• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

নবান্নে বৈঠক নিয়ে কাটল না জট, জুনিয়র ডাক্তারদের শর্ততে রাজনীতি দেখছেন চন্দ্রিমা

মুখ্যসচিবের পাঠানো এই মেইলটি জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে আসার পর তাঁরা একটি পাল্টা মেইল পাঠান।  মনোজ পন্থকে পাঠানো এই মেইলে আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়, তাঁরা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি আছে।

সারাদিন ধরে নবান্ন আর জুনিয়র ডাক্তারদের মেল আদান প্রদানের পরও মিলল না সমাধান সূত্র। মঙ্গলবারের পর বুধবার ফের আলোচনায় বসতে চেয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের নবান্নে আহ্বান জানানো হয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীদের তরফে বৈঠকে বসার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতি সহ ৪টি শর্ত রাখা হয়। এই বার্তা নবান্নে পৌঁছানোর পরই নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করেন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার। সারাদিনের ঘটনাপ্রবাহের পিছনে রাজনীতি লুকিয়ে আছে বলেই মনে করেন চন্দ্রিমা। কোনও শর্ত রেখে আলোচনা করা যায় না বলেই এদিন সাংবাদিক বৈঠকে জানান মুখ্যসচিব।  এপ্রসঙ্গে পাল্টা প্রতিক্রিয়া আসে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে। চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ বলেন, ‘এই আন্দোলনে কোনও রাজনীতির রঙ নেই। যে মুহূর্তে আমাদের দাবি মেনে নেওয়া হবে, সেই মুহূর্তে আমরা আলোচনায় যোগ দেব।’

বুধবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘দুপুরে মুখ্যসচিব মেল করে নবান্নে আসার জন্য আহ্বান জানালেন ১২-১৫ জনকে। কিন্তু সেই মেলের উত্তর এল প্রায় দু’ঘণ্টা পরে। সেখানে কিছু শর্ত দেওয়া হল। আমি স্পষ্ট করে দিতে চাই, রাজ্য সরকার খোলা মনে বসতে চাইছে। কোনও শর্ত সাপেক্ষে নয়। খোলা মন এবং শর্ত— দু’টি একসঙ্গে চলতে পারে না। অর্থাৎ, খোলা মন নেই। এর পিছনে রাজনীতির খেলা আছে। তাই এতটা সময় লাগছে এত কিছু চিন্তা ভাবনা করতে। তাঁরা খোলা মনে আলোচনা চান না, তাই এই শর্তগুলি আরোপ করা হচ্ছে।’ বুধবার ভোর পৌনে ৪টে নাগাদ জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে পাঠানো ইমেল নিয়েও প্রশ্ন তোলেন চন্দ্রিমা। তাঁর প্রশ্ন, ‘ভোর ৩টে ৪৫মিনিটে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে এই ব্যাপারে মেল আসা কি খুব স্বাভাবিক?’ পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তারদের মেইল পেয়ে আশাহত হয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তাঁরা যে আজ আন্দোলনকারীদের জন্য নবান্নে অপেক্ষা করছিলেন সেই কথাও জানান।  কোনও শর্ত রেখে নয়, খোলা মন নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানানো হয় জুনিয়র ডাক্তারদের।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আলোচনায় বসতে চেয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের মেইল পাঠিয়েছিলেন স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। কিন্তু চিকিৎসকদের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া না পেয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মঙ্গলবার নবান্ন ছেড়ে বেরিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই কথা জুনিয়র ডাক্তাররা জানতেনই না বলে এদিন পাল্টা মেইল করে দাবি করেছেন তাঁরা। বুধবার ভোর পৌনে ৪টে নাগাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠানো একটি মেইলে এই দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। তাঁরা জানান, মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে চান একথা তাঁরা স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীর সাংবাদিক বৈঠক থেকে জানতে পেরেছেন।

বুধবার ভোরে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠানো এই মেইলে ৫টি দাবির কথা উল্লেখ করা হয়েছিল।  প্রথমত, নির্যাতিতার প্রতি অপরাধের দ্রুত বিচার করতে হবে। যদিও এটির সঙ্গে রাজ্য সরকারের কোনও যোগ নেই, সে কথাও উল্লেখ করেছেন আন্দোলনকারীরা । দ্বিতীয়ত, প্রমাণ নষ্টে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ থাকার অভিযোগে সন্দীপ ঘোষকে নিলম্বিত করে, তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যসচিব, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য অধিকর্তার অপসারণ করতে হবে। তৃতীয়ত, বিনীত গোয়েলকে পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরাতে হবে। ডিসি নর্থ এবং ডিসি সেন্ট্রালের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে পদক্ষেপ করতে হবে। চতুর্থত, হাসপাতালগুলিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। পঞ্চম দাবি, হাসপাতালের বিভিন্ন কমিটিতে পড়ুয়া, জুনিয়র ডাক্তার ও অন্য ডাক্তারদের গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

এরপর নবান্নের তরফে জুনিয়র ডাক্তারদের আরও একটি বার্তা পাঠানো হয়। এই মেইলটি পাঠান মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। তিনি ফের জুনিয়র ডাক্তারদের  আলোচনায় বসার আহ্বান জানান।  আলোচনার জন্য বুধবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ আন্দোলনকারীদের নবান্নে ডাকা হয়েছিল। জুনিয়র ডাক্তরদের ১২–১৫ জনের প্রতিনিধি দল নবান্নে যেতে পারবে বলে মেইলে উল্লেখ করা হয়েছিল। এই মেইলে জুনিয়র ডাক্তারদের মনে করানো হয় যে, ৩২ দিন ধরে সাধারণ মানুষ সঠিকভাবে পরিষেবা পাচ্ছেন না। পাশাপাশি মঙ্গলবার বিকেল ৫ টার মধ্যে কাজে যোগ দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথাও স্মরণ করানো হয়।

মুখ্যসচিবের পাঠানো এই মেইলটি জুনিয়র ডাক্তারদের কাছে আসার পর তাঁরা একটি পাল্টা মেইল পাঠান।  মনোজ পন্থকে পাঠানো এই মেইলে আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়, তাঁরা সরকারের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি আছে। কিন্তু তাঁদের ৪টি শর্ত রয়েছে। প্রথমত , এই বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে অন্তত ৩০ জনের প্রতিনিধি দল থাকবে। দ্বিতীয়ত, স্বচ্ছতা বজায় রাখতে বৈঠকের লাইভ টেলিকাস্ট করতে হবে। তৃতীয়ত, জুনিয়র ডাক্তাররা যে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছিলেন, সেই দাবিগুলির উপরই বৈঠকে আলোচনা করতে হবে। চতুর্থত, নবান্নের এই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীকে উপস্থিত থাকতে হবে।

বৈঠকে বসার জন্য নিজেদের শর্তের কথা মেইল করে জানানোর পর ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের তরফে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ। তিনি জানান, আন্দোলনটি সব মেডিক্যাল কলেজকে নিয়েই শুরু হয়েছিল। তাই জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের ৩০ জন প্রতিনিধি বৈঠকে যাবেন। তাঁর কথায়, ‘যে বৈঠকের প্রস্তাব এসেছে, সেই বৈঠকে গেলে আমরা কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হব না। আমরা আবার অবস্থান বিক্ষোভ মঞ্চে ফিরব। যাঁরা এখানে অপেক্ষা করে আছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা আমাদের কর্মবিরতি এবং অবস্থান বিক্ষোভ প্রসঙ্গে মতামত পরবর্তী সময়ে জানাব।’

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ৩ টে থেকে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থানে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জুনিয়র ডাক্তারদের মেইল করে আলোচনার জন্য আহ্বান জানান স্বাস্থ্যসচিব। কিন্তু সেই মেইলের ভাষা ‘অপমানকর’ বলে দাবি করেছিলেন আন্দোলনকারীরা। ওই দিনই স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য অপেক্ষা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নবান্ন থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। এরপর আন্দোলকারীদের তরফে পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে একটি মেইল পাঠানো হয়। মঙ্গলবার দুপুর থেকে আন্দোলনে বসে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য জল, খাবারের ব্যবস্থা করেছেন আন্দোলন সমর্থনকারী সাধারণ মানুষ। আন্দোলনকারীদের জন্য অর্ডার করা হচ্ছে পানীয় জল, খাবার। মিনিটে মিনিটে ডেলিভারি পার্সনরা এসে দিয়ে যাচ্ছেন প্রয়োজনীয় জিনিস। পাঠানো হচ্ছে ত্রিপলও। অর্ডার করা ব্যক্তির নাম জানা নেই। তাঁদের শুধু বলে দেওয়া হচ্ছে, ‘অবস্থানে বসে থাকা জুনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে দেবেন’।