• facebook
  • twitter
Tuesday, 24 September, 2024

নদী বাঁচানোর দাবিতে জোরালো হচ্ছে আন্দোলন

পরিবেশকর্মী থেকে শিক্ষক, অধ্যাপক, মৎস্যজীবী, সাধারণ মানুষ, স্থানীয় ক্লাবের যুবকেরা সবাই হাজির ছিলেন। নদী বাঁচাতে এটাই আশার আলো বলে দাবি করেন বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী বিবর্তন ভট্টাচার্য।

নদিয়া জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নদী আজ মৃতপ্রায়। বেশ কিছু নদী উধাও হয়ে গিয়েছে মানচিত্র থেকে। এর ফলে বেড়েছে মানুষের দুর্ভোগ। ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিকের মাত্রা বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। অতিবৃষ্টিতে দেখা দিয়েছে বন্যা আর খরায় জল সংকট। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়,মজে যাওয়া নদীর মধ্যে রয়েছে গোমতি,মরালি, শান্তিপুরের সুরধ্ধনি, চাকদহের মুড়িগঙ্গা। এছাড়াও তালিকায় রয়েছে বহু নাম না জানা অসংখ্য নদী। কৃষ্ণনগর এবং বাদকুল্লার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া রবীন্দ্রনাথের প্রিয় অঞ্জনা নদী আজ ডোবায় পরিণত হয়েছে। কৃষ্ণনগর বেজেখালির মোড়ে এই অঞ্জনা নদীই যেন আস্তাকুঁড়। কৃষ্ণনগরে জলঙ্গি নদীতে জল নেই বললেই চলে। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে মাজদিয়ার পাবাখালি পর্যন্ত মাথাভাঙা কার্যত অদৃশ্য।

এছাড়াও ইছামতি ও চুর্ণী নদীর অবস্থাও তথৈবচ। নদী পড়েছে লুটেরাদের কবলে। নদীর মাঝে অসংখ্য চড়। নদীতে বাড়ছে দূষণ। বছরে অন্তত চার-পাঁচবার বাংলাদেশের কেরু কোম্পানির বর্জ্য মাথাভাঙা দিয়ে চূর্ণী হয়ে নদিয়ার পায়রাডাঙার শিবপুরের কাছে ভাগীরথীতে গিয়ে মেশে। এর ফলে শুধু নদীর জল নয়, প্রভাব পড়েছে দুই পাড়ের গ্রামের মানুষের উপরও। কালিনারায়ণপুরে ট্রেনের কামরায় বসেও তা স্পষ্ট বোঝা যায়। রাষ্ট্রপতি,প্রধানমন্ত্রী থেকে মুখ্যমন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক,পুর চেয়ারম্যান,পঞ্চায়েত সব জায়গায় অভিযোগের লম্বা তালিকা জমা পড়েছে।

কিন্তু তাতেও লাভের লাভ কিছু হয়নি। হারিয়ে গিয়েছে মরালি নদী। একের পর এক নদী হারিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে সর্বগ্ৰাসী লোভ‌ ও সিন্ডিকেটরাজের দাপট। তবে এ বছর টানা বৃষ্টির জেরে নদীতে কিছুটা জল দেখা গিয়েছে বলে জানিয়েছেন চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থার কর্ণধার তথা বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী বিবর্তন ভট্টাচার্য। এ বিষয়ে চাকদহ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শ্রীকান্ত রায় বলেন, ‘২০০৮ সালে মৎস্যজীবীদের নিয়ে সমিতি গড়লেও তা ফলপ্রসূ হয়নি। মরালি নদী সংস্কার ও মৎস্য চাষ সুরক্ষায় সকলের একজোট হ‌ওয়া দরকার।’

এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরাম এবং চাকদহ বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা একজোট হয়ে নদীমাতৃক বাংলায় সভ্যতার ধারক-বাহক হিসেবে নদীর গুরুত্ব তুলে ধরে আন্দোলন শুরু করেছে। তাতে কিছুটা ফলও মিলেছে। চাকদহে মুড়িগঙ্গা নদীতে কিছুটা হলেও সংস্কার শুরু হয়েছে। চাকদহে মরালি নদী বাঁচানো, তার নাব্যতা ফিরিয়ে আনা এবং সার্বিকভাবে জল, জঙ্গল, জমিরক্ষার দাবিতে এক কনভেনশনে মিলিত হন সমাজের বিভিন্ন স্তরের কয়েকশো মানুষ। পরিবেশকর্মী থেকে শিক্ষক, অধ্যাপক, মৎস্যজীবী, সাধারণ মানুষ, স্থানীয় ক্লাবের যুবকেরা সবাই হাজির ছিলেন। নদী বাঁচাতে এটাই আশার আলো বলে দাবি করেন বিশিষ্ট পরিবেশকর্মী বিবর্তন ভট্টাচার্য।