‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাব অনুমোদন পেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর দেশে লোকসভা এবং রাজ্যের বিধানসভা ভোট হবে। সেই মর্মে বুধবার ক্যাবিনেটে অনুমোদন পেল ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’ প্রস্তাব। বুধবার ক্যাবিনেট বৈঠকের পর একথা জানান কেন্দ্রিয়মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। এর ফলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটি যে রিপোর্ট পেশ করে, সেই রিপোর্ট দেখেই এদিন সর্বসম্মতিক্রমে এনডিএ সরকারের ক্যাবিনেটে এই প্রস্তাব পাশ হয়েছে বলে অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান।
প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল সরকার। কেন্দ্রের তরফে এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করার জন্য প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি কমিটিও গঠন করা হয় গত সেপ্টেম্বর মাসে। সম্প্রতিই ওই কমিটি রিপোর্ট জমা দেয়। সেই কমিটি একাধিক রাজনৈতিক দল, এবং ভারতের সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়। সেই রিপোর্টার ভিত্তিতেই প্রস্তাব পাশ হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, আসন্ন শীতকালীন অধিবেশনে এই বিল আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। এই বিল পাশ হলে, এবার থেকে দেশে আর আলাদা আলাদা সময়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে না। একইসঙ্গে লোকসভা-বিধানসভা নির্বাচন হবে।
এদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘দুই পর্যায়ে এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হবে। প্রথম দফায় লোকসভা ও বিধানসভা ভোট হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে একসঙ্গে পঞ্চায়েত, পুরসভা, এবং আঞ্চলিক নির্বাচন সম্পন্ন করা হবে। কমিটির প্রস্তাব অনুসারে সাধারণ নির্বাচনের ১০০ দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
যদিও এই নীতির বিরোধিতা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি বলেন, “আমরা এর সঙ্গে সহমত নই। এক দেশ এক নির্বাচন গণতন্ত্রের পক্ষে শুভ নয়। আমাদের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে যখন প্রয়োজন তখনই নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এটা সম্পূর্ণভাবে অবাস্তব ৷” এর পাল্টা অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, “বিরোধীরা চাপ অনুভব করতে শুরু করেছে ৷ কারণ পরামর্শদানের প্রক্রিয়া চলাকালীন এর পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন ৮০ শতাংশ মানুষ। বিশেষ করে তরুণরা এই প্রস্তাবের পক্ষে মত দিয়েছে।”
প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন তৃণমূল সাংসদ ডেরেক’ও ব্রায়েনও । তাঁর দাবি বিজেপি আবার রাজনৈতিক নাটক করছে । এই নীতি প্রণয়নের অভিপ্রায় থাকলে হরিয়ানা ও জম্মু কাশ্মীরের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের নির্বাচন ঘোষণা করা হল না কেন ?
‘ এক দেশ এক নির্বাচন’ নীতিকে স্বাগত জানিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। ঐতিহাসিক এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত।”
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ‘এক দেশ, এক নির্বাচন’-র বিষয়টি উত্থাপন করে আসছেন মোদী। মোদী সরকারের দ্বিতীয় দফায় এক দেশ, এক নির্বাচনের উপরে আরও জোর দেওয়া হয়। দেশে নির্বাচন আয়োজন করতে যে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়, তা হ্রাস করতে এবং নির্বাচন প্রক্রিয়াকে আরও সুষ্ঠ করতে কেন্দ্রের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল।এক দেশ এক নির্বাচনের জন্য সংবিধানে কমপক্ষে ১৮টি পরিবর্তন বা সংশোধন আনা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে রাজ্যের অনুমতিরও প্রয়োজন নেই। কমিটির প্রস্তাব অনুসারে এর বাস্তবায়ন হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যেমন উন্নতি হবে, তেমনই দেশ অর্থনৈতিক দিক থেকেও লাভবান হবে বলে মনা করছে কেন্দ্র। ।