আরজি কর মেডিক্যালে আর্থিক দুর্নীতির তদন্তে নেমে শুক্রবার রাজ্যের ১২ টি জায়গায় অভিযান চালালো এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুভাষগ্রামে সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে এদিন অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করেন ইডি আধিকারিকরা। এছাড়াও এদিন সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়িতে অভিযান চালায় ইডি। পাশাপাশি চন্দননগরে সন্দীপের শ্বশুরবাড়ি, বিপ্লব ঘনিষ্ঠ কৌশিক কোলের সাঁকরাইলের বাড়ি, এয়ারপোর্টে সন্দীপের শ্যালিকা অর্পিতা বেরার ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় ইডি। এছাড়াও এদিন বেসরকারি সংস্থার কর্মী কুণাল রায়ের বাড়ি, ব্যবসায়ী স্বপন সাহার সল্টলেকের বাড়ি, মাদুরদহের এক ব্যবসায়ীর বাড়ি, ভেন্ডর বিপ্লব সিংহের বাড়িতেও অভিযানে যান ইডি আধিকারিকরা।
ইডির হাতে আটক হওয়া প্রসূন আরজি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের আপ্তসহায়ক ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। পাশাপাশি তাঁর অন্য একটি পরিচয়ও রয়েছে। তিনি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ডেটা এন্ট্রি অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। শুক্রবার সকাল ৭ টা নাগাদ প্রসূনের বাড়িতে ঢোকেন ইডির আধিকারিকরা। দুপুর ২টোর সময় প্রসূনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়।
সন্দীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর ক্যানিংয়ের নারায়ণপুর মৌজায় তাঁর একটি বাংলোর খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল। বাংলোটির নাম ‘সঙ্গীতাসন্দীপ ভিলা’। কয়েকশো বিঘা জমির উপর এই বাংলোটি নির্মাণ করা হয়েছে। আটক করার পর প্রসূনকে এই বাংলোতেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
কয়েকদিন আগে আরজি কর হাসপাতালের ভিড়ে ঠাসা সেমিনার রুমের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল। সেই ভিডিওটি ৯ আগস্ট তরুণী চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের পর তোলা হয়েছিল বলে দাবি করা হয়। এই ভিডিওতে প্রসূনকে দেখা যাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। প্রসূন ছাড়াও ভিডিওতে সন্দীপের আইনজীবী শান্তনু দে, হাসপাতালের ফরেন্সিক মেডিসিনের শিক্ষক দেবাশিস সোমকেও দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। ন্যাশনাল মেডিক্যালে কর্মরত হয়েও আরজি কর হাসাপাতাল থেকে দেহ উদ্ধারের দিন প্রসূন কেন সেমিনার রুমে ছিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রসূনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর বাড়ির বাইরে স্থানীয়রা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগান তোলেন।
উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক দুর্নীতির মামলায় হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের পাশাপাশি আরও ৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ধৃত ভেন্ডার সুমন হাজরা ও বিপ্লব সিংহকে জেরা করে কয়েকটি নাম উঠে আসে। সেই তথ্যকে সামনে রেখেই শুক্রবার একের পর এক বাড়িতে অভিযান চালান ইডি আধিকারিকরা। এদিন সকালবেলা চন্দননগরের পাদ্রিপাড়ায় সন্দীপের শ্বশুরবাড়িতেও অভিযান চালান ইডি আধিকারিকরা। কিন্তু অনেকবার ডাকাডাকি করার পরেও কারও সাড়া পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিট নাগাদ সন্দীপের বেলেঘাটার বাড়ির সামনে হাজির হন ইডির আধিকারিকরা। কিন্তু কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে তখনকার মতো ফিরে যান তাঁরা। তারপর সকাল পৌনে ৯ টা নাগাদ ফের ইডি আধিকারিকরা সন্দীপের বাড়িতে পৌঁছন। ৯টা ১৫ মিনিটে বাড়ির চাবি নিয়ে সেখানে হাজির হন সন্দীপের স্ত্রী। তিনি দরজা খুলে দিতেই বাড়িতে তল্লাশি শুরু করেন আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি সংক্রান্ত একাধিক নথি সন্দীপের বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে। এছাড়াও রাজ্যের প্রায় ১২টি জায়গায় অভিযান চালায় ইডি আধিকারিকরা।