• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

দেশের সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি পেল মুর্শিদাবাদের বড়নগর, টুইটে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি পাওয়ার পরে পর্যটকদের ভিড়ও আগের তুলনায় আরও বাড়বে এবং আর্থ-সামাজিকভাবে আরও এগিয়ে যাবে বড়নগর। এমনটাই মনে করছেন এলাকার মানুষ।

দেশের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’ এর স্বীকৃতি পেল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ থানার বড়নগর গ্রাম। রাণী ভবানীর স্মৃতি বিজরিত এবং একদা ‘বাংলার বারানসী’ হিসেবে পরিচিত এই গ্রামটি ভাগীরথী নদীর গা ঘেঁষে রয়েছে। টেরাকোটার কারুকাজ করা একাধিক প্রাচীন মন্দির সম্বলিত এই গ্রামটিকেই দেশের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে বেছে নিয়েছে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক। রাজ্য সরকারকে বিষয়টি জানানোর পরেই বিষয়টি নিজের টুইটারে উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি টুইটটি করেন। সেখানে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন-‘আমি এটা জানতে পেরে আনন্দিত যে, ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের কৃষি-পর্যটন বিভাগের প্রতিযোগিতায় মুর্শিদাবাদ জেলার বড়নগর গ্রামকে ‘সেরা পর্যটন গ্রাম’ হিসেবে নির্বাচিত করেছে। এই খবরে আমি আপ্লুত। এ রাজ্যে যে অনন্য ভাণ্ডার রয়েছে, আরও বেশি করে তার প্রচার করে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেব আমরা।’ আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ব পর্যটন দিবসে বড়নগর গ্রামকে এই পুরস্কার দেবে কেন্দ্র। যদিও এই স্বীকৃতি পাওয়ার অনেক আগে থেকেই প্রতি বছর নিয়ম করে দেশ-বিদেশের পর্যটকরা এসে ভিড় করেন এই গ্রামে। একদিকে পরিচ্ছন্নতা এবং অন্যদিকে ইতিহাসের হাতছানি। এই দুইয়ে বার বার মুগ্ধ হয়েছেন পর্যটকরা। ট্যুরিস্ট স্পষ্ট হিসেবে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত গ্রামটি। এই গ্রামের বহু বাসিন্দাই তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা বালুচরি, জামদানি, টাঙ্গাইল ইত্যাদি সুক্ষ্ম বস্ত্র উৎপাদন করেন। এছাড়াও গ্রামের বহু মানুষ মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। বাঁশ ও বেতের কারুশিল্পের কাজও করেন গ্রামের মানুষ। এই শিল্পগুলিকে সামনে রেখেই গ্রামের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলা সদস্যরা ক্রমশ সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
প্রসঙ্গত,পরিবেশ- শিক্ষা-পর্যটন সহ বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে প্রতি বছরই দেশের একটি গ্রামকে সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি দেয় কেন্দ্র। ঠিক এক বছর আগে মুর্শিদাবাদেরই নবগ্রাম ব্লকের কিরীটেশ্বরী গ্রামকে স্বীকৃতি দিয়েছিল কেন্দ্র। একান্নপীঠের এক পীঠ রয়েছে এই গ্রামে। তখনও সেই খুশির খবরটি টুইট করে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর পর দু’বছর বাংলার দুটি গ্রামকে সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি দিল কেন্দ্র। আর এই দু’টি গ্রামই মুর্শিদাবাদ জেলায়। স্বভাবতই এদিন বড়নগর গ্রামের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে আনন্দ। বিষয়টি খোদ মুখ্যমন্ত্রী সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তাঁরা অভিনন্দন জানিয়েছেন। জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভা এলাকা সংলগ্ন বরানগর গ্রামটিতে ছড়িয়ে রয়েছে বহু প্রাচীন মন্দির। প্রাচীন বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতি বহন করে চলেছে গ্রামটি। অষ্টাদশ শতকে নাটোর রাজ্যের রানি ভবানীর বহু স্মৃতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই গ্রামের চারপাশে। ভাগীরথী নদী লাগোয়া মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যেই রয়েছে চার বাংলা মন্দির। এই মন্দিরটি ছাড়াও টেরাকোটা মন্দির কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে-ভবানীশ্বর মন্দির, পঞ্চমুখী শিব মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, অযোধ্যা মন্দির, আদ্যা মন্দির, রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির, গঙ্গেশ্বর শিব মন্দির ইত্যাদি। প্রতিটি মন্দিরের গায়ে রয়েছে হিন্দু পুরাণের নানা ঘটনাবর্ণিত ছবি। রানি ভবানী নিজে অষ্টাদশ শতকে এই মন্দিরগুলি নির্মাণ করিয়েছিলেন। গ্রামে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকায়, সম্প্রতি গড়ে উঠেছে হোম স্টে। সেখানে পর্যটকদের রাত্রিবাসের বন্দোবস্তও রয়েছে। এবার সেরা পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি পাওয়ার পরে পর্যটকদের ভিড়ও আগের তুলনায় আরও বাড়বে এবং আর্থ-সামাজিকভাবে আরও এগিয়ে যাবে বড়নগর। এমনটাই মনে করছেন এলাকার মানুষ।