• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

জয়ের দোরগোড়ায় রোহিতরা

শুভমন ও পন্থের ব্যাট থেকে শতরান

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জয়ের পরে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবেন রোহিত শর্মাদের ভারতের বিপক্ষে। খেলতে নামার আগেই বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা হুঙ্কার করেছিলেন, আমরা জেতার জন্য মাঠে নামব এবং ভারতকে চাপের মধ্যে রেখে দেব। কিন্তু এই ভাবনায় এখনও পর্যন্ত কোনও পরিস্থিতি তৈরি করতে পারেননি ওপার বাংলার ক্রিকেটাররা। বরঞ্চ রোহিত ব্রিগেড যেভাবে বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে রেখে দিয়ে জয়ের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। রবিবার সেই জয়ের ছবিটা দেখার জন্য অবশ্যই চিপকের মাঠে দর্শকরা ভিড় করবেন।

প্রথম ইনিংসে ভারতীয় দলের উইকেটরক্ষক ঋষভ পন্থ ও পয়লা নম্বর ব্যাটসম্যান শুভমন গিলকে ছন্দে দেখা যায়নি। অর্থাৎ তাঁদের ব্যাটও ঝলসে ওঠেনি। কিছুটা হতাশা তাঁদের মনে ডানা বেঁধেছিল। হয়তো সেই সময় ড্রেসিংরুমে বসে অঙ্গীকার করেছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসে এই ব্যর্থতাকে উড়িয়ে দিয়ে একটা ভালো রান উপহার দেবেন ভারতের স্কোরবোর্ডে। সেই ভাবনা সার্থক রূপ পেল। দ্বিতীয় ইনিংসে এই দুই ব্যাটসম্যান শতরান করে ভারতের জয়ের স্বপ্নকে আরও কাছে এনে দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত গিয়েছিলেন শুভমন গিল। দ্বিতীয় ইনিংসে শুভমনের ব্যাট থেকে শতরান এলো এবং প্রায় দু’বছর বাদে ফিরে ঋষভ পন্থের ব্যাট থেকে শতরান দেখতে পাওয়া গেল। প্রথম ইনিংসে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাট ঝলসে উঠেছিল এবং শতরান উপহার দিয়েছেন। কিন্তু বলে মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেননি তিনি। একটা উইকেটও অশ্বিনের নামের পাশে লেখা যায়নি। আর সেই অশ্বিনই দ্বিতীয় ইনিংসে তিনটি উইকেট নিয়ে বাংলাদেশ শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করে দেন। আর ভারতের জয়ের পথকে মসৃণ করে দিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ ভারতের জয়ের পথকে মসৃণ করে দিয়েছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। রবিবার ভারতের বোলাররা যদি ৬টি উইকেট তুলে নিতে পারেন, তাহলে জয়ের আনন্দে মেতে উঠতে পারবেন ক্রিকেটাররা।

বাংলাদেশকে জিততে হলে আরও ৩৫৭ রানের প্রয়োজন। আলো কমে যাওয়াতে তৃতীয় দিনে ৪৫ মিনিট আগেই খেলায় যবনিকা পড়ে যায়। নইলে বাংলাদেশ শিবির আরও সমস্যায় পড়ে যেত।

৮১ রানে ৩ উইকেট থেকে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে ভারত। ক্রিজ়ে ছিলেন শুভমন গিল ও ঋষভ পন্থ। তাঁরাই খেলা চালিয়ে যান। প্রথম ইনিংসে লেগ স্টাম্পের বাইরের বল খেলতে গিয়ে আউট হয়েছিলেন শুভমন। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ভুল করেননি তিনি। অফ স্ট্যাম্পের বলে তাঁর পরিচিত কভার ড্রাইভ দেখা গিয়েছে।

অপর প্রান্তে ঋষভ পন্থ আগ্রাসী মেজাজে খেলছিলেন। প্রথম ইনিংসেও চালিয়ে খেলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ৩৯ রান করার পরে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে অবশ্য তেমনটা হল না। দুই ব্যাটসম্যান ভারতীয় দলকে টেনে নিয়ে গেলেন। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারেরা ভাল বল করছিলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদের তোয়াক্কাই করেননি শুভমন ও ঋষভ পন্থ।

ঋষভ পন্থ ও শুভমন গিল দু’জনেই শতরান করার কৃতিত্ব দেখান। ১২৮ বলে ১০৯ রান করে আউট হন পন্থ। ১৩টি চার ও চারটি ছক্কা মারেন তিনি। শুভমন অবশ্য আউট হননি। ১৭৬ বলে ১১৯ রান করে অপরাজিত থাকেন। ১০টি চার ও চারটি ছক্কা মারেন। ছ’নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ১৯ বলে ২২ রান করেন লোকেশ রাহুল। ৪ উইকেটে ২৮৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। বাংলাদেশকে জিততে গেলে ৫১৫ রানের প্রয়োজন ছিল। এই অবস্থায় দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে শুরুটা খুব একটা খারাপ করেনি বাংলাদেশ। দুই ওপেনার আক্রমণাত্মক শুরু করেন। ভারতের পেসারদের বিরুদ্ধে হাত খোলেন জাকির হাসান ও শাদমান ইসলাম। উইকেটের জন্য ভারতীয় পেসারেরা ফুল লেংথে বল করছিলেন। সেটা কাজে লাগিয়ে দ্রুত রান করছিলেন তাঁরা। দুই ওপেনার জুটি ৬২ রান করেন।

বাংলাদেশকে প্রথম ধাক্কা দেন যশপ্রীত বুমরা। জাকিরকে ৩৩ রানের মাথায় আউট করেন তিনি। বুমরার বলে জাকিরের ব্যাটে লেগে ক্যাচটি সরাসরি যশস্বী জয়সওয়ালের হাতে চলে যায়। বাকি সময়ে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অশ্বিনের বলে ৩৫ রানের মাথায় আউট হন শাদমান। বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ধরে খেলতে শুরু করেন। তাঁর ব্যাট থেকে বেশ ভালো রান আসতে শুরু করে। তিনি অর্ধশতরান করেন । কিন্তু সতীর্থ খেলোয়াড়দের সেইভাবে পাশে পাননি শান্ত। মোমিমুল হক ও মুশফিকুর রহিম রান পাননি। দু’জনই আউট হন অশ্বিনের বলে। ৩৭.২ ওভারে বাংলাদেশের রান যখন ৪ উইকেটে ১৫৮, তখন আলো কমে যাওয়ায় খেলা বন্ধ হয়ে যায়। আর খেলা শুরু করা যায়নি। শান্ত ৫১ ও শাকিব আল হাসান ৫ রানে ব্যাট করছেন। প্রথম টেস্ট জিততে গেলে ভারতের এই মুহূর্তে দরকার আর ৬টি উইকেট। আর বাংলাদেশকে জয়ের জন্য দরকার ৩৫৭ রান। এই পরিস্থিতিতে রবিবার খেলা শুরু হওয়ার পরে ভারতের ভাগ্য উজ্জ্বল হবে কিনা, অথবা বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারে কিনা, এটাই দেখার বিষয়। তবে ভারতীয় দল জয়ের জন্য ভালো জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে।