প্রবল জলের স্রোতে ভেসে গেল আস্ত একটি পাকা বাড়ি। সম্প্রতি হুগলির খানাকুলে এমনই এক শিহরিত হয়ে যাওয়ার মতো ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। সেই ভিডিও দেখে ভয়ে আতঙ্কিত নেটনাগরিকরা। প্রথমে নিম্নচাপ এবং পরে ডিভিসি–র জল ছাড়ায় ইতিমধ্যেই বন্যা কবলিত পশ্চিমবঙ্গের বহু গ্রাম। একতলা বাড়িগুলিতে জল ছাদ ছুঁই ছুঁই। মাটির বাড়িগুলি ইতিমধ্যেই জলের নীচে। বন্যার পরিস্থিতির কবলে জলের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যার ভয়াবহতার জেরে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ভিটেমাটি ছেড়ে ইতিমধ্যেই বহু মানুষ প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণশিবিরগুলিতে। কিন্তু সেখানেও রক্ষা নেই। ত্রাণশিবিরগুলিতেও জল ঢুকতে শুরু করেছে। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি এবং ডিভিসির ছাড়া জলে ভাসছে হুগলি। যদিও এখন বৃষ্টি কমেছে, কিন্তু খানাকুলে বন্যার পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল রাত পর্যন্তও জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, খানাকুল থানার সামনে নৌকা চলাচল করছে। খানাকুল বাসস্ট্যান্ডেও একই অবস্থা, সেখানেও নৌকা চলছে। খানাকুল ১ নম্বর এবং ২ নম্বর বিডিও অফিস, পোস্ট অফিস, ভূমি দপ্তরের অফিস— সর্বত্রই বানভাসী পরিস্থিতি।
হুগলির বলাগড় এলাকার পরিস্থিতিও খারাপ। অতিবৃষ্টি এবং ডিভিসির ছাড়া জলের কারণে বলাগড়ের জিরাট পঞ্চায়েতের চর খয়রামারি এলাকা ভাসছে। আগেই জোয়ারের জলে প্লাবিত হয়েছিল বিস্তীর্ণ এলাকা, এখন বাঁধের ছাড়া জলের সঙ্গে গঙ্গা আরও বেশি ফুঁসছে। কালভার্ট ভেঙে গ্রামের ভেতরে জল ঢুকতে শুরু করেছে। কয়েকশো মানুষ গৃহবন্দি। ওই এলাকায় প্রায় আড়াইশো পরিবার বসবাস করে, যার মধ্যে ৬০টি পরিবারকে ইতিমধ্যেই তাঁদেরকে স্থানীয় আশুতোষ নগর প্রাইমারি বিদ্যালয়ে অস্থায়ী ত্রাণশিবিরে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বন্যকবলিত স্থান পরিদর্শন করেন সদর মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা এবং বলাগড়ের বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ভাঙা কালভার্টের জায়গায় নতুন কাঠের সেতু নির্মাণ করা হবে। ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নেওয়া দুর্গতদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শুধু চর খয়রামারি নয়, বলাগড়ের শ্রীপুরের বাবুচর, সিজা কামালপুর পঞ্চায়েতের বানেশ্বরপুর, আশ্রমঘাটসহ আরও কিছু এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে। কৃষিজমি তলিয়ে যাওয়ায় চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ার ভয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা।