• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

পদত্যাগ করতেও রাজি, ওরা তিলোত্তমার বিচার চায় না, চেয়ার চায়: মমতা

সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে। আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা চলতে পারে। চিঠিতে আমরা লিখেছিলাম, সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব না। ওরা যে কোনও ইস্যু তুলতে পারতেন।

ভেস্তে গেল বৃহস্পতিবারের বৈঠক। পরপর তিন দিন জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য অপেক্ষা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁরা আসেননি বলে এদিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে জানান মমতা। বৃহস্পতিবারও দু’ঘণ্টার বেশি সময় তিনি নবান্নে বসেছিলেন বলে দাবি করেন। কিন্তু নবান্নের গেটের সামনে এসেও সভাঘরে জুনিয়র ডাক্তাররা না ঢোকায় কোনও বৈঠক হয়নি। এরপর সাংবাদিক বৈঠক করে মমতা বলেন, পদত্যাগ করতেও রাজি আছি। কিন্তু কেউ বিচার চায় না। চায় চেয়ার। পাল্টা সাংবাদিক বৈঠক করে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, ‘চেয়ারের জন্য নয়, চেয়ারে ভরসা রেখেই আমরা আলোচনার জন্য এসেছিলাম।’

মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বৈঠক নিয়ে জট। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যসচিব প্রথম বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের ইমেল করেছিলেন। এরপর একাধিক দাবি জানিয়ে পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীকে ইমেল পাঠান আন্দোলনকারীরা। বুধবার সারাদিন নবান্ন ও জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে ইমেল আদান প্রদান হয়। বৈঠকে বসার জন্য আন্দোলনকারীদের তরফে ৪টি শর্তও দেওয়া হয়। কিন্তু অপরদিকে খোলা মনে আলোচনা করতে চেয়ে বারবার রাজ্যের তরফে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ফের মুখ্যসচিব জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে আহ্বান জানান। তবে শর্তপূরণ না হলে বৈঠকে না বসার সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন জুনিয়র ডাক্তাররা। শর্তগুলি ছিল, প্রথমত, এই বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধিদল থাকবে। দ্বিতীয়ত, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বৈঠকের লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, জুনিয়র ডাক্তাররা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন সেই দাবিগুলির উপরই বৈঠকে আলোচনা করতে হবে। চতুর্থত, নবান্নের এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে। এরপর মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ সাংবাদিক বৈঠক করে বৃহস্পতিবার জানান, বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হবে না। ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। রাজ্যের তরফে ১৫ জনকে বৈঠকে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু ৩০ জনের বেশি জুনিয়র ডাক্তারদের একটি দল বৈঠকে যোগ দিতে নবান্নে এসেছিলেন। এতজনকে বৈঠকে উপস্থিত থাকার অনুমতিও রাজ্যের তরফে দেওয়া হয়। কিন্তু লাইভ সম্প্রচারের শর্ত রাজ্য মানেনি। অপরদিকে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার না হলে বৈঠকে বসবেন না বলে জানিয়ে দেন আন্দোলনকারীরা। মূলতঃ এই কারণেই ভেস্তে গেল বৈঠক। সভাঘরের সামনেই তাঁরা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকেন।

২ ঘণ্টা ১০ মিনিট জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য নবান্নের সভাঘরে অপেক্ষা করার পর সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখান থেকে তিনি জানান, মামলাটি বিচারাধীন। এই নিয়ে বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার হতে পারে না। তিনি বলেন, ‘সরাসরি সম্প্রচারে আমাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে চলছে। আমরা এমন কিছু করতে চাইনি, যাতে অচলাবস্থা চলতে পারে। চিঠিতে আমরা লিখেছিলাম, সরাসরি সম্প্রচার করতে পারব না। ওরা যে কোনও ইস্যু তুলতে পারতেন। সেটা ওঁরা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানাতে পারতেন। আমরা যুগ্ম ভাবেও সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারতাম।’ মমতা আরও জানান, তিনি ঠিক করেছিলেন, নির্যাতিতার বিষয়ে বৈঠকে শোকপ্রস্তাব নিতেন। পর পর তিন দিন জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য অপেক্ষা করার কথা জানিয়ে মমতাকে এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করতেও দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদেরও কাজ আছে। প্রতিদিন এ ভাবে অপেক্ষা করানো হচ্ছে।’

চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ২৭ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এদিন সাংবাদিক বৈঠকে এই নিয়ে সরব হন মমতা। তিনি বলেন, ‘যে কোনও মৃত্যুই মর্মান্তিক। ইতিমধ্যেই ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩২ দিন হয়ে গেল অনেকেই কাজ করছেন না। সাত লক্ষ মানুষ পরিষেবা পাননি। যে কোনও মৃত্যু মর্মান্তিক। কিন্তু এত মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এর থেকে লজ্জার কী হতে পারে?’ চিকিৎসা না পেয়ে বহু মানুষ মারা যাচ্ছেন দেখে তাঁর হৃদয় কাঁদছে বলেও এদিন জানান মমতা। ৩ দিনেও এই জট কাটাতে না পেরে সাধারণ মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। পাশাপাশি এদিন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কয়েকজনের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেকে আগ্রহী ছিলেন কিন্তু বাইরে থেকে নির্দেশ আসছিল। দু’তিন জন রাজি হয়নি। আমি মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। ডাক্তারদের অনুরোধ করছি, কাজে ফিরুন।’ পাশাপাশি তাঁকে বিভিন্নভাবে অসম্মান করা হয়েছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন তিনি।

এদিন মমতা আরও বলেন, ‘যারা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমার সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রং বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।’ এরপরও জুনিয়র ডাক্তাররা যদি বৈঠক করতে চান তাহলে মমতা আর সেখানে থাকবেন না বলে জানিয়ে দেন। তবে মুখ্যসচিব ও নবান্নের অন্যান্য আধিকারিকরা যেন আন্দোলনকারীদের কথা শোনেন, এই নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে হতাশ হয়ে পাল্টা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের কথায়, ‘চেয়ারের জন্য নয়, চেয়ারে ভরসা রেখেই আমরা আলোচনার জন্য এসেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে আমরা হতাশ। আমরা এখনও আশা রাখছি। এই চেয়ারের প্রতি আমাদের ভরসা এখনও আছে। তাই আমরা অপেক্ষা করছি এখনও।’ এরপর ৫ দাবিতে অনড় থেকে ফের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার কথা জানান আন্দোলনকারীরা। তাঁরা বলেন, ‘আমাদের অবস্থান চলবে।’