পুড়ছে, জ্বলছে, ধুঁকছে পৃথিবী। পরিবেশ দূষণ বাড়ছে দিন দিন। এই ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে সরব হয়েছেন পরিবেশ বিজ্ঞানীরা। কিন্তু এই নিয়ে কি ভাবছেন সাধারণ মানুষ? পুজোর মরশুমে পরিবেশ নিয়ে পুজো উদ্যোক্তাদের ভাবনা এবং ভাবনার উপস্থাপনের মান যাচাই করতে দৈনিক স্টেটসম্যান এবং জি অ্যান্ড জি প্রােডাকশন দ্য ইভেন্ট প্ল্যানার-এর যৌথ উদ্যোগ ‘শারদ সম্মান ২০১৯’।
এই প্রতিযােগিতায় হাওড়া, হুগলি ও উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা মিলিয়ে সেরা পরিবেশ বান্ধব পুজো পাবে রুপাের মুকুট সম্মান। এছাড়াও বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে পুরস্কার।
বৃহস্পতিবার হাওড়া জেলার একাধিক পুজো ঘুরে দেখেন প্রতিযােগিতার বিচারকরা। ‘শারদ সম্মান ২০১৯’ প্রতিযােগিতার বিচারকের ভূমিকায় ছিলেন অভিনেত্রী দেবলীনা কুমার, বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রাই এবং দ্য স্টেটসম্যান গ্রুপের রিজিওনাল বিজ্ঞাপন ম্যানেজার (পূর্ব) সৌরিৎ রায়।
সবুজ নিয়ে বার্তা দিচ্ছে এমন অভিনব পুজো মণ্ডপগুলিকে একাধিক নিরিখে যাচাই করেছেন বিচারকেরা। এদিন তাদের হাতে একটি করে চারাগাছ তুলে দেন ইছাপুর সংঘ মিত্র ক্লাবের উদ্যোক্তারা। চলতি বছর এই ক্লাবের থিম ‘সবুজ সংকট’ নিয়েই। উদ্যোক্তারা জানান, প্লাস্টিকের ব্যবহার, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন সহ একাধিক কার্যকলাপের ফলে পরিবেশ ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তাই সাধারণ মানুষকে পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হওয়ার বার্তাই চলতি বছরের থিমের মাধ্যমে দিতে চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
হাওড়ার পুজো প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দেবলীনা কুমার জানান, ২ বছর আগে পুজোর সময় হাওড়াতে এসেছিলেন তিনি। হাওড়ার পুজো উদ্যোক্তারা পরিবেশ সংক্রান্ত থিম নিয়ে যেভাবে চিন্তাভাবনা করে তা পরিবেশন করেছেন, তাতে কার্যত খুশি এই বিচারক। দেবলীনা আরও বলেন, প্রত্যেকটি পুজো কমিটির উদ্যোক্তাই নিজেদের মতাে করে একটি বার্তা দিতে চেয়েছেন, যা প্রশংসনীয়।
হাওড়ার ব্যাঁটরা মহিলা সংঘ পুজো মণ্ডপে ঢুকতে গিয়ে প্রথমেই একটু থমকেছিলেন বিচারকরা প্রত্যেকেই। বাইরের নগর জীবনের লেশমাত্র নেই মণ্ডপের ভেতরে। মণ্ডপসজ্জা এবং প্রতিমা মূর্তির মধ্য দিয়ে পুরুলিয়ার নবান্ন উৎসব-এর উপস্থাপন ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছেন শিল্পী মলয় শুভময়। তিনি জানান, চার ধরনের মাটি এবং খড় দিয়ে পুজো মণ্ডপটি তৈরি করা হয়েছে। প্রতিমা মূর্তির ক্ষেত্রে বিশেষ চমক অষ্টধাতুর সংমিশ্রণ। এই পুজো মণ্ডপের উপস্থাপনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিচারক রাই জানান, ভাবনাটা একেবারেই অভিনব। মণ্ডপের মধ্যে সোঁদা মাটির গন্ধ, শিল্পীর উপস্থাপন, সবকিছুই মন ছুঁয়ে যাওয়ার মতাে।
এদিন হাওড়ার ষষ্ঠীতলা বারােয়ারি, ইছাপুর শিবাজী সংঘ, ইছাপুর সংঘমিত্র, কামারডাঙা শীতলাতলা বারােয়ারি, হাওড়া মিলনী সহ একাধিক পুজো মণ্ডপ ঘুরে দেখেন বিচারকরা।
দৈনিক স্টেটসম্যান এবং জি অ্যান্ড জি প্রােডাকশন দ্য ইভেন্ট প্ল্যানার আয়ােজিত ‘শারদ সম্মান ২০১৯’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে জি অ্যান্ড জি প্রােডাকশনের কর্ণধার সুদীপ ঘােষ এবং অপু ঘােষ জানান, শিল্পীর নিখুঁত উপস্থাপন তাে বটেই একই সঙ্গে শিল্পের উপস্থাপনের পেছনে থাকা বার্তার সামাজিক গুরুত্ব এই প্রতিযােগিতার অন্যতম মাপকাঠি।
বিচারকের ভূমিকায় থাকা দেবলীনা কুমার জানান, হাওড়া জেলার পুজো উদ্যোক্তারা যেভাবে মণ্ডপ সজ্জা থেকে শুরু করে থিমের উপস্থাপন করেছেন, সেক্ষেত্রে কলকাতার পুজোকে টেক্কা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছুটা একই সুর শােনা গেল অপর বিচারক রাই এর কণ্ঠেও। তিনি জানান, প্রত্যেকটি পুজো উদ্যোক্তাদেরই পরিবেশ নিয়ে আলাদা কিছু ভাবনা চিন্তা রয়েছে যা সমাজের পক্ষে অত্যন্ত সদর্থক।