পাটনা, ১৯ সেপ্টেম্বর – জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বিহারের রাজ্য-রাজনীতি।অভিযোগ, বিহারের নওয়াদায় দলিত কলোনিতে জ্বালিয়ে দেওয়া হয় প্রায় শতাধিক বাড়ি, চলে গুলিও। চোখের নিমেষে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় ওই এলাকার ঘরবাড়ি। যদিও পুলিশ সূত্রে জানানো হয় ২১টি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।এই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। কংগ্রেস, আরজেডি, বিএসপি-সহ বিরোধী দলগুলি এই ঘটনার জন্য বিহারের জেডিইউ-বিজেপি জোট সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছে।তাদের অভিযোগ, এনডিএ সরকারের জমানায় বিহারে দলিত এবং আদিবাসীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা বাড়ছে।
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বৃহস্পতিবার বিহার পুলিশের এডিডি আইনশৃঙ্খলা-কে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। দ্রুত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় রাজ্যের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করেছেন নীতীশ কুমার। ঘটনা তদন্তের জন্য সিট গঠন করা হয়েছে।
রাজ্যের নওয়াদার মুফাসসিল থানা এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এই এলাকা দলিত অধ্যুষিত। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, সন্ধ্যা ৭টার দিকে একদল সশস্ত্র দুষ্কৃতী হামলা চালায়। তারা বেছে বেছে দলিতদের বাড়িতেই আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।প্রায় শতাধিক বাড়িতে আগুন লাগানো হয় বলে অভিযোগ। কিন্তু পুলিশের দাবি এ কথা সত্যি নয়।
খবর পেয়ে পুলিশ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তারা ঘটনাস্হলে পৌঁছন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় এলাকায় যান জেলাশাসক। প্রাথমিক তদম্তে জানা গেছে যে জমি নিয়ে বিবাদের জেরেই এই ঘটনা ঘটে। তবে হতাহতের কোনও খবর মেলেনি। তবে ওই দলিত পরিবারগুলির বেশ কিছু গবাদি পশু মারা গেছে বলে অভিযোগ। যদিও এই অভিযোগের কোনও সত্যতা মেলেনি বলে প্রশাসন সূত্রে দাবি। নওয়াদার জেলাশাসক আশুতোষ কুমার ভার্মা জানিয়েছেন, কতগুলি ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে তার সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভিটেমাটিহীন পরিবারগুলির জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।পানীয় জল ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও দেওয়া হয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলিকে। ব্যবস্থা করা হয়েছে অস্থায়ী তাঁবুর। আরও কিছু সন্দেহভাজনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
এই ঘটনার জন্য বিরোধী দলগুলি সরকারকেই নিশানা করে সোচ্চার হয়েছে। এনডিএ সরকার তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে নিশানা করেছে কংগ্রেস এবং আরজেডি। তাঁদের সাফ কথা, বিহারে যে ‘জঙ্গলরাজ’ চলছে এই ঘটনা তার প্রমাণ ।
কংগ্রেসের অভিযোগ, এটি নিছক কোনও দুর্ঘটনা নয়। পরিকল্পনামাফিক এই কাজ করা হয়েছে।
আরজেডি-র বক্তব্য, দলিতদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে এনডিএ জোট। সেই কারণের লোক দিয়ে তাদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এইভাবে সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না তাঁরা। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, সমাজে বিভাজন সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে বিজেপি। বিহারের নীতীশ কুমার সরকারও এই অকাজে জড়িত।
নীতীশ কুমারের দলের এক মুখপাত্র এর প্রতিবাদ করে বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু লাভ হবে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , আশি এবং নব্বইয়ের দশকে বিহারের জেহানাবাদ, ভোজপুর, আওরঙ্গাবাদ, গয়ার মতো নওয়াদাতেও দাপট ছিল তথাকথিত ‘উচ্চবর্ণ’ ভূমিহার জনগোষ্ঠীর।সেই সময়ে বিহারের বিভিন্ন স্থানে দলিতদের উপর হামলা এবং হত্যার ঘটনা ঘটিয়েছিল তারা।