বীরভূমের রামপুরহাট সংলগ্ন তারাপীঠ মা তারার মাহাত্ম্য এবং সেইসঙ্গে মা তারার শিষ্য সাধক বামাক্ষ্যাপার বহুল প্রচলিত কাহিনীকে কেন্দ্র করে তারাপীঠ শ্মশানক্ষেত্র আজ একটি আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া দ্বারকা নদের পথে একসময় যে নৌবাণিজ্য হতো, তা নিয়েও বহু কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তারাপীঠে প্রতিদিন দেশ-বিদেশের বহু দর্শনার্থী ও পর্যটক আসা-যাওয়া করেন। বিশেষ করে কৌশিকী অমাবস্যা তিথিতে লক্ষ লক্ষ পুণ্যার্থীর আগমন ঘিরে শ্মশানভূমি তারাপীঠ বর্তমানে গমগম করে।
কিন্তু যে সব পুণ্যার্থী তারাপীঠে আসেন, তাঁরা দ্বারকা নদে স্নান করে অতীতে মা তারার মন্দিরে গিয়ে মায়ের চরণে পুজো নিবেদন করলেও, বর্তমানে তা আর সেভাবে সম্ভব হচ্ছে না। তার প্রধান কারণ হলো, ক্রমশই নাব্যতা হারানো তারাপীঠে দ্বারকা নদের দূষণ এই প্রতিবন্ধকতা তৈরী করেছে। এবার কৌশিকী অমাবস্যা থেকে এখানে সন্ধ্যারতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলার মধ্যে একমাত্র এখানকার ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের কাজ শেষ হওয়া সত্বেও, কেন এখনও তা চালু করা গেল না, তা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ যেমন রয়েছে তেমনি, তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর ও অন্য কয়েকটি দপ্তরের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাবে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মীয়মান এখানকার সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চালু করা যাচ্ছে না।
তারাপীঠের পাশ দিয়ে প্রবাহিত দ্বারকা নদে সেখানকার হোটেল, লজ, রেস্তরাঁর প্লাস্টিক, থার্মোকলের থালাবাটি থেকে শুরু করে অন্যান্য আবর্জনা এবং সব্জির খোসা ফেলার ফলে এখানে নদের নাব্যতা কমে যাওয়া এবং দূষণ ছড়ানোর অভিযোগ এনে জাতীয় পরিবেশ আদালতে একটি মামলা হলে আদালত পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি, এখানে বেআইনীভাবে গজিয়ে ওঠা হোটেল, রেস্তরাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। সেই নির্দেশের পরই সেচ দপ্তর এব্যাপারে পদক্ষেপ নেয় এবং তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ এখানকার শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি নির্মাণ-সহ নদের দু’ধার সাজিয়ে দেওয়া হয়। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর ২০২০ সালে তরল বর্জ্য পরিশোধনের জন্য ৩৪ কোটি টাকা ব্যয় করে সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট গড়ে তোলার কাজ শুরু করে তা ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শেষ করে দেয়।
তারাপীঠজুড়ে মাটির নীচে পাইপ বসানো এবং বহু সংখ্যায় ম্যানহোল বসানোর কাজ-সহ ল্যাবরেটরির কাজ করে দেওয়া হয়। যেহেতু জলদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী পরিশোধন না করে কোনও নদ-নদী বা জলাশয়ে তরল বর্জ্য ফেলা আইনবিরোধী তাই এই কাজ করা হয়। তারপর থেকেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তর বলছে, এবার দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ সংরক্ষণের কাজটা এবং হোটেল, লজ, রেস্তোরাঁর জল সরাসরি নালায় এনে ফেলার কাজটা তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদকেই করতে হবে। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে তারাপীঠ- রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদ জানিয়ে দিয়েছে, জনস্বাস্থ্য কারগরি দপ্তর কোথায় কী কাজ করেছে, তার ম্যাপ তাঁদেরকে দেওয়াই হয়নি। তাই তাঁরা এব্যাপারে কোনও দায়িত্বই নিতে পারবেন না। আর এই চাপান-উতরের ফাঁদে পড়ে বেড়ে চলা দূষণে হাসফাস করছে তীর্থ ও পর্যটনক্ষেত্র তারাপীঠ ।