• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

আগাম জামিন স্থায়ী করাতে আলিপুর আদালতে হাজিরা ‘নিখোঁজ’ রাজীব কুমারের

প্রায় ২৫ দিন 'নিখোঁজ' ছিলেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা রাজ্যের এডিজি (সিআইডি) আইপিএস রাজীব কুমার।

রাজীব কুমার (File Photo: IANS)

সিবিআইয়ের স্পেশাল ১৪-এর টিম চিরুনি তল্লাশি লাগিয়েও যার খোঁজ পায়নি, সেই ‘নিখোঁজ’ আইপিএস রাজীব কুমারকে অবশেষে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় দেখা গেল আলিপুর আদালতে। এদিন তিনি কলকাতা হাইকোর্টের আগাম জামিনটি স্থায়ী করাতে আলিপুর আদালতে এসিজেএম এজলাসে এসেছিলেন। তাঁর সশরীরে হাজিরার মাধ্যমে আগাম জামিন স্থায়ী হয়।

উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে বেশকিছু শর্তাবলির উপর সারদা রিয়ালিটি মামলায় আইপিএস রাজীব কুমারের আগাম জামিন মেলে। এই আগাম জামিনের নির্দেশিকাটি কার্যকর করতে গেলে একমাসের মধ্যেই নিম্ন আদালতে সশরীরে হাজিরার মাধ্যমে এবং জামিনদারের স্বাক্ষরে লাগু হতে হয়।

প্রায় ২৫ দিন ‘নিখোঁজ’ ছিলেন কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা রাজ্যের এডিজি (সিআইডি) আইপিএস রাজীব কুমার। কোথায় ছিলেন, কীভাবে ছিলেন, কাদের আশ্রয়ে ছিলেন? এতকিছুর রহস্যের মাঝেই বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় কলকাতা পুলিশের বিশ্বস্ত অফিসারদের নিরাপত্তায় আলিপুর আদালতে এসিজেএম সুব্রত মুখােপাধ্যায়ের এজলাসে হাইকোর্টের আগাম জামিনের মামলায় হাজিরা দেন তিনি। সবদিক খতিয়ে দেখে বিচারক তা মঞ্জুর করেন।

এদিন রাজ্যের দুঁদে গােয়েন্দাপ্রধান রাজীব কুমারকে বডি ল্যাঙ্গুয়েজে এবং শারীরিকভাবে বিষন্ন দেখায়। সিবিআইয়ের তরফে ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের আগাম জামিন মঞ্জুরের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার প্রস্তুতি শেষ লগ্নে বলে জানা গেছে। সিবিআইয়ের কলকাতা টিম এদিন অত্যন্ত গােপনীয়তায় আলিপুর আদালতে রাজীবের উপস্থিতি নিয়ে নজরদারি চালিয়েছে বলে বিশেষ সূত্রে প্রকাশ।

কারা জামিনদার হলেন, কোন গাড়িতে এসেছিলেন কিংবা কোথায় গেলেন ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয়গুলি তারা খতিয়ে দেখছে বলে জানা গেছে। কেননা সুপ্রিম কোর্টে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের অর্ডার যদি খারিজ হয়, তাহলে পুনরায় রাজীব পাকড়াও অভিযান চালাতে হবে সিবিআইকে। তাই একমাস আগে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী মিত্রের এজলাসে আইপিএস রাজীব কুমারের পক্ষে আইনি রক্ষাকবচ প্রত্যাহারের পর থেকে রাজীব যেভাবে নিজেকে অন্তর্ধান রেখেছিলেন, আগামীতে সিবিআই তাদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে অর্ডার পেলে রাজীবকে দ্রুত যাতে হাতের নাগালে পায় সেজন্য আলিপুর আদালত রাজীবের উপস্থিতি পরবর্তী সমস্ত দিকে কড়া নজর রাখছে সিবিআই।

গত মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ আইপিএস রাজীব কুমারের আগাম জামিনের মামলায় শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়ে জানিয়েছিল, রাজীবকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়ােজন নেই। ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘রাজীব তদন্তে সহযােগিতা করেছেন’।

বেশকিছু শর্ত আরােপ করে ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে (দু’জন জামিনদার সহ) হাইকোর্ট কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনারের আগাম জামিন মঞ্জুর করে। কলকাতা পুলিশের আওতাধীন এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না আইপিএস রাজীব। সেই সঙ্গে পাসপাের্ট জমা রাখতে হবে সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসারের কাছে। আইপিএস রাজীব কুমারকে হাজিরার জন্য সিবািই ডাকলে তা দু’দিন আগে রাজীব কুমারকে অবগত করতে হবে বলেও এই মামলার রায়দানে জানানাে হয়েছে। যদি সিবিআই তদন্তে জেরার নামে ডেকে গ্রেফতার করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই জামিন পেয়ে যাবেন রাজীব, তাও জানিয়েছে হাইকোর্ট।

কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চের এই রায় জানার পর থেকেই সক্রিয় হয় সিবিআই কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবারই দিল্লির সিবিআইয়ের লিগাল সেলকে জানিয়েছে কলকাতার তদন্তকারীরা। কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার প্রস্তুতি চলছে বলে সিবিআইয়ের অন্দরের খবর। কেননা ৪ অক্টোবরের পর থেকে সুপ্রিম কোর্টে ছুটি পড়ছে আদালত খুলবে আগামী ১৪ অক্টোবর।

তাই এর মধ্যেই রাজীব কুমারকে নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হেস্তনেস্ত করতে চায় সিবিআই। যদিও সারদা রিয়ালিটি মামলায় আইপিএস রাজীব কুমার আগাম জামিন পেলেও রােজভ্যালি মামলায় পুনরায় নােটিশ পাঠিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই। প্রায় একমাস পূর্বে সারদা তদন্তে সিবিআইয়ের সমন খারিজ মামলায় আইপিএস রাজীব কুমারের উপর থেকে আইনি রক্ষাকবচ তুলে নিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মধুমতী মিত্রের এজলাস। এরপর থেকে বারাসতের স্পেশাল কোর্ট (এমএলএ, এমপি) এবং জেলা দায়রা কোর্টে মামলার এক্তিয়ার নিয়ে মামলার পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনও রায় উঠে আসেনি।

এরপর আলিপুর এসিজেএম এজলাসে সিবিআইয়ের গ্রেফতারি পরােয়ানা ইস্যু মামলায় আইপিএস রাজীব কুমারকে গ্রেফতারে বাধা নেই বলে জানিয়েছিল। অনুরূপভাবে গত ২১ সেপ্টেম্বর আলিপুর জেলা ও দায়রা এজলাসে রাজীব কুমারের আগাম জামিনের আবেদন খারিজ হয়। সেখানে রাজীবের বিরুদ্ধে সারদা তদন্তে অপরাধমূলক ভূমিকার কথাও উঠে আসে। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে আইপিএস রাজীব কুমারের পক্ষে তাঁর স্ত্রী সঞ্চিতা কুমার আগাম জামিনের আবেদন জানান। টানা চারদিন রুদ্ধদ্বার শুনানি চলে। গত সােমবার এই মামলার রায়দান স্থগিত রাখেন বিচারপতিরা। গত মঙ্গলবার এই মামলার রায়দান ঘটে।

রাজীবের আইনজীবী দেবাশিস রায় শুনানিতে জানিয়েছেন, সারদা তদন্তে আইপিএস রাজীব কুমার সহযােগিতা করেছেন। এমনকি শিলঙে টানা ৪০ ঘণ্টার সিবিআইয়ের জেরার সম্মুখীন হন তিনি। অপরদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী ওয়াই জে দস্তুর শুনানিতে জানিয়েছেন, সারদা তদন্তে ৮ বার তলব করা হলেও মাত্র দুবার তদন্তে সাড়া দিয়েছেন রাজীব। তাও আইনি রক্ষাকবচ সঙ্গে নিয়ে। ব্যক্তিগত ৫০ হাজার বন্ডে আইপিএস রাজীব কুমারকে বেশকিছু শর্ত আরােপ করে আগাম জামিন দেয় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চ।

জেরার জন্য রাজীবকে ডাকলে দু’দিন আগে সিবিআইকে জানাতে হবে। কলকাতা পুলিশের এলাকার বাইরে যাওয়া যাবে না। পাসপাের্ট জমা রাখতে হবে। তবে সিবিআইয়ের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা প্রদান করেছে এই ডিভিশন বেঞ্চ। সিবিআই তদন্তের নামে ডেকে গ্রেফতার করলে, তাতে সঙ্গে সঙ্গেই জামিন পাবেন আইপিএস রাজীব কুমার। এই নির্দেশিকা জারি হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চের তরফে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই দিল্লির লিগাল সেলে বিষয়টি দ্রুত জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা। ৪ অক্টোবর থেকে ১৪ অক্টোবর ছুটি থাকছে সুপ্রিম কোর্ট সহ অন্যান্য আদালতগুলি। এরই মাঝে আপিল করতে হবে সিবিআইকে। কেননা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি শহিদুল্লা মুন্সির ডিভিশন বেঞ্চে এই আগাম জামিনের সময়সীমা নেই অর্থাৎ রাজীব কুমারকে গ্রেফতারের পথে সিবিআইকে যেতে হলে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করতেই হবে সুপ্রিম কোর্টে।

এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটায় প্রায় একমাস আত্মগােপন করে থাকার পর কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার তথা রাজ্যের এডিজি সিআইডি রাজীব কুমার তাঁর কলকাতা হাইকোর্টের আগাম জামিনটি স্থায়ী করাতে আলিপুর আদালতে এসিজেএম সুব্রত মুখােপাধ্যায়ের এজলাসে হাজিরা দেন। বিচারক তা মঞ্জুর করেন। এদিন আদালত থেকে বেরিয়ে অত্যন্ত দ্রুততায় গাড়ি চেপে চলে যান আইপিএস রাজীব কুমার। সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি তবে তাঁর শরীরি ভাষা বলে দিচ্ছিল, তিনি সারদা মরিয়ালিটি মামলায় সিবিআই নিয়ে অত্যন্ত চাপে আছেন।