স্বপন মন্ডল
বাংলাদেশের আকস্মিক পালাবদলে দেশজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব,আতঙ্কিত পরিবেশ । বেছে বেছে বিপক্ষের সরকারি আমলা থেকে স্কুল,কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,অধ্যাপক ও উপাচার্যদের ছাত্রদের দলবদ্ধ ভাবে জোর করে পদত্যাগ করানোর হিড়িক পড়ে গেছে। সংখ্যালঘু হিন্দু হলে তো কথাই নেই, পদত্যাগের পরেও নির্বিচারে চলে উত্তম-মধ্যম গণধোলাই । কেউ কেউ স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছে, কাউকে কাউকে মেরেধরে নিগ্রহ করে চাকরি ছাড়ানোর বা পদত্যাগ করানোর নৃশংস আয়োজন চলছে। কেউ আবার দেশ ছেড়ে গোপনে পালিয়ে যাওয়ার সময় ধরা পড়ে গেছে। সংবাদ মাধ্যম থেকে সোস্যাল মিডিয়ায় সেই সব ভয়াবহ ঘটনা দেখে গা শিউরে উঠছে। আগের আমলের সরকারি দলের নেতা-মন্ত্রীদের উপরে ইতিমধ্যেই বিচারের নামে প্রতিশোধের প্রহসনের পালাও শুরু হয়ে গেছে, ভাবা যায়! আসলে বাংলাদেশের এই অসময়ের অকালবোধনে অস্বাভাবিকতার বিপর্যয় নেমে এসেছে। আষাঢ়ের অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশ বা শ্রাবণের মেঘভাঙা বৃষ্টি দেখলে কেউ ভয় পায় না,বরং তার স্বাভাবিকতায় মন প্রসন্ন হয়ে ওঠে।
শরতের নির্মল আকাশে আকস্মিক মেঘের ঘনঘটায় অজানা আশঙ্কায় মনে আপনাতেই আতঙ্ক নেমে আসে। যার প্রয়োজন নেই,তার আয়োজন শুধু ক্ষতি করে না, অসময়ের আগমনে ভয়ঙ্কর অশনি সংকেত জাগিয়ে তোলে। বাংলাদেশের কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতা যেভাবে ছড়িয়েছিল,তা যে অচিরেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে সামিল হতে পারে,অনেকেই তা আঁচ করতে পেরেছিল। সে দেশে দীর্ঘদিন শাসক দলের একাধিপত্যের কাছে সরকারবিরোধী দলের অস্তিত্ব সংকটের ছবি নানাভাবে উঠে আসে। নির্বাচনে হেরে যাওয়া থেকে সরে দাঁড়ানো সবেতেই শাসকবিরোধী রাজনৈতিক দলের তীব্র সংকট লক্ষ করা যায়। উগ্র মৌলবাদী বিরোধী দলও কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। সেক্ষেত্রে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য সরকারবিরোধী যে-কোনও বিষয়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মাথাচাড়া দেওয়ায় সচেষ্ট হলেও সেভাবে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। উল্টো সরকারবিরোধী দল বা উগ্র মৌলবাদীরা গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে জনপ্রিয়তায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এজন্যই নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে পাওয়ার জন্য যে কোনও অজুহাতে সরকারবিরোধী জোটবদ্ধ ষড়যন্ত্র অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। সেক্ষেত্রে সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ মৌলবাদী রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব সংকট স্বাভাবিকভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে গোপন ষড়যন্ত্র থেকে অসাধু যোগসাজসে ক্ষমতায়নের প্রয়াস জারি থাকে। শুধু তাই নয়, প্রধান বিরোধী দল-সহ অন্যান্য দলের অস্তিত্ব সংকটও শত্রুর শত্রু মনে মিত্রের একাত্মবোধে সরকারবিরোধী জোট স্বাভাবিক ভাবেই ক্রমশ শক্তিবৃদ্ধি করে। সেখানে সরকার বিরোধী আন্দোলনের অছিলায় সরকারকে উৎখাত করার অসাধু প্রয়াস মাথাচাড়া দেওয়ার যোগসাজশ অনেকদিন ধরেই চলেছে। সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বাভাবিক ভাবেই সরকারবিরোধী জোটের অবিচ্ছিন্ন সংযোগ গণআন্দোলনের অব্যবহিত পরিসরে অস্থায়ী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মধ্যেই প্রকট হয়ে ওঠে। সেখানে দেশের প্রধান দল আওয়ামী লীগকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়নি,সচেতন ভাবেই সে দলকে বাইরে রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্য যে সরকারি দলের ক্ষমতাচ্যুত করার প্রতিই নিবদ্ধ ছিল,তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। শুধু তাই নয়, তার লক্ষ্যে যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল,তা দ্বিতীয় স্বাধীনতা থেকে পুনরায় স্বাধীনতা লাভের চেতনাতেই প্রতীয়মান। আর সেখানেই বাঙালির আত্মঘাতী ভয়ঙ্কর পরিণতিটি হাতছানি দিয়ে উঠেছে।
বিগত হাসিনা সরকারের ক্ষমতায়নের মূল পুঁজি ছিল দেশটির ইতিহাস ও তার উত্তরাধিকার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন গড়ে ওঠা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস তথা মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের আপামর বাঙালির জীবন-সংগ্রামের ঐতিহাসিক প্রেক্ষিতটি দেশটির অস্তিত্বের সঙ্গেই একাত্ম হয়ে আছে। সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদী ভূমিকা ও প্রবাদপ্রতিম জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব সারা বিশ্বে বাঙালির একমাত্র স্বাধীন দেশ বাংলাদেশের অস্তিত্বের সঙ্গেই সমার্থক মনে হয়। বাংলাদেশের সঙ্গেই তাঁর নামটি শ্রদ্ধার সঙ্গে জনমানসে জেগে ওঠে, গর্বের সঙ্গে উচ্চারণ করে তাঁর নাম। শেখ মুজিবুর রহমানের নামের আগেই উঠে আসে,জুড়ে যায় ওপার বাংলার জনগণনন্দিত ‘বঙ্গবন্ধু’র অবিচ্ছেদ্য শ্রদ্ধেয় অভিধা। বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব ও প্রভাব যে সে দেশের জনমানসে কত সুগভীর ও সুদূরপ্রসারী, তা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করার পরও তাঁর জনপ্রিয়তার উৎকর্ষমুখর শ্রীবৃদ্ধিতেই প্রতীয়মান । সেখানে তাঁর আত্মজা শেখ হাসিনা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচেই থাকেননি,তাঁর সুযোগ্যা উত্তরসূরি হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকেই ক্ষমতাসীন হয়েছেন, বাংলাদেশের জাতির জনক হিসেবে পিতাকে সুপ্রতিষ্ঠিতও করেছেন। শুধু তাই নয়, সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে পাথেয় করেই শেখ হাসিনার পথ চলা,তাঁর প্রতি আপামর বাঙালির শ্রদ্ধাভক্তিই ছিল তাঁর ক্ষমতায় টিকে থাকার বাতিঘর। আসলে ক্ষমতা যত আলো দেয়,তার চেয়ে অনেকবেশি আলো শোষণও করে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর আলোয় ক্ষমতাসীন শেখ হাসিনা সেই আলোতেই যেমন নিজেকে মেলে ধরেছেন,তেমনই তাতেই তাঁর গ্রহণযোগ্যতা সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেখানে শাসক হিসেবে তাঁর কৃতিত্বের মূল্যায়ন জনমানসে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেনি। অথচ তাঁর আমলেই বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের কথা প্রতিবেশী দেশেও ছড়িয়ে পড়ে। অন্যদিকে তাঁর কৃতিত্বকে ছোট করে দেখানোর আয়োজনও বিরোধী দলের কাছে অস্ত্র হয়ে উঠেছে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ককে শেখ হাসিনা শ্রীবৃদ্ধি করলেও সেটি গুণের না হয়ে মহাদোষের কারণ হয়ে ওঠে। সে কারণে ভারতবিদ্বেষী মানসিকতাও শেখ হাসিনার বিপক্ষে চালিত হয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনার বিরোধিতার সঙ্গে ভারতবিরোধী ও হিন্দুবিদ্বেষী মানসিকতা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপক্ষেতার আদর্শে তাঁর হিন্দুপ্রীতিও ভোটব্যাঙ্কের চোখে শুধু ব্রাত্য হয়েই পড়েনি,উগ্র মৌলবাদীদের কাছে বিরূপ করে তুলেছে। সেক্ষেত্রে পিতাকে ভাঙিয়ে খাওয়ার চেতনায় স্বাভাবিক ভাবেই বিরোধী দলের কাছে তা বাংলাদেশকে পৈত্রিক সম্পত্তি ভাবার সামিল মনে হয়। এজন্য সেই বাতিঘরের আলো নেভানোর প্রয়োজনকে আয়োজনে সামিল করতে গিয়ে সময়ের সন্ধিক্ষণ জরুরি হয়ে ওঠে। সে দেশের চাকরিতে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সেই সন্ধিক্ষণ নিবিড়তা লাভ করে।
এতদিন ‘মারি অরি পারি যে কৌশলে’র ষড়যন্ত্র নানাভাবে ব্যর্থ হলেও এবার যেন জোটবদ্ধ শক্তি বিপুল জনসমর্থন লাভ করে। শেখ হাসিনা ২০০৮-এর নির্বাচনে যে বিপুল জনসমর্থন লাভ করে ক্ষমতায় এসেছিলেন,সেই সমর্থন ক্রমশ হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০১৩-র পর শেষ দুটি নির্বাচনে (২০১৮ ও ২০২৩) ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে শাসক দলের বিরোধীশূন্য মানসিকতায় যেভাবে বিরোধী দলের কর্মীদের গ্রেপ্তার থেকে দমনপীড়ন করে ভোটে দাঁড়ানো থেকে বিরত করা হয়েছে, প্রয়োজনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে শত্রুমুক্ত হতে চেয়েছে, তা অচিরেই জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিই করেনি, বিরোধী দলের ঐক্যকে আরও মজবুত করে তুলেছে । বিরোধী কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করতে গিয়ে জনগণের কণ্ঠেই বিরোধী কন্ঠস্বর জাগিয়ে তুলেছে। এমনিতেই ওপার বাংলায় ছাত্র সংগঠন অত্যন্ত শক্তিশালী । সেক্ষেত্রে বিরোধী শূন্য পরিসরে ছাত্রদের সংঘবদ্ধ বিরোধিতার পথ স্বাভাবিক ভাবেই প্রশস্ত হয়ে ওঠে। তার সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর সংযোগ সময়েরই পরিণতি। অন্যদিকে দীর্ঘকাল শাসনে থাকায় শাসকদলের বিস্তার থেকে তার ক্ষমতার অপব্যবহার, একাধিপত্য বিস্তার, দুর্নীতি, অরাজকতা সমাজের তৃণমূল স্তরেও ছড়িয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি বিশ্বাস উবে যায় ,শ্রদ্ধাও অচল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে সরকারের মানবিক মুখেও দানবিক ছায়া লক্ষ করে জনসাধারণের মনে নেতিবাচক ধারণা মাথা চাড়া দেয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলের সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছিল তারই মাহেন্দ্রক্ষণ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুই ১৯৭২-এ ক্ষমতাসীন হয়ে গৌরবান্বিত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে দেশের সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা ও তার উত্তরপুরুষের জন্য সংরক্ষণ করে তার প্রতি জাতির শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিরল ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। ১৯১৮-এর আগে তা নিয়ে কোনও বিরোধিতা বা প্রতিবাদ সংঘর্ষের আকারে সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। সেই ১৯১৮-তেই কোটাবিরোধিতা প্রতিবাদ শুরু হয় । তখনও তার তীব্রতা ছিল না। ক্রমশ তা বৃদ্ধি পায়। সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার ক্ষমতার বাতিঘরের আলো নেভানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকার রদ করার বিষয়টি জরুরি ক্ষেত্র হিসেবে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছিল। একে দেশে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল,তার উপরে দীর্ঘ পঞ্চাশ বছরের পরে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্তিত্ব ও প্রভাব জনমানসে শিথিল হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে বিপুল জনসংখ্যার মধ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের উত্তরাধিকারীর বিশেষ সুবিধাভোগের বিষয়টি গ্রহণযোগ্যতা হারায়। সে দেশে তীব্র বেকার সমস্যায় মুক্তিযোদ্ধার তিরিশ শতাংশ কোটা সাধারণ ও মেধাবী চাকরিপ্রার্থীদের কাছে শিরঃপীড়ার কারণ মনে হয়। সেক্ষেত্রে সেই কোটার বিরোধিতায় কোটাহীনরা পূর্বের পাকিস্তানপন্থী রাজাকার বনে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধার গৌরবের পাশে রাজাকারের কলঙ্কের বৈষম্যকে কৌশলে সামনে এনে সরকারের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গিতে চাকরির কোটাকেই হাতিয়ার করে সরকারকে চাপে ফেলে যেভাবে সারা দেশব্যাপী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে,তার মধ্যেই সেই আন্দোলনের আসল লক্ষ্যটি অচিরেই বেরিয়ে আসে। এজন্য চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধার কোঠা বিরোধী আন্দোলনের সাফল্যের আলোতেই সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের লক্ষ্য আরও প্রকট হয়ে ওঠে। ইতিপূর্বে বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলনের আলোয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের রেশ এখনও মিলিয়ে যায়নি, বরং মুক্তিযুদ্ধই আপামর বাঙালির চলমান ইতিহাস হয়ে উঠেছে।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধোর প্রতি জাতির কৃতজ্ঞতাকে তার উত্তরাধিকারীর কোটার মধ্যে সচল রাখলে দেশের মেধাও প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে। যেখানে উচ্চ শিক্ষার বেড়ে বেকারত্বের বিস্তার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে,সেখানে কোটার প্রতি বিরূপ মনোভাব অত্যন্ত স্বাভাবিক। তার প্রয়োজনীয়তাও সময়ান্তরে শেষ হয়ে গিয়েছিল, শেখ হাসিনাও উপলব্ধি করেছিলেন বলেই তিনি তা তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে যে বিশ্বাসে ভর করে ছাত্র আন্দোলনের পরিসরে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর সহানুভূতি প্রকট হয়ে উঠেছে, তখনই মুক্তিযোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধার সঙ্গে রাজাকারের প্রতি ঘৃণা জেগে ওঠায় তাঁর ইতিপূর্বের কোটাবিরোধিতা অকেজো হয়ে পড়ে। সেখানে রাজাকারের চেতনাহীন একালের চাকরিপ্রার্থীদের কাছে সরকারবিরোধী মানসিকতা আরও তীব্র আকার নেয়। সেখানে বিরোধী দলগুলোর জোটের ষড়যন্ত্রের শিকার ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতায় গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকার উৎখাত হলেও সে দেশের অরাজকতা ও অপশাসন আরও ঘনীভূত হয়। তাতে মাথাব্যথার জন্য মাথা কাটার মতো মূর্খামি আত্মঘাতী রূপ নেয়। দেশের অচলাবস্থা কেটে চূড়ান্ত ধ্বংসকামী অস্থিরতা নেমে এল। দেশময় দলবদ্ধ দুষ্কৃতি তাণ্ডবের ভয়ঙ্কর পরিণতিতে জোর যার মুলুক তারের পাশবিকতা সে দেশের গণতন্ত্রকেই হত্যা করে চলেছে। সরকারের স্বেচ্ছাচারিতার মাশুল গুণতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের হিংস্র খেলা শুরু হয়ে গিয়েছে। চারিদিকে শুধু অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতঙ্ক, ক্ষমতা দখলের অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ক্ষমতালিপ্সু বিরোধী দলগুলোর পৌষমাস মানেই দেশের জনগণের সর্বনাশ। সৃষ্টি হয়েছে অরাজকতা। যে ছাত্র আন্দোলনে লক্ষ্য ছিল দুর্নীতিপরায়ণ সরকারের পতন ঘটানো, সেই ছাত্রদের হাতেই স্বৈরাচারী অরাজকতা নেমে এসেছে। তার চেয়েও ভয় মৌলবাদীদের হাতে সোনার বাংলার ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের অবসান ঘটিয়ে ইসলামী রাষ্ট্রের হাতছানি। অন্যদিকে যে মুক্তিযুদ্ধ ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম দিয়ে ইতিহাস রচনা করেছে, সেই বাংলাদেশে ভারতবিরোধিতার পাশাপাশি পাকিস্তানপ্রীতি ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করে চলেছে। সেক্ষেত্রে বাঙালির অস্তিত্বই সে দেশে বিপন্ন হয়ে উঠছে।