• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

পুজোর অনুদানে বরাদ্দ ৩৮৫ কোটি, শীঘ্রই শুরু চেক বিলি

এবার পুজো কমিটিগুলিকে ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

রাজ্যের হাজার হাজার পুজো উদ্যোক্তাদের জন্য সুখবর। শীঘ্রই রাজ্য সরকার পুজোর অনুদানের টাকা উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিতে চলেছে। এবার পুজো কমিটি পিছু ৮৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেবে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কয়েক সপ্তাহ আগে, গত ২৩ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আনুষ্ঠানিকভাবে সেই সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছিলেন। গত বছর যা ছিল ৭০ হাজার টাকা। এবার সেই অনুদান ১৫ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। এবারে পূজা কমিটিগুলি এই অনুদান এক লক্ষ টাকা করার দাবি জানালেও মমতা বলেন এক ধাক্কায় এতটা বাড়ানো সম্ভব নয়। বরং তিনি আশ্বাস দেন, আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২৫ সালে এই অনুদানের পরিমাণ বাড়িয়ে এক লক্ষ টাকা করা হতে পারে।

নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের ৪৫ হাজার ৩৩৬টি ক্লাব ও পুজো কমিটির জন্য মোট ৩৮৫ কোটি ৩৫ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। মূলত পুলিশের মাধ্যমেই জেলায় জেলায় এই অনুদানের চেক পৌঁছে যাবে। তারপর স্থানীয়ভাবে পুলিশ তা ক্লাবে ক্লাবে পৌঁছে দেব। ‘অ্যাকাউন্ট পেয়ি’ চেকের মাধ্যমে পুজো কমিটির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এই টাকা জমা দেওয়া হবে।

কিন্তু কোন তহবিল থেকে এই পুজোর অনুদান দেওয়া হবে? প্রাথমিকভাবে ঠিক করা হয়েছে, রাজ্যের কোষাগার থেকে টাকা তুলবে পুলিশ। কলকাতার ক্ষেত্রে এই কাজ করবে কলকাতা পুলিশ। জেলার ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ভিন্নভাবে টাকা বণ্টন করা হবে। জেলায় জেলায় সেই কাজ করবেন পুলিশ সুপার বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনও পুলিশ আধিকারিক। বর্তমানে কলকাতা পুলিশের অধীনে রয়েছে ৩ হাজার পুজো কমিটি। রাজ্য পুলিশের আওতায় রয়েছে ৪২ হাজার ৩৩৬টি ক্লাব-কমিটি।

কবে থেকে পাওয়া যাবে এই টাকা? এবিষয়ে স্পষ্টভাবে এখনও কিছু জানানো হয়নি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে। সূত্রের খবর, আগামী ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই অনুদান না ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষক দিবসের পরে ঠিক কোন দিন এই অনুদানের চেক প্রদান শুরু হবে, সেবিষয়ে এখনও কিছু জানা যায়নি। কিন্তু বিষয়টি কেন এখনও স্পষ্ট করছে না রাজ্য? এ ব্যাপারে প্রশাসনিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায়
প্রচন্ড চাপে রয়েছে রাজ্য সরকার। গত ৯ আগস্টের ঘটনার পর থেকে রাজ্যে দফায় দফায় একের পর এক আন্দোলন করছে বিভিন্ন প্রতিবাদী সংগঠন। প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। এমনকি বিদেশেও এর প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক পুজো কমিটি রাজ্য সরকারের প্রদত্ত অনুদান বয়কট করেছে। সেজন্য এখনই যদি চেক বিলি শুরু হয়, তাহলে সেই অনুদান প্রত্যাখ্যানকারী পুজো উদ্যোক্তার সংখ্যা আরও অনেক বেড়ে যাবে। সেজন্য এ বিষয়ে ধীরে চলো নীতি গ্রহণ করেছে রাজ্য সরকার।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে মমতা রাজ্যের বাছাই করা কয়েকটি পুজো কমিটিকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান এবং বিদ্যুতের বিলে ২৫ শতাংশ করে ছাড়ের ঘোষণা করেন। পরের বছর সেই অনুদানের পরিমাণ ২৫ হাজার টাকা করা হয়। ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতিতে এই অনুদান প্রদান স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২১ সাল থেকে সেই অনুদান বাড়িয়ে এক ধাক্কায় ৫০ হাজার টাকা অর্থাৎ দ্বিগুণ করা হয়। এবং রাজ্য জুড়ে পুজো কমিটির সংখ্যাও বাড়ানো হয়। পরের দুই বছর সেই অনুদান ১০ হাজার টাকা করে বাড়ানো হয়। ফলে ২০২২ সালে ৬০ হাজার এবং ২০২৩ সালে ৭০ হাজার টাকা করে রাজ্যের স্বীকৃত পুজো কমিটিগুলি পেতে শুরু করে। এবার সেটা আরও ১৫ হাজার বাড়িয়ে ৮৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এভাবে প্রতি বছর অনুদান বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনুদানপ্রাপ্ত পুজো কমিটির সংখ্যাও বেড়েছে।

এদিকে ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সরকার রাজ্যের ক্ষমতায় আসে। এর পরের বছর থেকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের ক্লাবগুলির ক্রীড়া ও পরিকাঠামোর উন্নয়নের জন্য আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেন। রাজ্যের বাছাই করা ক্লাবগুলি প্রথম বছরে এককালীন ২ লাখ টাকা এবং পরবর্তী ৩ বছর ১ লাখ করে মোট ৫ লাখ টাকা অনুদান পেত। যদিও করোনার কারণে ২০২০ সাল থেকে ওই প্রকল্পে অনুদান দেওয়ার কাজ স্থগিত হয়ে যায়। গত বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালে তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়।