জুনিয়র চিকিৎসকদের টানা কর্মবিরতিতে বেহাল দশা রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার। কোন্নগর, হরিপাল, দেগঙ্গা, বালুরঘাটের পর এবার রানাঘাটের এক যুবকের মৃত্যু হলো বিনা চিকিৎসায়। অন্যদিকে, বছর পাঁচেকের মুসকান খাতুনের চিকিৎসার জন্য কোচবিহার থেকে রেফার করা হয়েছে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। সেই মতো তার বাবা-মা উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় এসে মুসকানকে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি করালেও মিলছে না অত্যাবশ্যকীয় চিকিৎসা পরিষেবা। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মুসকানের হার্টে ফুটো রয়েছে। অপারেশনের জন্যই কোচবিহার হাসপাতাল থেকে এনআরএসে রেফার করা হয়েছিল তাকে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কবে হবে পাঁচ বছরের মুসকানের হার্ট অপারেশন, তা নিয়ে এখনও কিছুই জানানো হয়নি হাসপাতালের তরফ থেকে।
আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ফের কাতর আর্জি জানিয়ে তৃণমূল এ প্রসঙ্গে সমাজমাধ্যমে লিখেছে, ‘ডাক্তারদের কর্মবিরতির জের! ৫ বছরের শিশুর হার্টের অপারেশন কবে হবে কেউ জানেন না। এনআরএসের বাইরে অপারেশনের তারিখের অপেক্ষায় তার পরিবার। মাননীয় চিকিৎসকগণ, আপনাদের আন্দোলনের কাছে কি ৫ বছরের শিশুর জীবনেরও দাম নেই? এই অপ্রয়োজনীয় অচলাবস্থার জন্য একটি শিশুর ভবিষ্যত বিপন্ন হতে পারে না!’ রানাঘাটের আইসমালির ২৩ বছরের যুবকের মৃত্যু হয়েছে আরজি কর হাসপাতালে। এই ঘটনার বিবরণ দিয়েও চিকিৎসকদের গাফিলতির দিকে আঙ্গুল তুলেছে শাসকদল। শুক্রবার এ প্রসঙ্গে তৃণমূল লিখেছে, ‘টানা তিনদিন রাজ্য সরকার এই দুর্ভাগ্যজনক অচলাবস্থার অবসান করার চেষ্টা করেছে। তবুও, এই প্রচেষ্টাগুলি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। ফলাফল? আবারও এক অসহায় যুবকের প্রাণ গেল আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসার গাফিলতিতে। আর কতদিন এইভাবে সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকবে? আমরা বিনম্রভাবে ডাক্তারদের কাজে ফেরার জন্য অনুরোধ করেই যাচ্ছি। দয়া করে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য দিন’।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার নবান্নে পৌঁছেও কেবল লাইভস্ট্রিমিং-এর দাবি না মানায় আলোচনায় বসতে চাননি জুনিয়র চিকিৎসকগণ। বৃহস্পতিতে নবান্নে দু’ঘন্টা অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। প্রশাসনিক স্তর থেকে জুনিয়র চিকিৎসক সংগঠনের উদ্দেশ্যে একাধিক ইমেল করা হলেও পরিস্থিতি এখনও বেগতিক। প্রতিদিনই বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন এক থেকে দু’জন। এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের গাফিলতির দিকে আঙ্গুল তুলেছে তৃণমূল।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার জ্বর নিয়েই রানাঘাটের আইসমালির বাসিন্দা নন্দ বিশ্বাসকে ভর্তি করানো হয়েছিল আরজি কর হাসপাতালে। মৃত যুবকের পরিবারের অভিযোগ, হাসপাতালে কোনও পরিষেবা দেওয়া হয়নি। শুক্রবার সকাল থেকে অবস্থার অবনতি ঘটে, বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকার পর অবশেষে মৃত্যু হয় বছর ২৩-এর নন্দর। মৃতের বাবার অভিযোগ, আরজি কর হাসপাতালের চিকিৎসকরাই তাঁকে প্রশ্ন করেছেন, ‘ঝামেলার জায়গায় রোগীকে কেন এনেছেন?’ অন্যদিকে, পাঁচ বছরের শিশু মুসকানের বাবা আজিবুল মিঞার অভিযোগ, ‘বুধবার এনআরএস হাসপাতালে মেয়েকে ভর্তি করানো হয়েছে। কিছু টেস্ট হলেও চিকিৎসকরা অপারেশনের নির্দিষ্ট তারিখ দিচ্ছেন না।’ এই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে ‘জীবন মূল্য’ তুলে ধরে জুনিয়র চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আর্জি শাসকদলের।