আর্জেন্টিনা ফুটবলের ইতিহাস লিখতে গেলে প্রথম যে নামটা সবার আগে ভেসে উঠবে, তিনি হলেন দিয়াগো মারাদোনা। মারাদোনার পাশে বুরুচাগার নামটা যেমন উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে, তেমনই বর্তমান ফুটবল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি যে নামটা নিয়ে সবাই আলোচনায় মুখর হন, তিনি হলেন লিওনেল মেসি। আবার মেসিকে আগ্রাসী ভূমিকায় যিনি সবচেয়ে বেশি এগিয়ে দিয়েছেন, তিনি হলেন অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। ফুটবলপণ্ডিতরা সবসময়ই বলে থাকেন, কোনও তারকা ফুটবলারকে শিরোনামে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় একজন সতীর্থ খেলোয়াড়কে। তাই মেসির পাশে ডি মারিয়ার নামটা সবার মুখে অবশ্যই ঘুরবে।
কোপা আমেরিকা ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেই আর্জেন্টিনার নির্ভরযোগ্য ফুটবলার ডি মারিয়া ঘোষণা করে দিয়েছেন তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নিচ্ছেন। তবে, বিশ্বকাপ ফুটবলের যোগ্যতা অর্জন পর্বের খেলায় আর্জেন্টিনা দলের সঙ্গে মাঠে এসেছিলেন কিন্তু জার্সি গায়ে দেননি। সতীর্থ খেলোয়াড়দের তিনি অনুপ্রাণিত করেছিলেন। চিলির বিরুদ্ধে ম্যাচটা জেতার জন্য। ওই ম্যাচে আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে হারিয়ে দেয় চিলিকে। এই ম্যাচের পর ডি মারিয়াকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় জানালেন তাঁর সতীর্থ ফুটবলাররা। বন্ধুকে আবেগঘন বার্তা দিলেন লিওনেল মেসি।
খেলা শেষ হওয়ার পর আর্জেন্টিনার ফুটবলারেরা তাঁকে নিয়ে মেতে ওঠেন। দীর্ঘ দিন ধরে আর্জেন্টিনার জাতীয় দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডি মারিয়াকে আকাশে ছুঁড়ে এই দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইলেন দলের প্রত্যেকেই। মেতে ওঠেন এমিলিয়ানো মার্তিনেজ়, নিকোলাস ওটামেন্ডিরা। সতীর্থদের উচ্ছ্বাসে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ডি মারিয়াও। সেই আবেগ আরও বৃদ্ধি করেছে মেসির বার্তা। দীর্ঘ দিনের সতীর্থের উদ্দেশ্যে মেসি লিখেছেন, ‘‘আশা করি সন্ধেটা তুমি পরিবার এবং কাছের মানুষদের সঙ্গে ভাল উপভোগ করেছ। আমরা সব কিছুই করতে পেরেছি, যেগুলো আমরা করতে চেয়েছিলাম। ফুটবলজীবনের অনেক কিছু আমরা ভাগ করে নিয়েছি। কে ভেবেছিল আমরা এ ভাবে শেষ করতে পারব। তোমার অভাব ভীষণ ভাব অনুভব করব। আশা করি, আমাদের খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে।’’
আর্জেন্টিনার হয়ে চারটি বিশ্বকাপ খেলেছেন ডি মারিয়া। ২০১০, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২২। শেষ বার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। ২০০৮ সালে বেজিং অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী দলেও পাশাপাশি খেলেছেন মেসি এবং ডি মারিয়া। মেসি এবং ডি মারিয়া এক সঙ্গে একাধিক বার কোপা আমেরিকা ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ফুটবলজীবনে সাফল্য কম নেই। আর্জেন্টিনার অন্যতম সফল এবং জনপ্রিয় ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম ৩৬ বছরের মিডফিল্ডার ডি মারিয়া।
আরও একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেছে আর্জেন্টিনা-চিলি ম্যাচে। ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠে নামেন পাওলো দিবালা। বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন পর্বে খেলছেন না মেসি। কিন্তু জাতীয় দলের ১০ নম্বর জার্সি দিবালাকে দেওয়ার মধ্যেও আলাদা তাৎপর্য দেখছেন ফুটবলপ্রেমীরা। তবে কি মেসিও আন্তর্জাতিক ফুটবলজীবন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন? না হলে, তাঁর জন্য রাখা ১০ নম্বর জার্সি কেন দিবালাকে দেওয়া হল? এ নিয়ে অবশ্য মুখ খোলেনি আর্জেন্টিনার ফুটবল সংস্থা, দিবালা বা মেসি।
চিলিকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে থাকল গত বারের বিশ্বজয়ী আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে গোল করতে পারেনি কোনও দলই। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ৪৮ মিনিটে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন অ্যালেক্সিস অ্যালিস্টার। ৮৪ মিনিটে আর্জেন্টিনার পক্ষে দ্বিতীয় গোলচি করেন জুলিয়ান অ্যালভারেজ়। সংযুক্ত সময় তৃতীয় গোল করে দলের জয়কে নিশ্চিত করেন দিবালা।