আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর জম্মু-কাশ্মীরে প্রথম দফার ভোট গ্রহণ। বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদী ও উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান উপাদান জম্মু ও কাশ্মীর। দেশে একমাত্র মুসলিম প্রধান রাজ্য জম্মু-কাশ্মীর। প্রতিবেশী মুসিলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সঙ্গে যাবতীয় বিরোধ-সংঘাতের মূলেও জম্মু-কাশ্মীর।
আরএসএস-বিজেপি বাজপেয়ীর জমানায় জম্মু-কাশ্মীরকে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির স্বার্থে যেমন ব্যবহার করা হয়েছে, তেমনই আরও প্রকটভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মোদী জমানায়। হিন্দুত্ববাদীদের রাজনৈতিক কৌশলের অন্যতম অঙ্গ মুসলিম অধ্যুষিত এবং মুসলিম প্রধান এলাকায় প্ররোচনা ও উসকানি দিয়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করা।
তারপর তাকে বিকৃত করে সর্বত্র প্রচার করে ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ জোরদার করা। পাশাপাশি সর্বত্র মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণা ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয় কাশ্মীরকে। এমন একটা ধারণা তৈরি করার জন্য বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া হয় যে, কাশ্মীরের মুসলিমরা দেশবিরোধী ও পাকিস্তোনপন্থী।
তাই সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে সকলের লোকসভা নির্বাচনের আগে পুলওয়ামায় ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের কিনারা আজও হয়নি। মেলেনি বহু গুরুতর প্রশ্নের উত্তর। তারপর পাকিস্তানের বালাকোটে ভারতের বোম নিক্ষেপ। সব মিলিয়ে যুদ্ধের আবহ তুঙ্গে তুলে উসকে দেওয়া হয় দেশপ্রেমের আবেগ। সুফল মিলে যায় ভোটে। তারপর বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসে কেড়ে নেওয়া হয় কাশ্মীরের বিশেষ সাংবিধানিক অধিকার।
জম্মু-কাশ্মীরের কর্তৃত্ব শাসক বিজেপি নিজের হাতে নিতে চায়। গত লোকসভা ভোটের সময় তেমন পরিস্থিতি তৈরি করা যায়নি। তাই পিডিপি-র সঙ্গে জোট করে প্রথমে সরকার দখল করে মোদীর দল বিজেপি। কিন্তু সেই অনৈতিক জোট বেশিদিন টেঁকেনি। সরকার ভেঙে গেলে নতুন করে সরকার গঠনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে সরাসরি দিল্লি থেকে কাশ্মীর শাসন করার ব্যবস্থা হয়।
এরপর ৩৭০ ধারা ও ৩৫(ক) ধারা তুলে দিয়ে মানুষের অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়। গোটা রাজ্যটাকেই কার্যত সেনা ঘেরাটোপে বেঁধে ফেলা হয়। রাজ্যটাকে ভাগ করে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করে কেন্দ্রীয় শাসন জোরদার করা হয়।
এইভাবে কাশ্মীরকে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় এনে হাজারো ছক কষে, কৌশল প্রয়োগ করে বিজেপির জন্য জেতার সুযোগ বাড়ানো হয়। ডি-লিমিটেশন করে হিন্দুপ্রধান জম্মুতে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে আসন সংখ্যা বেশি বাড়ানো হয় যাতে ভোটে জম্মুতে বেশি আসনে সংখ্যা বেশি বাড়ানো হয় যাতে ভোটে জম্মুতে বেশি আসনে সংখ্যা বেশি বাড়ানো হয় যাতে ভোটে জম্মুতে বেশি আসনে জিততে পারে বিজেপি।
মোট ৯০ আসনের মধ্যে কাশ্মীরে ৪৭টি এবং জম্মুতে ৪৩টি আসন রয়েছে। গেরুয়া বাহিনী জানে কাশ্মীরে তাদের পক্ষে বেশি আসন জেতা সম্ভব নয়। তাই জম্মুতে বেশি সংখ্যক আসন জিততে সেখানে আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়।
গত লোকসভা নির্বাচনে দেখা গিয়েছে কাশ্মীরে বিজেপি কোনও বিধানসভা আসনে এগিয়ে নেই। তবে জম্মুতে ২৯টি আসনে এগিয়ে। ফলে ভোটে জিতে কাশ্মীরের দখল নিতে হলে বিধানসভা ভোটে অনেক বেশি আসনে জিততে হবে। অন্যদিকে কাশ্মীরে ছোট ছোট দল ও নির্দলদের মদত দিয়ে জিতিয়ে এনে তাদের সমর্থনে সরকার গড়ার লক্ষ্য নিয়েছে বিজেপি।
বিস্ময়করভাবে সন্ত্রাসবাদীদের অর্থ জোগান দেবার অপরাধে যাকে এনআইেএ পাঁচ বছর আগে গ্রেফতার করে ভয়ঙ্কর কালা কানুন ইউএপিএ-তে সেই বন্দি ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে আচমকা জামিন দেওয়া হয়। রশিদ বন্দি অবস্থায় ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। তাঁর দল আওয়ামি ইত্তেহাদ পার্টির প্রার্থীদের হয়ে প্রচারে নামতে তাঁকে সাহায্য করেছে বিজেপি।
কংগ্রেস-পিডিপি জোটের ভোট কাটার জন্য রশিদকে ব্যবহার করছে বিজেপি। ভোটে জিতলে ওদের সমর্থনে সরকার গড়তে চায় বিজেপি। ক্ষমতা দখলের জন্য জঙ্গিদের সঙ্গে হাত মেলাতেও যে পিছপা নয় বিজেপি, তা আরও একবার প্রমাণিত হলো।