• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

চাপের মুখে মোদী

মোদী জমানার প্রথম দুই দফায় সংসদকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা হয়েছিল। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শিকেয় তুলে একদলীয় স্বৈরশাসন নামিয়ে আনা হয়েছিল

স্বঘোষিত অজৈবিক মোদীর এখন আর আগের মতো নিরঙ্কুশ দাপট এবং সীমাহীন ঔদ্ধত্য নেই। অনেক ক্ষেত্রেই তাঁকে অনেক হিসাবনিকাশ করে পা ফেলতে হচ্ছে, কথা বলতে হচ্ছে। একা হম্বিতম্বি করার মানসিকতা কিছুটা কমেছে। গত লোকসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেকটা পেছনে থেকে শরিক দলের ঘাড়ে ভর দিয়ে কোনওরকমে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এতদিন এনডিএ’র নামে কার্যক্ষেত্রে আরএসএস-বিজেপি সরকারের সর্বাধিনায়ক ছিলেন মোদী। সেটা ছিল কার্যত একদলীয় এক নেতার সরকার। এবার মোদী সরকারকে কিছুটা হলেও এনডিএ সরকার হিসাবে কাজ করতে হচ্ছে।

অভ্যাসবশত ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সদম্ভে নিজের মতো করে কোনও পদক্ষেপ নিয়ে ফেললে সবটা গুটিয়ে আনা সহজ হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রেই ঢোক গিলে পিছিয়ে আসতে হচ্ছে। একা ছড়ি ঘোরানোর মানসিকতা অনেকটাই কমেছে। এই পরিবর্তনের পেছনে শুধু শরিকি চাপই নয়, প্রবলভাবে রয়েছে বিরোধীদের চাপও। জোটের মধ্যে চাপ দিয়ে অনেক কিছু শরিকদের দিয়ে হ্যাঁ করিয়ে নেওয়া সম্ভব হলেও বিরোধীদের চাপ এড়ানো সহজ হচ্ছে না। ফলে আগের দুই সরকারের সব অ্যাজেন্ডা হুবহু অনুকরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক কিছুই অদল বদল করে নিতে হচ্ছে।

মোদী জমানার প্রথম দুই দফায় সংসদকে কার্যত অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা হয়েছিল। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শিকেয় তুলে একদলীয় স্বৈরশাসন নামিয়ে আনা হয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে বিরোধীদের কার্যত অস্বীকার করে কোনওরকম আলোচনা ছাড়াই একের পর এক বিল পাশ করানো হতো। আলোচনা হলেও তা ছিল লোক দেখানোর মতো। অর্থাৎ সরকার পক্ষের মতামত, সিদ্ধান্তই শেষ কথা। সেটাই মেনে নিতে হবে সকলকে। প্রথম ইউপিএ সরকার ৬০ শতাংশ বিল সংসদীয় কমিটিতে পাঠাতো বিস্তারিত আলোচনার জন্য। দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার পাঠাতো ৭০ শতাংশ বিল। আর প্রথম মোদী সরকার মাত্র ২৬ শতাংশ বিল সংসদীয় কমিটিতে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয় মোদী সরকার পাঠিয়েছে মাত্র ১৬ শতাংশ বিল। ৩৫ শতাংশ বিল বিনা আলোচনায় পাশ করিয়েছে এই সরকার। এবার প্রবল চাপে বাধ্য হয়েছে ওয়াকফ বিল সংসদীয় কমিটিতে পাঠাতে।

এতোদিন মোদী সরকার আগ্রাসী হিন্দুত্বকে অগ্রাধিকার দিত। এখন তার থেকে কিছুটা যে সরে যাচ্ছে, এমনটা নয়। তবে কিছুটা আব্রু রাখার চেষ্টা করছে শরিক দলের চাপে। হিন্দুত্ব কর্পোরেট মিশেলে এমন এক অর্থনীতি গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল যেখানে ঘনিষ্ট কিছু কর্পোরেটের পোয়াবারো। উদারনীতির নামে গোটা অর্থনীতি ও দেশের সম্পদ তুলে দেওয়া হচ্ছিল বন্ধু কর্পোরেটের হাতে। ফলে একদিকে আয় ও সম্পদের অতিকেন্দ্রীভবন হয়েছে, অন্যদিকে বেকার-অর্ধবেকার হুহু করে বেড়ে গিয়েছে। এমন নীতি রূপায়ণে অতি সক্রিয়তা একটু হলেও থমকেছে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার অহঙ্কারে ধরাকে সরা জ্ঞান করার ঔদ্ধত্যও কিছুটা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাম্প্রতিককোলে দেকা গেছে কয়েকটি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেও শরিক ও বিরোধীদের চাপে পিছু হটতে হয়েছে মোদী সরকারকে। বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকারের প্রকাশ্যে সমালোচনা করছে এনডিএ শরিকরা। বাইরে থেকে সঙ্ঘ-ঘনিষ্ট আমলা নিয়োগের উদ্যোগ নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে মোদী সরকারকে।

যে মোদী জনকল্যাণ প্রকল্পকে ‘ রেউড়ি সংস্কৃতি’ বলে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেন এখন তাঁর এবং তাঁর দলের রাজ্য সরকারগুলি রেউড়ি প্রকল্প নিয়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আসলে জনপ্রিয় ভাবমূর্তি ফিকে হয়ে যাওয়ায় মানুষের মন পেতে জনমোহিনী প্রকল্পে নজর দিচ্ছেন মোদী। সামনে কাশ্মীর ও হরিয়ানায় নির্বাচন। তারপরেই হবে মহারাষ্ট্রও ঝাড়খণ্ডে নির্বাচন। কোনও রাজ্যেই ভাল অবস্থায় নেই বিজেপি। এই অবস্থায় শরিকদের মন জুগিয়ে চলা যেমন বাধ্যতামূলক হয়ে যাচ্ছে, তেমনই বিরোধী চাপের কাছে নতজানুও হতে হচ্ছে মোদি সরকারকে।