ভুলবশত করেছিলেন একটি বিতর্কিত মন্তব্য। তবে, নিজের ভুল বুঝতে পারা মাত্রই ক্ষমা চেয়ে নিলেন বারাসতের তৃণমূল সাংসদ ডাঃ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। এমনকি নিজের মন্তব্য প্রত্যাহারও করে নিলেন তিনি। রবিবার কাকলি সমাজমাধ্যমে তাঁর মন্তব্যের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে লেখেন, ‘আমি নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইছি। যদি ওই মন্তব্যে কারও আঘাত লেগে থাকে, তা হলে তার জন্য আমি দুঃখিত। আমি আমার মন্তব্য প্রত্যাহার করছি। আমি সব সময়েই মেয়েদের সুরক্ষা এবং অধিকার রক্ষার পক্ষেই কথা বলি।’ এবার প্রশ্ন হলো, এমন কি বলেছিলেন কাকলি? ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার। এক বিতর্কসভায় অংশ নিয়ে কাকলি আরজি কর কান্ড প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘ছাত্রীদের কোলে বসিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়ার একটা চল শুরু হয়েছিল। যার আমি তীব্র নিন্দা করি, ঘৃণা করি। আমার ছেলেরা নিন্দা করেছিল বলে তাদের কম নম্বর দেওয়া হয়েছিল। তারা আজ প্রথিতযশা চিকিৎসক। কিন্তু কোলে বসিয়ে পাশ করিয়ে দেওয়ার চলটা যে এখানে এসে দাঁড়াবে, উৎকোচ নিয়ে পাশ করানো হবে, কিংবা কেউ মুখ খোলার সাহস দেখালে যে তার থিসিস আটকে দেওয়া হবে, এমনটা আমি ভাবতে পারিনি।’
প্রসঙ্গত, কাকলি নিজেও আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তনী। কাকলি নিজে ছাত্রী থাকাকালীনও ওই কলেজে একাধিক কুকর্ম হত, সেই প্রসঙ্গেই ব্যাখ্যা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। এই ব্যাখ্যা দিতে গিয়েই ভুলবশত বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। তবে নিজের ভুল উপলব্ধি করা মাত্রই ক্ষমাপ্রার্থী হন কাকলি। তৃণমূল সাংসদ যে সর্বদাই নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে, তার দ্বিমত নেই। ২০০৯ সাল থেকে যেভাবে তিনি সংসদে নারী ক্ষমতায়নের জন্য লড়াই করে নারীদের অধিকারকে সুদৃঢ় করেছেন, তা বঙ্গের বুকে নজির হয়ে রয়েছে। ‘আমি সব সময়েই মেয়েদের সুরক্ষা এবং অধিকার রক্ষার পক্ষেই কথা বলি’, ক্ষমা চেয়ে ফের নিজ অবস্থানও স্পষ্ট করলেন কাকলি।
প্রসঙ্গত, তৃণমূল সাংসদের এই মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। সমালোচনা করেছিলেন বিজেপি বিধায়িকা অগ্নিমিত্রা পাল। উল্লেখ্য, অগ্নিমিত্রা নিজেও ওই বিতর্কসভায় উপস্থিত ছিলেন। কাকলির ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে সরব হয়েছিল একাধিক চিকিৎসক সংগঠনও। শনিবার ইন্ডিয়ান সাইকিয়াট্রিক সোসাইটির চিকিৎসকেরা বিবৃতি দিয়ে জানান, কাকলির ওই মন্তব্য অসম্মানজনক। এই মন্তব্য মহিলা চিকিৎসকদের যোগ্যতা ও পরিশ্রমকে প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দেয়। পাশাপাশি ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফেডারেশন নামক সংগঠনের তরফে সঞ্জয় হোম চৌধুরী এবং কৌশিক চাকী লিখিত বিবৃতি দিয়ে জানান, তাঁর এই মন্তব্য গোটা দেশের মহিলা চিকিৎসকদের জন্য অসম্মানজনক। লেখেন, ‘মন্তব্য প্রত্যাহার করার পাশাপাশি অবিলম্বে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে কাকলিকে।’ এরপরই নিজের ভুল উপলব্ধি করতে পারেন কাকলি ঘোষ দস্তিদার। বিলম্ব না করে চিকিৎসা পেশায় জড়িত প্রত্যেক নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেই ক্ষমা চেয়ে নেন এবং নিজ বিতর্কিত মন্তব্য প্রত্যাহারও করে নেন কাকলি। পাশাপাশি অগ্নিমিত্রাকেও এদিন পাল্টা জবাব দিয়ে কাকলি জানান, ‘আমি তাঁর বুদ্ধিতে চলি না এবং কোনো খারাপ কাজও করি না। আমি নিজেও সেই কলেজের প্রাক্তনী এবং একজন চিকিৎসক। সুতরাং, কোনো চিকিৎসককে অসম্মান করা আমার মনোবৃত্তি নয়। অনিচ্ছাকৃত মন্তব্যের জন্য আমি পূর্বেই ক্ষমাপ্রার্থী হয়েছি।’