হিংসাত্মক ঘটনার জেরে ফের অশান্ত মণিপুর। শনিবার সকালে জিরিবাম জেলায় দুই জঙ্গি গোষ্ঠীর লড়াইয়ে নিহত কমপক্ষে পাঁচ জন। পুলিশ সূত্রে খবর, একজনকে ঘুমের মধ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। অন্যদিকে মনিপুরের পাহাড়ি এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। এর জেরে নিহত হন চারজন সশস্ত্র জঙ্গি। এই পরিস্থিতিতে শনিবার থেকে জঙ্গি ডেরার সন্ধানে চিরুনি তল্লাশি শুরু করেছে মণিপুর পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী। ধ্বংস করা হয়েছে জঙ্গিদের তিনটি বাঙ্কার। উত্তপ্ত মণিপুরে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শনিবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয় সরকার।
উত্তর-পূর্ব ভারতের মণিপুরে গত বছরের মে মাস থেকেই কুকি ও মেইতেই এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে অশান্ত হয়ে ওঠে মণিপুর। উভয় পক্ষের মধ্যে লাগাতার সংঘর্ষের জেরে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয় , ঘরছাড়া হাজার হাজার পরিবার। এরপর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ফের অশান্তির আগুন ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য , চলতি মাসের প্রথম দিনই সন্দেহভাজন কুকি জঙ্গিরা ড্রোন ব্যবহার করে রকেট পরিচালিত গ্রেনেড নিয়ে হামলা চালায়। কাংপোকপি এবং পশ্চিম ইম্ফলে ঘটনার জেরে নিহত হন দু’জন। আহত হন কমপক্ষে সাত জন। দু’টি ক্ষেত্রেই হামলা হয় মেইতেই জনগোষ্ঠীর এলাকায়। মণিপুর সরকারের দাবি, কুকি জঙ্গিরাই হামলা চালায়। ড্রোন নিয়ে হামলা চালানোর ঘটনা ভাবিয়ে তোলে পুলিশ বাহিনীকে। কারণ এই ধরণের ড্রোন হামলায় মৃত্যুর ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। পুলিশের অনুমান, এই হামলার পেছনে প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন কারও ভূমিকা রয়েছে।
এই ঘটনার পর চারদিন পরিস্থিতি আপাত শান্ত থাকলেও শুক্রবার আবার হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। কুকি জঙ্গিরা ওই দিন নজিরবিহীনভাবে বিষ্ণুপুর জেলায় রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী মাইরেম্বাম কোইরেং সিংহের বাড়িতে হামলা চালায়। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে আর রে রাবেই নামে স্থানীয় এক বয়স্ক পুরোহিতের মৃত্যু হয়। কয়েক জন জখম জন।
মেইতেইদের দাবি, কুকিরাই ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। পুলিশের দাবি, স্থানীয় ভাবে তৈরি হলেও উন্নত প্রযুক্তির ওই ক্ষেপণাস্ত্র ৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে আঘাত হানতে পারে। ঘটনার পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যজুড়ে। এর পরেই ইম্ফল উপত্যকার পাঁচ জেলায় ‘জন জরুরি অবস্থা’ জারি করা হয়।
এই আবহে বিষ্ণুপুর এবং চূড়াচাঁদপুর এলাকার বিভিন্ন এলাকায় শনিবার সকাল থেকে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়। এই অভিযান ঘিরেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। কুকি সংগঠনগুলির অভিযোগ, পুলিশ এবং মেইতেই জঙ্গিরা সংগঠিত ভাবে এলাকা দখলের অভিযানে নেমেছে। যদিও অভিযোগ উড়িয়ে মণিপুর পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিষ্ণুপুর জেলার মুয়ালসাং গ্রামে দু’টি এবং চুরাচাঁদপুরের লাইকা মুয়ালসাউ গ্রামে একটি বাঙ্কার ধ্বংস করা হয়েছে। সেগুলি কুকি জঙ্গিদের ডেরা বলেই দাবি পুলিশের।
মূলত সমতল এলাকার বাসিন্দা মেইতেইরা মণিপুরের বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। অন্য দিকে, কুকি, অঙ্গামি, লুসাই, নাগা, থাড়োয়াসের মতো প্রায় ৩০টি জনজাতি গোষ্ঠীর বাস মণিপুরের পাহাড়ি এলাকায়। কুকিদের অভিযোগ, হিংসা থামানোর অজুহাতে মেইতেই এবং পুলিশ-প্রশাসন সম্মিলিতভাবে পাহাড়ি এলাকায় জনজাতিদের জমি দখলের অভিযান চালাচ্ছে । ফলে নতুন করে হিংসা ছড়াচ্ছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যে।
অশান্ত মণিপুরে গত দেড় বছরে বারবার উত্তপ্ত দেশের রাজনীতি। ফের নতুন করে জঙ্গি হামলার ঘটনায় উদ্বেগ বাড়ছে রাজ্য প্রশাসনের। ।