সাম্প্রতিক সময়ে আরজিকর কাণ্ডের জেরে তপ্ত গোটা রাজ্য। প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে রাজ্যের একাধিক প্রান্তে চলছে প্রতিবাদ মিছিল। বিগত প্রায় এক মাস ধরে নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন চিকিৎসক থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষ। যা কার্যত নজিরবিহীন। অন্যদিকে এই ঘটনার পরে একপ্রকার ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকারের ভাবমূর্তি। যদিও ধর্ষণের প্রতিবাদে বিশেষ অধিবেশন ডেকে তড়িঘড়ি ‘অপরাজিতা’ বিল এনেছে রাজ্য সরকার। বর্তমানে তা অবশ্য রাষ্ট্রপতির ছাড়পত্রের অপেক্ষায়।
কিন্তু এতো কিছুর পরেও প্রশ্ন উঠছে, কর্মক্ষেত্রে মহিলারা আদৌ সুরক্ষিত কিনা! তাই কর্মস্থলে স্ত্রী পুরুষ লিঙ্গ নির্বিশেষে যৌন হয়রানি বিষয়ে সচেতনতা প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছিল কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনস্থ সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ কমিউনিকেশনস বা সিবিসি। শুক্রবার দুপুরে সল্টলেকে সেন্ট্রাল ব্যাংক অফিসার ট্রেনিং কলেজের প্রেক্ষাগৃহে এই ‘সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট অ্যাট ওয়ার্ক প্লেস’ শীর্ষক আলোচনা সভাটির আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংবাদিক ও বিশিষ্ট সমাজকর্মী স্বাতী ভট্টাচার্য এবং রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রাক্তন উপ-সভাপতি ভারতী মুতসুদ্দি। তাঁদের পাশাপাশি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ পড়ুয়ারা। মূলত কীভাবে কর্মস্থলে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়েই আলোচনা হয় এদিনের সভায়।
সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে, অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায় যৌন হয়রানির মনস্তাত্ত্বিক দিকগুলি বিশ্লেষণ করেন। আলোচনা করেন দৈনন্দিন জীবনের আচরণের সীমাবদ্ধতা, মাইক্রো-ডিসক্রিমিনেশন ও মাইক্রো-অ্যাগ্রেশনের প্রভাব নিয়েও। বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করেন তিনি।
অন্যদিকে কর্মস্থলে, বিশেষ করে অসংগঠিত ক্ষেত্রে, যৌন হয়রানির প্রেক্ষাপটে মহিলাদের সমান সুযোগ ও অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন স্বাতী ভট্টাচার্য। তিনি মহিলাদের মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার, উপার্জনের অধিকার এবং সম্মতির গুরুত্বের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন।
ভারতী মুত্সুদ্দি আলোচনা করেন, কর্মস্থলে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের আইনি কাঠামো এবং এর বিবর্তন নিয়ে। তিনি আইনগত দিকগুলি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন। যা মহিলাদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের পক্ষে অনুষ্ঠানটির অসাধারণ সঞ্চালনা করেন প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো ও সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ কমিউনিকেশনস-এর পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা পার্থ ঘোষ।