• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

মোদীর ১০০ দিন

প্রধানমন্ত্রী তার প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের ফলাফল জানতে চেয়েছিলেন তার ১০০ দিনের রাজত্বকালে— কিন্তু যে সমস্যার কথা একবারের জন্যই উল্লেখ করেননি, তা হল প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

প্রধানমন্ত্রী তৃতীয় শরিক নির্ভর সরকার প্রায় তিন মাস সম্পূর্ণ করে ফেললেন। ১৭ সেপ্টেম্বর এই সরকারের তিনমাস পূর্ণ হল এবং এই দিনটিই নরেন্দ্র মোদীর ৭৪তম জন্মদিন। সুতরাং দিনটির তাৎপর্য অনুভব করে প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেকটি মন্ত্রিসভার সদস্যদের এই তিন মাসের তথা ১০০ দিনের কাজের একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন। তাই এই দিনটিতে সরকারের জনকল্যাণমূলক কাজ যা হয়েছে, তা ফলাহ করে প্রচার করেন, যাতে দেশের জনসাধারণ বুঝতে পারেন এই সরকার শরিকনির্ভর হলেও এখনও পর্যন্ত শরিক দলের সঙ্গে মিল মহব্বত অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করে চলেছে। এখন পর্যন্ত শরিকদের ওপর নির্ভরতার মধ্যে দিয়ে কোনও মিলের অভাব হয়নি। বা সম্পর্কে কোনও ফাটল ধরেনি।

লোকসভা ভোটের আগেই প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন মন্ত্রকের আমলাদের প্রতি নির্দেশ ছিল যখন যা জনকল্যাণমূলক কাজ হয়েছে তার একটি সঠিক হিসেব রাখতে যাতে দেশের মানুষ বুঝতে পারে এই সরকার শরিক নির্ভর হলেও বসে নেই। ১০০ দিনের মাথায় বিভিন্ন মন্ত্রকের সেই কাজটা কতটা হল তার এখন দেশজুড়ে প্রচার চলছে। কোনও কাজ কোনও কারণে সম্পূণ: না হলেও, তা কেন হল না তাও দেশের মানুষকে জানাতে।

বর্তমান মোদী সরকার শরিক নির্ভর হওয়াতে ইতিমধ্যেই জনমানসে যে বার্তা গেছে, তা হল মোদী সরকার দুর্বল এবং পূর্ণ সময় অতিক্রম করবে কিনা, তা নিয়ে এখন থেকেই সন্দেহ দানা বাঁধছে। তবে মোদী সরকার প্রথম থেকেই বুঝতে পারছেন তার প্রধান শরিক দল বিহারের নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্রের চন্দ্রবাবু নাইডুর দলকে বিহার ও অন্ধ্রপ্রদেশের জ্ন্য ঢালাও অর্থ বরাদ্দ করেছে। সরকার গঠিত হলেও এখনও পর্যন্ত বিহারের নীতীশ কুমারের সঙ্গে কোনও বিষয়ে মতান্তর হয়নি। তেমনই চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গেও। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের ধারণা এখনও পর্যন্ত এই সরকার দু’টি বড় শরিক নিয়ে সেভাবে বললে হয়তো সরকারের পাঁচ বছরের স্থায়িত্ব নিয়ে কোনওরূপ অসুবিধে হবে না। কিন্তু সব দিন তো একরকম যায় না। তাই ভবিষ্যতে সরকারের চলা এই রকম মসৃণ থাকবে কিনা, বলা যায় না। এই সরকারের এখনও দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হবে।

বাজেটে প্রতিটি মন্ত্রকের জন্য যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, তার কতটা খরচ হয়নি এবং কেন খরচ হয়নি, তাও জনসাধারণের জানার অধিকার রয়েছে। যেমন দেশের অনেক অঞ্চলে পাইপে বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না— তার জন্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনসাধারণের দুর্ভোগ বাড়ছে। কাজগুলির মধ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনা, পেনশন প্রকল্পে সংস্কার, ১২টি স্মার্ট শহর, ছয়টি শিল্প করিডর এই প্রকল্পগুলির কাজ কতটা হল, তা মানুষকে জানাতে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে দেশের ৭০ বছরের বেশি মানুষকে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কাজটি বা কতদূর হল তাও দেশের মানুষকে জানাতে হবে। তাদের স্বাস্থ্য বিমার কাজটিই বা কতদূর হল তাও জানাতে হবে। এই প্রকল্পে স্বাস্থ্য বিমার কাজই বা কতটা এগোলো। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ১৬ সেপ্টেম্বর থেকেই এই প্রকল্পগুলির কাজ নিয়ে দেশের মানুষের কাছে যেতে হবে। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে এই সরকারের ১০০ দিন সম্পূর্ণ হল ঠিকই, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আশা করলেও তার প্রকল্পগুলির কাজ সেভাবে এগোয়নি। তবে প্রতিটি প্রকল্পের কাজই কিছু কিছু হয়েছে, তাতে সাধারণ মানুষ তেমনভাবে উপকৃত হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী তার প্রকল্পগুলির বাস্তবায়নের ফলাফল জানতে চেয়েছিলেন তার ১০০ দিনের রাজত্বকালে— কিন্তু যে সমস্যার কথা একবারের জন্যই উল্লেখ করেননি, তা হল প্রতিটি নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি। শাকসবজি থেকে আরম্ভ করে প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য এমনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেদিকে প্রধানমন্ত্রীর বিন্দুমাত্র নজর নেই। ফলে সাধারণ মানুষ নিদারুণ দুর্ভোগের মধ্যে বাস করছেন।