• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

‘সিটি অফ ভয়’

ঠিকই, পেশী-প্রদর্শক ইট-পাথর নিক্ষেপকারী হিংস্র গুণ্ডাদের বিপরীতে, হিপোক্রেটিক শপথ নেওয়া ‘পবিত্র’ চিকিৎসকদের ‘বিক্ষোভ’ তো অবশ্যই অত্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ’ —হ্যাঁ এক্কেবারে ‘শ্মশানের শান্তি’!

না কদাচই ‘সিটি অফ জয়’ না! এ হল ‘সিটি অফ ভয়’!
চমৎকার! তা ‘সিটি অভ নির্ভয়’টা তাহলে কোন জন্য! দিল্লি, আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ নাকি গুরগাঁও!
আগামী দিনের কন্যা সন্তানের প্রতি ‘আবেগঘন আবেদন’— ‘বাংলার মাটিতে জন্ম নিও না!’ দারুণ দারুণ! তা সেই কন্যা সন্তানরা ঠিক কোন রাজ্যে জন্মগ্রহণ করলে ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’— উত্তরপ্রদেশ, মণিপুর, উত্তরাখণ্ড, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, অসম নাকি জম্মু ও কাশ্মীর (কাঠুয়া ‘খ্যাত’)।

আর ওই কাদের দেখা যায় আজ নারীর উপর অত্যাচারের মর্মান্তিক দুঃসংবাদে ‘রক্তাক্ত হৃদয়’ সমেত ক্রন্দনরত আর হস্ত ‘প্রতিবাদে’ মুষ্ঠিবদ্ধ!

গায়ে কোন রঙের জামা! লাল! গেরুয়া!
সেই বানতলা (‘এমন তো কতই হয়’), ধানতলা, বারাসত (দিদিকে পিশাচদের রক্ষার্থে ভাইএর জীবনদান), সিঙ্গুর (তাপসী মালিক মনে আছে তো?)-এর ‘লাল’!

সেই ২০০২ গুজরাত (পরবর্তী সময়ে প্রমাণিত গণধর্ষক খুনীদের কারাগার থেকে মুক্তি ও ফুল মিষ্টি সহকারে অভ্যর্থনা), ‘মৃত গণধর্ষিতার দেহ বলপূর্বক ভস্ম করা’ উত্তরপ্রদেশ, ‘৮ বছরের শিশুকন্যাকে মন্দিরের ভিতর আটক করে দিনের পর দিন অকথ্য অত্যাচার গণধর্ষণ হত্যালীলা ও তারপর সেই পাপীদের পক্ষ নিয়ে ‘মুক্তি চাই’ আওয়াজ তুলতে তুলতে স্ব-নিযুক্ত জাতীয়তাবাদী দলের নেতাদের জাতীয় পতাকা হাতে আন্দোলন দেখা’ কাঠুয়া, কুকী মহিলাদের নগ্ন প্যারেড করিয়ে গণধর্ষণ ও হত্যার মণিপুর, যৌন সংসর্গে আপত্তি করা সেই রিসর্টের রিসেপসনিস্টকে হত্যা করে পাহাড়ী নদীতে লাস ভাসিয়ে দেওয়া উত্তরাখণ্ডেরর সেই ‘গেরুয়া’।

এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি মেডিকেল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররা, যাঁরা সপ্তাহের পর সপ্তাহ যাবৎ ‘কর্ম বিরতি’ পালন করে চলেছেন—তাঁরা ২৭ আগস্ট কলকাতার বুকে ‘ছাত্র’দের ছদ্মবেশে একে বিশেষ রাজনৈতিক দলের গুণ্ডা মাস্তানদের হিংস্র ‘প্রতিবাদের’ কেবল নিন্দাই করেননি, সেই সঙ্গে নিজেদের ‘বিক্ষোভ’কে ‘শান্তিপূর্ণ’ আখ্যায় ভূষিত করেছেন! আস্তে কন কর্তা, ঘোড়ায় শুনলে হাসবে!

হ্যাঁ ডাক্তারবাবুদের অবস্থান অত্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ’ই বটে!
যখন গুণ্ডা মাস্তান বাহিনী ববর্র পেশী আস্ফালনের মাধ্যমে সমাজে সরাসরি সন্ত্রাস ও হিংসার পরিবেশ স্থাপন করছে, ‘পবিত্র’ পেশার ‘উচ্চশিক্ষিত’ জুনিয়র চিকিৎসকরা তখন নিরীহ নিষ্পাপ অসহায় রোগীদের অসহনীয় যন্ত্রণা নিরসন করার পরিবর্তে হৃদরোগে বা ফুসফুস কিডনি লিভার পাকস্থলী সংক্রান্ত গুরুতর ব্যাধিতে আক্রমন্ত দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা হতদরিদ্র মানুষগুলির চিকিৎসা প্রত্যাখ্যানের ‘অহিংস’ পথ বেছে নিয়েছে! প্রাণঘাতী ক্যান্সারে আক্রান্ত বা ডায়ালাইসিস এবং অপারেশনের রোগীর দুর্দশা সম্বন্ধে তো যত কম বলা যায় ততই মঙ্গল!

ঠিকই, পেশী-প্রদর্শক ইট-পাথর নিক্ষেপকারী হিংস্র গুণ্ডাদের বিপরীতে, হিপোক্রেটিক শপথ নেওয়া ‘পবিত্র’ চিকিৎসকদের ‘বিক্ষোভ’ তো অবশ্যই অত্যন্ত ‘শান্তিপূর্ণ’ —হ্যাঁ এক্কেবারে ‘শ্মশানের শান্তি’!

পরিশেষে একটা বিনীত প্রশ্ন ‘মহামান্য উচ্চশিক্ষিত’ জুনিয়র ডাক্তারদের সমীপে! আচ্ছা কোরপান শাহ-র কথা আপনাদের স্মরণে আছে! হ্যাঁ চার শিশু সন্তানের সেই হত দরিদ্র মানসিক ভারসাম্যহীন পিতা কোরপান যাকে প্রায় দশ বছর আগে ‘মোবাইল চোর’ আখ্যা দিয়ে আপনাদের ‘সম্প্রদায়’ পিটিয়ে মেরে দিয়েছিল নীলরতন সরকার হাসপাতালের ছাত্রাবাসে! সেই অমার্জনীয় মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত কি আপনারা করেছিলেন! আপনারা নিজেদের পেশাগত ‘জাতভাই’-দের চরম শাস্তির দাবিতে একদিনের জন্যও নূন্যতম প্রতিবাদ করেছেন, হতদরিদ্র কোরপানের স্মরণে একটাও মোমবাতি জ্বেলে ছিলেন!

আপনাদের মানবাধিকার অবশ্যই শিরোধার্য। কেবল কোরপান শাহ-র তা ছিল না, তাই না! কেন! সে গরিব ছিল বলে নাকি ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ ছিল বলে! হতদরিদ্র অসহায় রোগীদের মানবাধিকার থাকতে নেই, তাই না!

যেভাবে অত্যাচারিত ও অত্যাচারীর ‘সামাজিক শ্রেণি’ বিচার করার পরই ঠিক হয় ‘জাতির সমবেত বিবেক আঘাতপ্রাপ্ত’ হবে কি হবে না, তাতে আশঙ্কা হয় এই ভারতীয় সমাজের মনন-টাই আদৌ ভারসাম্যসম্পন্ন তো!