• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

ভারী বৃষ্টির জেরে ডুবে গেল বীরভূমের গোয়ালপাড়া সেতু, ডুবল তারাপীঠ, সতীপীঠ কঙ্কালীতলাও

এমনিতেই গত তিন বছর ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়নি। নদ-নদীগুলি কার্যত শুকিয়ে গিয়েছিল। এবার ভারী বৃষ্টির জেরে প্লাবিত হয়েছে বোলপুর, লাভপুর, শান্তিনিকেতন সহ সংলগ্ন এলাকা।

ভারী বৃষ্টির জেরে বিপর্যস্ত বীরভূম জেলা। গত প্রায় দেড় মাস ধরে এই জেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য বাড়ি। এবার ক্ষতিগ্রস্ত হল গোয়ালপাড়া ব্রিজ। অতি বৃষ্টির জেরে এই ঘটনা। বৃষ্টির জলের চাপে ফুলে ফেঁপে প্লাবিত হয়েছে কোপাই নদী। যার ফলে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে গোয়ালপাড়া ব্রিজ। এই ব্রিজটি বোলপুর ও সিউড়ির মধ্যে সংযোগ রক্ষা করে। জলমগ্ন হওয়ার ফলে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

দ্বারকা নদী ছাপিয়ে দুই কূলে জল উপচে পড়ছে। যার জেরে তারাপীঠের একাধিক লজের নিচের তলায় জল ঢুকে গিয়েছে। সমস্যায় পড়েছেন পর্যটক ও পুণ্যার্থীরা। জলমগ্ন হয়েছে তারাপীঠ মহা শ্মশান সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। শ্মশানের ইলেকট্রিক চুল্লির ট্রান্সফরমার জলের তলায় ডুবে গিয়েছে। বন্ধ হয়েছে শব দাহ প্রক্রিয়া। পাশাপাশি এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিজমি জলমগ্ন হয়েছে। বহু কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

এদিকে এই ঘটনার জেরে নানারকম বিপদের আশঙ্কা করছে প্রশাসন। ব্লক প্রশাসন ও শান্তিনিকেতন থানা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। যাতে কোনও রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যায়।

প্রসঙ্গত ‘কোপাই’ নদীই লাভপুরে ঢোকার আগে ‘কুয়ে’ নদী নামে পরিচিত ৷ এই নদী দিয়েই বোলপুর-শান্তিনিকেতনের সমস্ত বৃষ্টির জল লাভপুরের দিকে প্রবাহিত হয়। এমনিতেই গত তিন বছর ধরে পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়নি। নদ-নদীগুলি কার্যত শুকিয়ে গিয়েছিল। এবার ভারী বৃষ্টির জেরে প্লাবিত হয়েছে বোলপুর, লাভপুর, শান্তিনিকেতন সহ সংলগ্ন এলাকা।

জানা গিয়েছে, গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহেও অতি বৃষ্টির জেরে একই পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল বীরভূম জেলা। জলের তোড়ে ভেঙে যায় লাভপুরের কুয়ে নদীর বাঁধ ৷ হু হু করে জল ঢুকে পড়ে প্লাবিত হয় ৬টিরও বেশি গ্রাম ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় একাধিক বাড়ি ও চাষের জমি ৷ বহু কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়ে যায়। বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের জমি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষক, দিনমজুর থেকে শুরু করে বহু সাধারণ মানুষ। জলের তোড়ে লাভপুরের ঠিবা গ্রামের তালতলার কাছে প্রায় ১০০ মিটার নদী বাঁধ ভেঙে যায়। ফলে জল ঢুকে পড়ে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়। ফলে ঠিবা সহ জয়চন্দ্রপুর, কাঁদরকুলো, হরিপুর, চতুর্ভুজপুর, খাঁপুর সহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পড়ে।

সেসময় আগস্টের ১ তারিখ থেকে সারারাত মুষলধারে টানা বৃষ্টি হয় ৷ বীরভূম জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় বোলপুরে ৷ গত ৪ আগস্ট অবধি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২০২.৬ মিলিমিটার । তারপরেই লাভপুরে বৃষ্টি হয় ২০০ মিলিমিটার । আর এতেই ফুঁসতে থাকে অজয় নদ ও কোপাই নদী ৷ গত মাসেও কোপাই নদী প্লাবিত হয়ে গোয়ালপাড়া ব্রিজ ডুবে গিয়েছিল। সতীপীঠের অন্যতম কংকালীতলা মন্দির সংলগ্ন এলাকা দিয়ে কোপাই নদীর সেই প্লাবনের জল নেমে যায়৷

এই ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর ফের অতি বৃষ্টির জেরে কুয়ে নদীর জল বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। যার জেরে জলমগ্ন হয়েছে কঙ্কালীতলা। প্রায় চার ফুট জলের তলায় মন্দির প্রাঙ্গণ। ফলে এই সতীপীঠে এখন পুজো বন্ধ হয়ে গিয়েছে। স্থানীয় কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েত ও শান্তিনিকেতন থানা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন বোলপুর শ্রীনিকেতন ব্লকের আধিকারিকরা। বিডিও সত্যজিৎ বিশ্বাস ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন।