• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

বিদ্যাসাগর ও নাস্তিকতা

এ বিষয়ে রামকৃষ্ণের উক্তিগুলো ‘শ্রীম’ কর্তৃক ঠিক যেভাবে ‘কথামৃত’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে ঠিক ওভাবেই বলা হয়েছিল কিনা, আজ আর সেটা যাচাই করার কোনও রাস্তা নেই।

রক্ষণশীল হিন্দু-সমাজের প্রবল বিরোধিতা ও কুৎসার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বৈধব্য-বহুবিবাহ-বাল্যবিবাহের মত ধর্মীয় কুপ্রথাগুলোর বিরুদ্ধে প্রবলভাবেই লড়ে যাওয়া, প্রাচীন ধর্মঘেঁষা শিক্ষা বাতিল করে ইংরেজি ভাষা এবং আধুনিক বিজ্ঞান ও দর্শন শিক্ষার পক্ষে জোরালো সওয়াল, হিন্দু দর্শনের প্রধান ধারাগুলোকে বাগাড়ম্বর ও ভুয়ো জ্ঞান বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করে দেওয়া, প্রাচীন ধ্যানধারণা ও অসার ধর্মতাত্ত্বিক কচকচির বাহক সংস্কৃত ভাষার প্রাধান্যের অবসান ঘটিয়ে বাংলা ভাষাকে আধুনিক সাহিত্য ও জ্ঞানচর্চার উপযোগী এক স্বাবলম্বী ভাষা হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ, প্রচুর অর্থ উপার্জন করেও তা মন্দির-নির্মাণ সাধন-ভজন বা ধর্মতত্ত্বচর্চার পেছনে ব্যয় না করে সরাসরি লোকসেবায় কাজে লাগানো, নিজের সম্পত্তির ‘উইল’-এ ধর্মকর্মের জন্য এক পয়সাও বরাদ্দ না করা। এত বড় মাপের মানুষটির ধর্মবিশ্বাস পূর্ণাঙ্গ ও পরিশ্রমসাধ্যভাবে পুনর্নির্মাণ করার কাজটিকে প্রায় কোনও গবেষকই প্রচেষ্টাযোগ্য বলে মনে করেননি। বিদ্যাসাগরকে ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদী বলে প্রতিপন্ন করে লেখালিখি যে খুব কম হয়েছে, এমনটা মোটেই বলতে চাইছি না, সেটা হয়ত দরকারের চেয়ে কিছু বেশিই হয়েছে। কিন্তু যেটা বলতে চাইছি সেটা হচ্ছে এই যে, তাঁর জীবন, উক্তি, আচরণ ও কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে প্রাপ্তব্য বিপুল পরিমাণ তথ্যভাণ্ডার থেকে ধর্ম বিষয়ে তাঁর অবস্থানটির কোনও পূর্ণাঙ্গ ও বিশ্বাসযোগ্য অবয়ব কখনও যুক্তি ও বিশ্লেষণের ছেনি-হাতুড়ি সহযোগে কুঁদে বার করে আনা হয়নি।

বিদ্যাসাগরকে নিয়ে যে সব প্রামাণ্য জীবনী ও স্মৃতিকথা পাওয়া যায়, সেখানে ধর্ম ও ঈশ্বরের প্রসঙ্গ যে বিরল, এবং যেখানে সেই বিরল ঘটনা ঘটেছে সেখানেও তাঁর মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অনুরাগ বা ভক্তি মোটেই প্রকাশ পায়নি, বরং প্রকাশ পেয়েছে প্রশ্ন-সংশয়-বিভ্রান্তি-ঔদাসীন্য-বিদ্রূপ-তাচ্ছিল্য-ক্ষোভ— এ কথা ওপরে বলেছি। এও বলেছি যে, সেগুলো সুবিদিত, অর্থাৎ বিদ্যাসাগরকে নিয়ে যাঁরা চর্চা করেন তাঁদের কাছে এ সব কথা খুবই পরিচিত। তবু তা সত্ত্বেও তার সামান্য কিছু উল্লেখ এখানে হয়ত বা জরুরি, যাঁরা বিদ্যাসাগরকে নিয়ে তত বেশি চর্চা করেননি তাঁদের জন্য শুধু নয়, সব পাঠকের জন্যই। কারণ, তা না হলে বোধহয় বর্তমান রচনাটির যথাযথ প্রেক্ষিত রচিত হবে না। শুরু হোক তবে, একটি দুটি করে।

বিদ্যাসাগরের ধর্ম-অনীহার ইঙ্গিত পাওয়া যায় তাঁর বাল্যকাল থেকেই। মেদিনীপুরের এক অজ গ্রামের রক্ষণশীল ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান হয়েও, এবং শিশুবয়েসে যথাবিহিত ‘পইতে’ হবার পরেও, তিনি ‘সন্ধ্যা-আহ্নিক’ করতেন না, এমন কি সন্ধ্যা-আহ্নিকের মন্ত্রও ভুলে গিয়েছিলেন। মাথায় রাখা দরকার, মন্ত্র ভুলে যাবার কথা যখন বলছি, তখন আমরা কিন্তু সেই শিশুটির কথা বলছি, যার নাকি রাস্তার পাশের মাইলস্টোনের ওপরে আঁকা দূরত্বসূচক চিহ্নের ওপর ধারাবাহিকভাবে নজর রাখতে রাখতে ইংরেজি সংখ্যা একা একা শিখে ফেলার মত সুতীব্র মেধা ও স্মৃতিশক্তি ছিল! অভিভাবকদের কাছে ধরা পড়ে প্রবল ভর্ৎসনা সয়েছেন, কিন্তু তাঁর আচরণের পরিবর্তন হয়নি। অভিভাবকরা অনেক চেষ্টা করেও তাঁকে ‘মন্ত্রদীক্ষা’ দিতে পারেননি। এই প্রবণতার ধারাবাহিকতা দেখতে পাওয়া যায় তাঁর সারা জীবন জুড়েই, এবং হিন্দু বা ব্রাহ্ম বা খ্রিস্টান কেউই তাঁর হাত থেকে অব্যাহতি পায়নি। রামকৃষ্ণের একান্ত শিষ্য ও ভাষ্যকার মহেন্দ্রনাথ গুপ্ত, যিনি ‘শ্রীম’ মানে খ্যাত, তাঁকে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, চেঙ্গিস খাঁ যখন লক্ষ লক্ষ লোককে হত্যা করলেন, তখন তো ঈশ্বর নিবারণ করলেন না, স্রেফ বসে বসে দেখলেন, কাজেই তেমন ঈশ্বর থাকলেই বা মানুষের কীসের উপকার? সর্বশক্তিমান এবং মঙ্গলময় ঈশ্বর যদি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বা ভয়ঙ্কর অত্যাচার বা নিপীড়ন এইসব থামাতে না-ই পারেন, তো তিনি যে আদৌ আছেন এইটাই বা কীভাবে বুঝব, আর কোনওমতে থেকে থাকলেও তাতেই বা লাভটা কী হচ্ছে— এ প্রশ্ন তিনি বিভিন্ন জায়গায় বারবারই তুলেছেন। একবার সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের প্রচারক শশিভূষণ বসু এক বয়স্ক ব্যক্তিকে নিয়ে বিদ্যাসাগরের বাড়ি আসবার পথে রাস্তা গুলিয়ে ফেলে বিস্তর খোঁজাখুঁজির পর অনেক দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছন। পৌঁছবার পরে বিদ্যাসাগর তাকে ঠাট্টা করে বলেন, তুমি যখন তোমার পাড়ার মধ্যে চলাফেরা করতে গিয়েই রাস্তা ভুলে এক বেচারা বৃদ্ধকে এত ঘোরাচ্ছ, তখন পরলোকের অজানা পথে যে সব লোকেদের চালান করছ তাদেরকে তো আরওই দুর্দশায় ফেলবে, কাজেই এ ব্যবসা ছাড়ো বাপু!

শিবনাথ শাস্ত্রীর স্মৃতিকথায় জনৈক খ্রিস্টান পাদরির সঙ্গে তাঁর মোলাকাতের কৌতুকাবহ বিবরণ পাওয়া যায়। শিবনাথ তখন তরুণ, বন্ধুবান্ধবদের দল নিয়ে এসেছেন বিদ্যাসাগরের বাড়িতে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে, এবং তিনি এই তরুণ সাথীদের সঙ্গে বাড়ির দাওয়ায় বসে মুড়ি খেতে খেতে প্রবল হাসিঠাট্টা গল্পগুজবে মেতেছেন। এমন সময়ে হাজির হলেন এক খ্রিস্টান পাদরি, যিনি শিবনাথকে ব্রাহ্মধর্মের অনুগামী বলে চেনেন। এসেই শিবনাথকে নিয়ে পড়লেন, এবং মোক্ষলাভ করতে গেলে ব্রাহ্মধর্মে হবে না, খ্রিস্টের শরণ নিতে হবে, এই কথা বোঝাতে লাগলেন। বিদ্যাসাগর তাঁকে ডেকে বললেন, ওরা অল্পবয়সী, ওদের পরকালের কথা ভাবার সময় নেই, আপনি বরং আমাকে বলুন, আমার পরকালের ডাক এসে গিয়েছে। পাদরি মহাশয় বিদ্যাসাগরী রসিকতা বোঝেননি, সঙ্গে সঙ্গে খুব উৎসাহের সঙ্গে বিদ্যাসাগরকে তাঁর ধর্মের মাহাত্ম্য বোঝাতে গেলেন, এবং লোকটির নির্বুদ্ধিতা বুঝতে পেরে বিদ্যাসাগর তার সঙ্গে প্রবল হাসিঠাট্টায় মেতে উঠলেন। একটু পরে পাদরি মহাশয় ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, আপনি এই বৃদ্ধ বয়েসেও এমন নাস্তিক, আপনার মৃত্যুর পরে নরকেও স্থান হবে না— এবং সবেগে প্রস্থান করলেন। যদিও বিদ্যাসাগর সমসাময়িক অন্যান্য ইংরাজি-শিক্ষিতদের মত সাহেবি বেশ ধারণ করেননি, গ্রাম্য ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের চিরাচরিত বেশেই নিজেকে রেখেছেন চিরকাল— ছোটবেলায় পাওয়া উপবীতটি সমেত, কিন্তু কোনও পুজো-আর্চা-আহ্নিক বা অন্য কোনও ধর্মীয় আচারে লিপ্ত হতে তাঁকে কেউ কোনওদিন দেখেনি। পুজোতে যে খরচা হয় তাই দিয়ে গ্রামের গরিবদের খাওয়ালে বরঞ্চ ভাল হয়, এই যুক্তিতে তিনি তাঁর বাড়ির দীর্ঘদিনের জগদ্ধাত্রী পুজো বন্ধ করে দেন, এবং তাঁর জননী তাতে সানন্দে সম্মতি দেন।

ধর্মবিশ্বাস নিয়ে তাঁর মনোভাবটি যদি হয় ঔদাসীন্য-সংশয়-তাচ্ছিল্যের, তবে ধর্মপ্রচার নিয়ে তাঁর অবস্থানটি আরও সুনিশ্চিত— নিখাদ অপছন্দের। ‘দল বাঁধা কাণ্ড’ আখ্যা দিয়ে তিনি একে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেন। ব্রাহ্মধর্মের নেতা কেশব সেনকে নিয়ে তিনি যে পারলৌকিক গল্পটি রচনা করে রামকৃষ্ণ-শিষ্য ‘শ্রীম’ ও অন্যান্যদের শোনান, তা টইটম্বুর হয়ে আছে স্বকীয় কৌতুক ও তাৎপর্যে। ধর্মোপদেশদানকে তিনি ঠিক কী চোখে দেখেন, সেটা বুঝিয়ে বলার জন্যই এ গল্পের অবতারণা। গল্পটি এইরকম। কেশব সেনের মৃত্যুর পরে যমদূতেরা তাঁকে নিয়ে গেছে ইশ্বরের কাছে, তিনি সেন মহাশয়ের অপরাধ বিচার করে পঁচিশ ঘা বেত মারার আদেশ দিলেন। এবার তারপর যখন কেশব সেনের শিষ্যরা এসে বলতে লাগল যে তারা যা করেছে তা কেশব সেনের ঈশ্বর-ব্যাখ্যায় প্রভাবিত হয়ে করেছে, তখন ঈশ্বর কেশব সেনকে আবারও বেত মারার আদেশ দিলেন, কারণ ঈশ্বর বিষয়ে তিনি নিজে শুধু ভুল বোঝেননি, অন্যদেরও বুঝিয়েছেন। এই বলে বিদ্যাসাগর বোঝাতে চাইতেন যে, তিনি যদি ধর্মোপদেশ দিতেন বা ধর্মপ্রচার করতেন, তাহলে তাঁরও দশা হত ওই কেশব সেনের মতই, অর্থাৎ পরকে ভুল বোঝানর জন্য বেত খেতে হত, এবং সেই ভয়েই তিনি কাউকে ধর্মোপদেশ দেওয়াটা উচিত বলে মনে করেন না। তাঁর এই একই মনোভাবের প্রতিফলন দেখা যায় রামকৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর মোলাকাতের সুবিখ্যাত ঘটনায়, এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেও। এই সাক্ষাৎকারটিতে দোর্দণ্ডপ্রতাপ অবিশ্বাসী পুরুষ বিদ্যাসাগর বশ হয়েছিলেন রামকৃষ্ণের আধ্যাত্মিক প্রজ্ঞার কাছে, এমন একটি হাস্যকর গল্প কেউ কেউ চালানোর চেষ্টা করে থাকেন।

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় ও শঙ্করীপ্রসাদ বসুর মত ধর্ম-গদগদ লেখক তো বিদ্যাসাগরকে আপাদমস্তক ভক্তই বানিয়ে ছেড়েছেন, এবং এমনকি বিনয় ঘোষের মত তন্নিষ্ঠ সেক্যুলার গবেষকও খুব সম্ভ্রমের সঙ্গে লিখেছেন, “উভয়ের মানবকল্যাণের আদর্শ মূলত এক হলেও, দুজনের পথ ছিল ভিন্ন। অনর্থক তর্ক করে তাই তাঁরা পথের মীমাংসা করেননি, এবং কেউ কাউকে নিজের পথে আনতেও চাননি।” (২, পৃষ্ঠা ৩৫৬) বলা বাহুল্য, কথাগুলো সম্ভাব্য সমস্তরকম অর্থেই ভুল। ধর্মের মিঠে বুলিতে বিদ্যাসাগরের বশ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, ‘মানবকল্যাণ’ জিনিসটা বিদ্যাসাগরের আদর্শ হলেও রামকৃষ্ণ সম্পর্কে মোটেই তা বলা যায় না, সেই সাক্ষাৎকারে বিদ্যাসাগর আদৌ তর্ক না করলেও (সমর্থনসূচক ভঙ্গিতে বলা হালকা ঠাট্টা ও ইঙ্গিতগুলো বাদ দিলে) রামকৃষ্ণ ক্রমাগতই নানা তত্ত্বকথা ও উপমা দিয়ে বিদ্যাসাগরকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন, এবং বিদ্যাসাগর রামকৃষ্ণকে ‘নিজের পথে’ আনবার চেষ্টা অর্থহীন মনে করলেও রামকৃষ্ণের তরফে সে চেষ্টা অতি প্রকটভাবেই ছিল। গবেষক আশীষ লাহিড়ী তাঁর ‘শ্রীরামকৃষ্ণের আকুতি: বিদ্যাসাগরের উপেক্ষা’ শীর্ষক রচনায় (১৩, পৃষ্ঠা ২৫০-২৭৩) ওই সাক্ষাৎকারটির প্রায় প্রতিটি পংক্তি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করে যা প্রতিপন্ন করতে চেয়েছেন তা হল, “বস্তুত রামকৃষ্ণই বিদ্যাসাগরকে দলে টানতে না পেরে নিতান্ত মুষড়ে পড়েছিলেন। আর বিদ্যাসাগর সশ্রদ্ধভাবে সম্পূর্ণ অবজ্ঞা করেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণকে।”

রামকৃষ্ণ-বিদ্যাসাগরের পারস্পরিক শ্রদ্ধার সুমিষ্ট বয়ান যাঁরা সযত্নে নির্মাণ করতে চান, তাঁরা প্রায়শই উল্লেখ করতে ভুলে যান যে, বিদ্যাসাগরের বাদুড়বাগানের বাড়িতে গিয়ে রামকৃষ্ণ ওই সাক্ষাৎকার সেরে আসার পরে বিদ্যাসাগর একবারও তাঁর কাছে গিয়ে পাল্টা সাক্ষাৎ না করায় তীব্রভাবে আশাহত হয়ে রামকৃষ্ণ তাঁর সম্পর্কে বেশ কিছু কটু কথা বলেন, যদিও বিদ্যাসাগর কখনই রামকৃষ্ণ সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করেননি। সেই সঙ্গে এ কথাটাও বোধহয় এখানে যোগ করা চলে যে, এ বিষয়ে রামকৃষ্ণের উক্তিগুলো ‘শ্রীম’ কর্তৃক ঠিক যেভাবে ‘কথামৃত’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ হয়েছে, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে ঠিক ওভাবেই বলা হয়েছিল কিনা, আজ আর সেটা যাচাই করার কোনও রাস্তা নেই।