• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

ভয়াবহ বেকারি

২০১৮-১৯ সালে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার ছিল ১৮ শতাংশ, তা ২০১৯-২০ সালে কমে হয়েছে ১৭ শতাংশ, ২০২০-২১ সালে তা কমে হয়েছে ১৩ শতাংশ, ২০২১-২২ সালে তা আরও কমে হয়েছে ১১ শতাংশ। যে হারে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার কমেছে, একই হারে কর্মসংস্থানও কমেছে বলে জানাচ্ছে সিএমআইই।

ভোটমুখী হরিয়ানায় চুক্তিভিত্তিক সাফাইকর্মী পদে চাকরি পেতে আবেদন করেছেন ৬ হাজার স্নাতকোত্তর, ৪০ হাজার স্নাতক এবং প্রায় দেড় লক্ষ দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ যুবক। বিজেপি-শাসিত রাজ্যটিতে বেকারত্বের করুণ ছবি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বহু প্রচারিত ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকারের বেহাল দশাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই তথ্যে। সম্প্রতি হরিয়ানার এক দৈনিক সংবাদপত্র এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

খবরে প্রকাশ, চুক্তিতে সাফাই কর্মী নিয়োগের শর্ত হিসাবে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর, পর্ষদ অফিস, কর্পোরেশন অফিস, পৌরসভা অফিসে ধোয়ামোছার কাজ করতে হবে। এই শর্তেই কাজ করতে দলে দলে শিক্ষিত যুবকরা চাকরির আবেদন করেছেন। দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ উচ্চশিক্ষিত প্রার্থীরা কোথাও কোনও সম্মানজনক চাকরি না পেয়ে বাধ্য হয়ে সাফাইকর্মী পদে আবেদন করেছেন। সাফাই কর্মী নিয়োগে উচ্চশিক্ষতদের ভিড় থেকে চাকরির হাহাকারই প্রমাণিত হচ্ছে। বিজেপি সরকারের ভ্রান্ত আর্থিক নীতিই রাজ্যে রাজ্যে কাজের সঙ্কট তৈরি করেছে।

একের পর এক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে সরকারি স্থায়ী নিয়োগ কমে গিয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় নিয়মিত যে নিয়োগ হতো, তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে কৃষিতেও ভয়াবহ সঙ্কট। সেখানেও কর্মসংস্থান কমেছে। নতুন শিল্প তৈরি হয়নি। ফলে নতুন শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ তলানিতে। এমনকী সেনাবাহিনীতেও এখন মোদিীর কারসাজিতে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্পের ধাক্কা। সেনাবাহিনীতেও এখন চুক্তি নিয়োগ। ফলে সেনাবাহিনীর বড় অংশে স্থায়ী নিয়োগ কমে গিয়েছে। অগত্যা বাধ্য হয়ে যে কোনও ধরনের সরকারি কাজের খবর পেলেই ভিড় জমাচ্ছেন উচ্চশিক্ষিত বেকাররা।

সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি (সিএমআইই) তাদের সমীক্ষা রিপোর্টে জানাচ্ছে, ভারতে বেকারত্বের হার ৭ শতাংশ থেকে বেড়ে এ বছর জুনে ৯ শতাংশ পৌঁছেছে। বেকারত্ব উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে ২৫-৩০ বছর বয়সী যুবকদের ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে বেকারির হার ১০ শতাংশের বেশি। উচ্চশিক্ষিতদের ক্ষেত্রে বেকারত্বের হার আরও বেশি। স্নাতকদের ক্ষেত্রে এই হার হলো ১৭.৩১ শতাংশ। শ্রম মন্ত্রকের ন্যাশনাল অ্যাকাউন্ট স্ট্যাটিসটিক্স (এনএএস) প্রকাশিত পেরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে ২০১৮-১৯ এবং ২০২২-২৩ রিপোর্ট বিশ্লেষণ করে বেকারত্ব বৃদ্ধির এই তথ্য রিপোর্টে পেশ করেছে সিএমআইই।

বেকারত্বের এই ভয়াবহ চিত্র উল্লেখ করে সিএমআইই’র রিপোর্টে জানানো হয়েছে, এহেন উদ্বেগজনক অবস্থাতেও ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে বেকারি মোকাবিলায় বিশেষ গুরুত্ব দেয়নি মোদী সরকার। ফলে এই পর্যায়ে যেটুকু কাজ মিলেছে, তার মানও খুব খারাপ। সেসব কাজে না আছে কোনও সামাজিক সুরক্ষা, না আছে ন্যূনতম বেতন। বেশির ভাগই এক বছরের চুক্তি নিয়োগ। মোদী শাসনে স্থায়ী চাকরি প্রায় উঠেই গিয়েছে।

সিএমআইই জানাচ্ছে, সরকারি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে নিয়োগের হার মোট নিয়োগের ২ শতাংশ থেকে আরও কমে ১.৫ শতাংশে নেমে গিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় বেসরকারিকরণ বেড়ে চলার জন্যই সেখানে নিয়োগের হার প্রতি বছর উল্লেখজনকভাবে কমছে।

কয়েক বছর ধরেই উন্নত প্রযুক্তি এবং শ্রমিকের দক্ষতার অভাবকে দেশে বেকারি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে দেখিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকার নানান প্রকল্প চালু করলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, উন্নত প্রযুক্তির দক্ষ শ্রমিকের কাজ কমছে ভারতে। সিএমআইই সমীক্ষায় জানিয়েছে, বিশেষ দক্ষ শ্রমিকের কাজ হয়ে থাকে প্রশাসনিক, মেডিক্যাল, ম্যানেজারিয়াল ও উন্নত প্রযুক্তির পরিষেবার ক্ষেত্রে। সেসব কাজে দক্ষ শ্রমিকের নিয়োগ বিপুল হারে কমছে। তাতে কর্মসংস্থান হ্রাস পাওয়ার হার ২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২২-২৩ সালে ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৮ শতাংশ হয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, শিল্পে উন্নত কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় দেশের কৃষিতে কাজের চাহিদা বাড়ছে। ২০১৮-১৯ সালেও ৪০ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ২০২২-২৩ সালে কৃষিতে জীবিকা নির্বাহ করা জনসংখ্যার হার বেড়ে হয়েছে ৪৬ শতাংশ। কৃষিতে যদিও আয় খুব কম, কিন্তু বিকল্প শিল্পে উন্নতমানের কাজ না মেলায় কম আয়ের কৃষিকাজেও ভিড় বাড়ছে। কৃষিতে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৬ শতাংশ।

শিল্পের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয়ে থাকে উৎপাদন শিল্পে। কয়েক বছর ধরে মানুষের আয় কমে চাহিদা হ্রাস পাওয়ায় শিল্পে উৎপাদনের হার কমেছে। যেমন ২০১৮-১৯ সালে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার ছিল ১৮ শতাংশ, তা ২০১৯-২০ সালে কমে হয়েছে ১৭ শতাংশ, ২০২০-২১ সালে তা কমে হয়েছে ১৩ শতাংশ, ২০২১-২২ সালে তা আরও কমে হয়েছে ১১ শতাংশ। যে হারে উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার কমেছে, একই হারে কর্মসংস্থানও কমেছে বলে জানাচ্ছে সিএমআইই।

‘অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়ে বেকারি কমেছে’ কেন্দ্রের এই দাবি বাস্তবে ভিত্তিহীন বলেই সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।