আরজি কর হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় যুবক মৃত্যুর ঘটনায় বর্তমানে তোলপাড় স্বাস্থ্য থেকে রাজনৈতিক মহল। তিলোত্তমার ন্যায় বিচারের দাবিতে চলা আন্দোলনে নতুন প্রতিবাদী মাত্রা যোগ করেছে হুগলির কোন্নগরের যুবক মৃত্যু। এই প্রেক্ষিতে মৃত যুবকের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের আওয়াজ তুললেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংসদের সাফ যুক্তি, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’ যদি হয়, তাহলে ‘জাস্টিস ফর কোন্নগর’ কেন হবে না? শনিবার সন্ধ্যায় কোন্নগরে মৃত যুবকের বাড়িতে যান শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানেই তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষ, মফস্সলের মানুষ বলে তাঁর জন্য আওয়াজ তোলার কেউ থাকবে না? তাঁর জন্য এলিট ক্লাস নামবে না? তার জন্য কোন গায়ক-গায়িকা, ফিল্ম আর্টিস্টরা নামবেন না?’
মৃত্যুর দায় আরজি করের চিকিৎসকদের উপরেই চাপিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর ভাষায়, ‘এটা তো সত্যি কথা যে ডাক্তারদের গাফিলতির জন্যই এই মৃত্যু হল!’ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের পাল্টা জবাব দিয়েছেন প্ৰখ্যাত টলিউড অভিনেত্রী সোহিনী সরকার। দলীয় পতাকা ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অভিনেত্রী। সোহিনীর যুক্তি, ‘সবাই যে পথে নেমেছেন, সবাই যে জাস্টিস বা বিচার চাইছেন, আন্দোলন করছেন, অনেক দাবি রাখছেন সরকারের কাছে, সেটা কিন্তু একজন মানুষের জন্য নয়। বরং সমগ্র জাতির জন্য। এই আন্দোলন, প্রশ্ন, দাবি পশ্চিমবঙ্গের জন্য।’
উল্লেখ্য, উত্তরপাড়ায় ‘রাত জাগো’, স্ট্রিট পেন্টিং এবং মশাল জ্বালো কর্মসূচিতে যোগদান করে এমনই মন্তব্য করেছেন অভিনেত্রী। এরপরই সোহিনী শ্রীরামপুর সাংসদকে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘১৪ অগস্ট শুরু হয়েছিল রিক্লেম দ্য নাইট। এরপর ৮ সেপ্টেম্বর হয়ে গেল। এ পর্যন্ত যত মানুষ পথে নেমেছেন, তা একজনের জন্য নামেননি। তাঁরা নিজের জন্যও নেমেছেন। অন্যের জন্যেও নেমেছেন। আমাদের সিস্টেমের মধ্যে যে দুর্নীতি আছে, সিস্টেমের মধ্যে যে গাফিলতি আছে, সেগুলো ঠিক করার জন্যই এই আন্দোলন। তাই তিনিও (কল্যাণ) এসে আমাদের আন্দোলনে যোগ দিতে পারেন। দলের পতাকা ছেড়ে তিনিও এসে যোগ দিন।’ প্রসঙ্গত, শুক্রবার কোন্নগরের যুবক বিক্রম ভট্টাচার্য লরি দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিলেন ফলে গুরুতর জখম হয়েছিল তাঁর পা। তাঁকে শ্রীরামপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখান থেকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছিল। মৃতের মা কবিতা ভট্টাচার্যের অভিযোগ, আরজি করের জরুরি বিভাগ এবং আউটডোরের মধ্যে শুধু দৌড়ে বেরিয়েছেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু মেলেনি কোনো চিকিৎসক। অবশেষে চিকিৎসার অভাবে তাঁর চোখের সামনেই মৃত্যু হয় ছেলের। এ প্রসঙ্গে ছেলের বিচারের দাবিতে সরব হন মৃতের মা কবিতাও। তিনি বলেন, ‘এই ডাক্তারদের বিচার কে করবে? আমার ছেলেটা এত যন্ত্রণা পেয়ে মরল।’ এরপরই শ্রীরামপুরের সাংসদ মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে জানিয়েছেন তিনিও চান ‘জাস্টিস ফর কোন্নগর’।