• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

‘নফরৎ কি দুকান’- জম্মু-কাশ্মীরে নির্বাচনী ভাষণে বিরোধীদের তোপ প্রধানমন্ত্রীর  

দরজায় কড়া নাড়ছে জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন। তার আগে শনিবার নির্বাচনী প্রচারে কার্যত ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান খোলার কথা বলেছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি।  এবার তাঁকে আক্রমণ করে 'নফরত কি দুকান' চালানোর কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ১৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার আগে এটিই ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রথম নির্বাচনী সমাবেশ। ৪২ বছর পর প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী পা রাখলেন ডোডায়।

দরজায় কড়া নাড়ছে জম্মু-কাশ্মীরের নির্বাচন। তার আগে শনিবার নির্বাচনী প্রচারে কার্যত ঝড় তুললেন প্রধানমন্ত্রী মোদি । ঘৃণার বাজারে ভালোবাসার দোকান খোলার কথা বলেছিলেন লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি।  এবার তাঁকে আক্রমণ করে ‘নফরত কি দুকান’ চালানোর কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ্য, ১৮ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম দফার আগে এটিই ছিল প্রধানমন্ত্রীর প্রথম নির্বাচনী সমাবেশ। ৪২ বছর পর প্রথম কোনও প্রধানমন্ত্রী পা রাখলেন ডোডায়। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভা জম্মু-কাশ্মীরে ভোটের প্রচারে আসলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিন প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে উঠে এল সন্ত্রাসবাদ থেকে ৩৭০ ধারা বাতিলের মত একাধিক বিষয়। সেই সঙ্গে কংগ্রেস ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন মোদি। 

ডোডা স্টেডিয়ামে শনিবার আয়োজিত ভোটপ্রচারে এসে মোদি বলেন, আপনাদের ও দেশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে আমি এই ভালোবাসা ও আশীর্বাদের মূল্য রাখব। তিনি কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলি এবং মূলত কংগ্রেসকে এই উপত্যকার দুর্দশার জন্য দায়ী করেন। প্রধানমন্ত্রী এদিন তাঁর ভাষণে বলেন,  “কংগ্রেস, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিডিপি জম্মু-কাশ্মীরকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। এই তিনটি দল মিলে যেভাবে উপত্যকার মানুষের প্রতি অবিচার করেছে তা পাপের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।আপনি এবং আমি মিলে একটি নিরাপদ কাশ্মীর গড়ে তুলব, এটাই মোদির গ্যারান্টি”।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই  কাশ্মীরকে বাইরের শত্রুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। স্বজনপোষণ হয়েছে , যে দলগুলিকে আপনারা ভরসা করেছেন, তারা আপনাদের সন্তান-ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেনি। যুবসমাজকে জঙ্গিমনোভাবাপন্ন করে তুলেছে। কাশ্মীরে নতুন কেউ আসার সুযোগ পায়নি।

সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে মোদি এদিন বলেন, “জম্মু ও কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ তার ‘শেষ নিঃশ্বাস’ নিচ্ছে।  প্রধানমন্ত্রী এদিন  বলেন, “আমরা ২০১৪ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরেই জম্মু-কাশ্মীরের উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করেছি”।  বিজেপি কাশ্মীরি পণ্ডিতদের পক্ষে আওয়াজ তুলেছে এবং তাদের সমর্থন করেছে। তিনি আরও বলেন, গত ১০ বছরে জম্মু ও কাশ্মীরে যে পরিবর্তন এসেছে তা স্বপ্নের মত। যে পাথরগুলো আগে পুলিশ ও বাহিনীকে লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হত তা দিয়েই এখন   নতুন জম্মু ও কাশ্মীর তৈরি হচ্ছে”। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এবং আপনারা একসঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরকে দেশের একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ অংশে পরিণত করব।”

ডোডার জনসভায় মোদি বলেন, আমাদের সরকার চায় কাশ্মীরের প্রতিটি শিশু সুশিক্ষা পাক। ওরা শিশুদের শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে চেয়েছিল। তাই নতুন স্কুল-কলেজ খুলতে দেয়নি। উপরে উঠতে আপনাদের সিঁড়ির মতো ব্যবহার করেছে। গত চার বছরে আমরা ভূস্বর্গে অনেক স্কুল-কলেজ খুলেছি। মোদি আরও বলেন, এখানে বিজেপি জমানায় নতুন নতুন চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।পর্যটকদের জন্য জঙ্গিমুক্ত কাশ্মীর গড়ে তোলাই বিজেপির একমাত্র লক্ষ্য। 

তিনি আরও বলেন, ‘জঙ্গি কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ায়  কাশ্মীরে চলচ্চিত্রের শ্যুটিং বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আমরা এখন নতুন নীতি নিয়েছি যাতে দেশ-বিদেশের ছবির শ্যুটিং এখানে ফের শুরু হতে পারে। এজন্য নতুন চলচ্চিত্র নীতিও করা হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর আবার চলচ্চিত্র ও বিশ্বে আধিপত্য বিস্তার করবে।’

প্রধানমন্ত্রী এদিন জোরের সঙ্গে বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরকে পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা দেওয়ার কাজটি কেবল বিজেপি সরকারই করবে। কিন্তু এমন লোকদের থেকে সাবধান থাকতে হবে, যারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এখানকার মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে চাইছে।  তারাই জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা ফিরিয়ে আনতে চায়। 

যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও এদিন নতুন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন মোদি। তিনি বলেন, প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ কাশ্মীর ঘুরতে আসেন। কেন্দ্রীয় সরকারও চাইছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। নতুন সেতু এবং উড়ালপুল গড়ে তোলা হচ্ছে । খুব শীঘ্রই দিল্লি থেকে কাশ্মীর ট্রেন চালু হয়ে যাবে।  

১৯৭৭ সালের পর এই প্রথম সেখানে কোনও প্রধানমন্ত্রী জনসভা করলেন। শেষবার এখানে জনসভা করেছিলেন ইন্দিরা গান্ধি । ডোডার সভা শেষে প্রধানমন্ত্রী যান হরিয়ানায়। সেখানে কুরুক্ষেত্রে তাঁর নির্বাচনী  জনসভায় অংশ নেন ।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী সফরের আগেই জম্মু-কাশ্মীরে হামলা চালায় জঙ্গিরা। শনিবার ভোরে জম্মুর কিস্তওয়ারে জঙ্গিদের গুলিতে দুইজন  সেনা নিহত হন। অন্য দিকে, কাশ্মীর উপত্যকার বারামুলায় সেনা ও পুলিশের যৌথবাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয় তিন জঙ্গি।

সর্বোপরি বলা যায়, জম্মু-কাশ্মীরে ভোট হতে চলেছে দশ বছর পর। ২০১৯ থেকে সেখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি আছে। উপত্যকার মানুষ কেন্দ্রীয় সরকারের উপর অসন্তুষ্ট । তার উপর বিজেপি সেখানে স্থানীয় কোনও প্রথমসারির দলকে পাশে পায়নি। ফলে আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি উপত্যকায় জমি দখলের লড়াইয়ে কতটা সফল তার উত্তর মিলবে ভোটের ফলাফলের উপর।