• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মমল্লাপুরমের বৈঠক

ভারত জেনেছে চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলােচনাকালে ইমরান কাশ্মীরের ওপর থেকে ৩৭০ ধারা বিলােপের তীব্র বিরােধিতা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চিনের রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং। (Photo: IANS)

চেন্নাইয়ের মমল্লাপুরমে মনােরম পরিবেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দু’দিনব্যাপী বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উন্নতি করার সিদ্ধান্ত স্বস্তি দিল ভারতকে। দুই নেতাই দু’দিনে মোট দু’ঘণ্টা নিজেদের মধ্যে কথা বলেছেন, তাতে নানা বিষয় উঠে এসেছে। দিল্লি বলছে, অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে দু’জন মত বিনিময় করেছেন। সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে, যা এখন পৃথিবীর প্রায় সব দেশেরই কমবেশি সমস্যা, দুই দেশই একে অপরের সহযােগিতা নিয়ে কাজ করবে। 

মন খুলে কথা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা এই আলােচনায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ একবারের জন্য ওঠেনি। বড় স্বস্তি ভারতের কাছে। কাশ্মীর ইস্যুটা চিনের প্রেসিডেন্টের মনে থাকলেও তিনি তা উল্লেখ করেননি। কিন্তু ভারতের এই স্বস্তি কতদিন থাকবে? কুটনৈতিক মহল কিন্তু সেই প্রশ্ন তুলেছে। চিনের প্রেসিডেন্ট ভারতে রওনা হওয়ার প্রাক্কালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বেজিংয়ে গিয়ে উপস্থিত হন। শি জিনপিং ও ইমরানের মধ্যে যে আলােচনা হয়েছিল, তাতে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের একতরফা মনোভাবের বিরুদ্ধে জোর সওয়াল করেন পাক প্রধানমন্ত্রী।

আলােচনা শেষে সাংবাদিকদের আলােচনার বিষয়বস্তু ও সিদ্ধান্ত নিয়ে যা বলা হয় তা হল, চিন কাশ্মীরে যা ঘটছে অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। আরও জানানাে হয়, চিন মনে করে দীর্ঘকালের কাশ্মীর সমস্যার সমাধান শান্তিপূর্ণ ভাবে রাষ্ট্রসংঘের ‘চার্টার’ অনুসারে হওয়া উচিত। 

পাক প্রধানমন্ত্রী ও চিনের প্রেসিডেন্টের যৌথ বিবৃতির ঘােরতর প্রতিবাদ জানায় দিল্লির সাউথ ব্লক। বলে, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। এই উপত্যকার বিষয়াদি একান্তভাবে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় অন্য কোনও রাষ্ট্রের এ বাপারে নাক গলানাে বাঞ্ছনীয় নয়। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের এক মুখপাত্র বলেন, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের কোনও পরিবর্তন হবে না। দুই নেতার আলােচনাকালে কাশ্মীর নিয়ে চিনের প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন, তা মানে না ভারত।

চিনের প্রেসিডেন্টের মনে কাশ্মীর থাকলেও তা নিয়ে তিনি কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। দেশে ফিরে গিয়ে কাশ্মীর নিয়ে আবার কিছু বলেন কিনা, তাই এখন দেখার। মমল্লাপুরের আলােচনায় মােদি বলেছেন, ‘আমরা। প্রতিজ্ঞা করেছি নিজেদের মধ্যে মতবিরােধ বাড়িয়ে তাকে গােটা বিশ্বের আলােচ্য করে তুলব না। চেন্নাই-কানেক্ট নতুন যুগের সূচনা করল’। প্রেসিডেন্ট শি বলেছেন, ‘আমরা বন্ধু হয়েই হৃদয় খুলে দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়ে আলােচনা করেছি’। 

বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ভারতের ঘাটতি কমাতে দুপক্ষই একমত হয়েছে। এ ব্যাপারে ভারতের অর্থমন্ত্রী এবং চিনের উপপ্রধানমন্ত্রী একটি কার্যকরী সিদ্ধান্তে আসবেন বলে ঠিক হয়েছে। এটাও ভারতের কাছে স্বস্তিদায়ক হল। সাউথ ব্লক সূত্রে জানা যায়, পাক প্রধানমন্ত্রীর চিন সফরের বিষয়ে চিনের প্রেসিডেন্ট শি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছেন। তিনি আলােচনার বিষয়বস্তু নিয়ে কোনও আলােকপাত করেননি। মােদি নীরবে তা শুনেছেন, কোনও মন্তব্য করেননি। 

ভারত জেনেছে চিনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলােচনাকালে ইমরান কাশ্মীরের ওপর থেকে ৩৭০ ধারা বিলােপের তীব্র বিরােধিতা করেছেন। বলেছেন, ভারত একতরফাভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা রাষ্ট্রসংঘের নীতিকে লঙঘন করেছে। 

উল্লেখ্য ৩৭০ ধারা বিলােপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত ও চিনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বাতিল হয়ে গিয়েছিল। তবে ভারতের বিদেশমন্ত্রক জানাচ্ছে, অতি শীঘ্রই আবার এই বৈঠক যাতে হয় তার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ঠিক হয়েছে সীমান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে দুইপক্ষের কাছে গ্রহণযােগ্য হয় এমন সমাধানসূত্র খুজতে হবে। 

একটি সুন্দর আবহে মমল্লাপুরমে দুই দেশের নেতারা ঘরােয়া বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। বৈঠকের আগে মােদি চিনের প্রেসিডেন্টকে এই অঞ্চলের অনুপম স্থাপত্যশিল্পের যে সমাহার হয়েছে তা ঘুরিয়ে দেখান এবং ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন।