• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো পুজোর ঘণ্টা বাজার সাথেই শহরমুখি উৎসুক মানুষ

বাঙালীর সব থেকে বড় উৎসবের উল্লাস শুরু। বারােয়ারি পুজোগুলিতে বােধনের আগেই উদ্বোধন শেষ। নাহলে জনজোয়ার সামাল দেওয়া যাবে কিভাবে?

প্রতিকি ছবি (Photo: IANS)

বাঙালীর সব থেকে বড় উৎসবের উল্লাস শুরু। বারােয়ারি পুজোগুলিতে বােধনের আগেই উদ্বোধন শেষ। নাহলে জনজোয়ার সামাল দেওয়া যাবে কিভাবে? আর এখানেই প্রশাসনের মগজাস্ত্রকে কুর্ণিশ। তবে দিন যত এগােচ্ছে শহরমুখি মানুষের স্রোতও ক্রমেই বেড়ে চলেছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতার বড় পুজোগুলিকে কেন্দ্র করে উৎসুক সবাই। এ বলে আমায় দেখ তাে, ও বলে আমায় দেখ।

থিম থেকে প্রতিমা, আলােকসজ্জা থেকে মণ্ডপের অভিনবত্ব দেখতে হজির হচ্ছে মানুষ। সেই তালিকায় বাদ নেই আট থেকে আশি প্রায় কেউই। অনেকের তাে আবার মত, পুজোর দিনগুলােয় ঠিক মতাে দর্শন করা যায়না। তাই আগেভাগেই প্যান্ডেল হপিং সেরে ফেলা। অনেকে আবার অফিস কেটে এক ফাঁকে কাছের ছােটবড় পুজোগুলােয় এক চক্কর ঘুরে নিচ্ছেন। পুজোর দিনগুলােয় পাড়ার পুজোয় কাটানাে যায়না। তাই উদ্বোধন যখন হয়েই গিয়েছে তখন আর দেখে ফেলতে আপত্তি কোথায়।

বয়স্কদের বাহানা, ভিড় বাড়ার আগে এবার দেখে নেওয়া যাক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরের প্রবেশ পথগুলিতে উপচে পড়া দর্শনার্থীর ভিড়। পুজো যেন হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা। তবে এবার ছুটির ঘণ্টা বাজার আগেই পঞ্চমীর দুপুরে বালিগঞ্জ, টালিগঞ্জ, শিয়ালদহ, দমদম, বিধাননগর সহ স্টেশনগুলাে থেকে শুধুই মানুষের মাথা।

অন্যদিকে মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে দর্শনার্থীদের জন্য মন্ডপের দিকনির্দেশক পােস্টার পড়ে গিয়েছে প্রতিটি স্টেশনে। এদিকে ভিড়ের চোটে হাসফাস গােটা শহর। গড়িয়াহাট, রাসবিহারি রােড, এসপ্লেনেড, বিধান সরণি, দুর্গাপুর ব্রিজ, চেতলা, কলুটোলা থেকে সিআর এভিনিউ, শােভাবাজার স্ট্রিট সহ শহরের বিস্তৃর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যপক যানজট। বাঘাজতীন থেকে ঢাকুরিয়া, গড়িয়া এলাকা জুড়ে প্রায় একই অবস্থা। তবে বড় কোনও পুজো না থাকলেও পঞ্চমীর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিউ মার্কেট সহ লিন্ডসে স্ট্রিট, কেএমসি এলাকা চত্বর জুড়ে দেখা গেল মানুষের ঢল নেমেছে।

অন্যদিকে টালা ব্রিজের জন্য টালমাটাল উত্তর কলকাতার বিশাল এলাকা। ঘুরপথে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে শহরে প্রবেশ করতে হচ্ছে মানুষকে। যার জেরে উৎসবে বেরিয়েও নাভিশ্বাস দশা। পুজোর ঘােরাতেও কাটছাট করতে হচ্ছে দর্শনার্থীদের। উত্তরের টালা আর দক্ষিণের মাঝেরহাট ব্রিজের বেহাল অবস্থাকেই দায়ী করছে মানুষ। তবে বাঙালীর সবথেকে বড় উৎসবও তাে আর বারবার আসে না তাই অধিকাংশই আবার প্ল্যানমাফিক ঘােরার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে।

অন্যদিকে যাননিয়ন্ত্রণ থেকে ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট, নারী নিরাপত্তা থেকে শহরবাসীর সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে চতুর্থী থেকেই পথে নেমেছ কলকাতা পুলিশের বাড়তি বাহিনী। পঞ্চমী থেকে নবমী পর্যন্ত তিন শিফটে পথে থাকবে ২০ হাজার পুলিশ। ২৪ জন পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকের নেতৃত্বে বাহিনী পরিচালিত হবে। কোথাও বাঁশের ব্যারিকেড করে আবার কোথাও আবার দড়ি ধরে যান নিয়ন্ত্রন ও জনস্রোত সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে কার্যত হিমসিম দশা পুলিশকর্মীদেরও। পুজোর উদ্বোধন যত এগােচ্ছে পুলিশকর্মীদের কাজের চাপও তত বাড়ছে। যা চলবে একেবারে কার্ণিভাল পর্যন্ত।

লালবাজারে বসে গােটা শহরের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের উপর নজর রাখছেন অতিরক্ত কমিশনাররা। পুজোয় শহরে বসানাে হয়েছে বাড়তি সিসি ক্যামেরা। এছাড়া প্রতিটি ডিভিশনে যে কটি বড় পুজো অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাদের নিজস্ব সিসিটিভির ফুটেজও ডেপুটি কমিশনারের অফিস থেকে সরাসরি নজর রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মেট্রো স্টেশন চত্বরেও বাড়তি পুলিশ মােতায়েন করা হয়েছে। মূলত যতিন দাস পার্ক, কালিঘাট, রবীন্দ্র সরােবর, টালিগঞ্জ, মহত্মা গান্ধি রােড, বেলগাছিয়া সহ একাধিক স্টেশন সংলগ্ন অংশে পলিশ অ্যাসিসটেন্স বুথ তৈরি করা হয়েছে।

পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি মাথায় রেখেই শহরে বেশ কিছু এলাকায় বাড়তি মহিলা পুলিশ মােতায়েন করা হয়েছে। এর সাথেই রয়েছে কলকাতা পুলিশের প্রমিলা বাহিনী ‘দ্য উইনার্স’-এর গােটা টিম। মহিলাদের উত্তক্ত করলে কোনও মতেই রেয়াত করা হবে না ইভ টিজারদের বলে কড়া নির্দেশ লালবাজারের কর্তাদের।

অন্যদিকে রাত বাড়ার সঙ্গেই ‘হােল নাইট হপিং’য়ে বের হচ্ছে বহু মানুষ। শেষ মুহুর্তের কেনাকাটা থেকে শুরু করে ভুড়িভােজটাও অধিকাংশ মানুষই সারছেন শহরের বিভিন্ন রেস্তোরায়। যার ফলে রাসবিহারী হােক বা শ্যামবাজার, বালিগঞ্জ হােক বা বেলেঘাটা নামী অনামী ছােটবড় সব রেস্তোরাগুলির পােয়া বারাে। কেউ টেবিল বুক করে রেস্টুরেন্টের বাইরে ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন। আবার কেউ রােল, আইসক্রিম কিনে মন্ডপে ঘুরতে ঘুরতেই এক ফাঁকে পেটপুজো সেরে ফেলছেন। সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে চেতলা অগ্রনী, খিদিরপুর ২৫ পল্লী থেকে টালা বারােয়ারি, নাকতলা উদয়ন থেকে একডালিয়া এভারগ্রিন, কলেজ স্কোয়ার থেকে বাগবাজার সার্বজনীন থিম থেকে সাবেকি একে অপরকে দর্শনার্থী টানতে রেষারেষি তুঙ্গে।