীরা অবশ্য আরজি কর কাণ্ড এবং নিম্নচাপ বাদ রেখে এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন মানুষের আর্থিক অবস্থাকে। শম্ভু প্রামাণিক নামে এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘মাসের শেষ। এখন তো মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু ব্যয় বেড়েছে। তাই শেষ মাসে বেশিরভাগ মানুষের হাতেই টাকা নেই, হয়তো মাস পড়লে ছবিটা বদলাবে’।

অন্যদিকে, শহরের বড়বাজার এলাকা থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় জামা-কাপড় নিয়ে যান ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ছোট দোকানদারেরা। তবে এবার ধাক্কা খেয়েছে বড়বাজারের ব্যবসায়ীরাও। যার জন্য একদিকে আরজি কর, অন্যদিকে লাগাতার নিম্নচাপের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বন্যা পরিস্থিতিকেই দায়ী করছেন বড়বাজারের ব্যবসায়ীরা।

প্রসঙ্গত, পুজোর সময়ে ব্যবসায়ীদের যা আয় হয় তা থেকেই অনেকে সারা বছরের খরচ উঠে যায়। কিন্তু চলতি বছর যা অবস্থা তাতে সমাজের আর্থিক অবস্থা ভেঙে পড়তে পারে বলেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।