রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য পারস্পরিক দ্বন্দ্বের মধ্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করলেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস। তাঁর দাবি, রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য ডিভিসি দায়ী নয়। তাঁর মতে, কংসাবতী বাঁধ থেকে জল ছাড়াতেই রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীকে এই নিয়ে চিঠিও দেন রাজ্যপাল। চিঠিতে রাজ্যপাল লেখেন, ডিভিসিকে দোষারোপ না করে রাজ্যের উচিত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া ।
মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া-সহ রাজ্যের বিস্তীর্ন অঞ্চল প্লাবিত। বৃষ্টি থামার পরও নতুন করে জলমগ্ন হয়েছে বিভিন্ন এলাকা। বন্যা বিধ্বস্ত রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড বন্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ২০০৯ সালের পর বাংলায় এত ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ছিল, “ডিভিসি অপরিকল্পিতভাবে এবং একক সিদ্ধান্তে মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়ার ফলে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলা, বিশেষ করে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর এবং পশ্চিম মেদিনীপুর প্লাবিত হয়েছে। আগে কোনওদিন ডিভিসি এভাবে জল ছাড়েনি। ২০০৯ সালের পর এই বন্যা ভয়াবহ। প্রায় এক হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জলের তলায়। ৫০ লক্ষ মানুষ বন্যা কবলিত।”
রাজ্যপালের পালটা দাবি, হাওড়া, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, এবং বাঁকুড়ায় বন্যার প্রাথমিক কারণ কংসাবতী থেকে জল ছাড়া। এই কংসাবতী বাঁধ রাজ্যের অধীন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। রাজ্যপালের মতে, যে সব জেলাগুলিতে বন্যার জন্য মুখ্যমন্ত্রী ডিভিসিকে দায়ী করছেন, সেই বাঁকুড়া, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর কোনভাবেই ডিভিসির মধ্যে পড়ে না। কংসাবতী, শিলাবতী ও দ্বারকেশ্বর নদী এলাকায় প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং কংসাবতী নদীর উপর মুকুটমণিপুরে বাঁধ থেকে জল ছাড়ার ফলেই এইসব জায়গা প্লাবিত হয়েছে।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতির জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর দাবি, ডিভিসির যে বাঁধ তৈরি হয়েছিল, তা তৈরি হয়েছিল ছোটখাটো বন্যা পরিস্থিতি আটকানোর জন্য। তিনি আরও বলেন, যদি জমা জলের পরিমান বাড়তে থাকে , তাহলে কোনও বাঁধই বন্যা রোধ করতে পারে না। ফলে ডিভিসিকে দোষারোপ না করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজের দায়িত্ব পালন করুক রাজ্য সরকার।