বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সিটি বা বিএইচইউ চত্বরের মধ্যেই এক আইআইটি পড়ুয়াকে গণধর্ষণের মামলায় দু’মাস পরে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল বারাণসী পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছিল গতবছর অর্থাৎ ২০২৩ এর ১ নভেম্বর রাতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজ লোকসভা কেন্দ্রেই। তবে পুলিশি তদন্তে দু’মাস সময় পেড়িয়ে যায়। অবশেষে ডিসেম্বর মাসে কুণাল পাণ্ডে, আনন্দ ওরফে অভিষেক চৌহান এবং সক্ষম পটেল – এই তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এবার ৭ মাস পর অর্থাৎ ২০২৪ এর অগস্ট মাসেই জামিন পেলেন বিএইচইউ-তে গণধর্ষণের ঘটনার দুই অভিযুক্ত কুণাল পাণ্ডে এবং অভিষেক চৌহান। এই ঘটনায় রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশের রাজ্য-রাজনীতিতে। প্রশ্ন উঠেছে, ধর্ষণের মতো গুরুতর অপরাধে অভিযুক্তদের মাত্র ৭ মাসেই মুক্তি? ধর্ষকরা এভাবে অবাধেই জেল থেকে মুক্তি পেয়ে গেলে নারী নিরাপত্তা তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। জামিনের ঘটনায় বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস আক্রমণ শানিয়েছে বিজেপির আইটি সেলের প্রধান এবং বাংলার কো-ইনচার্জ অমিত মালব্য তথা গোটা পদ্মশিবিরকেই।
শনিবার সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে সমাজমাধ্যমের জামিন-সংবাদের একটি নির্দিষ্ট ভিডিও পোস্ট করে লেখা হয়, “স্রেফ বিজেপির আশ্রয়ে আছে বলেই ধর্ষণের মতো ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েও শাস্তি লঘু! বাহ!” এরপরই অমিতের বিরুদ্ধে তোপ দেগে লেখা হয়েছে, “চরম শাস্তির বদলে, আইআইটি বিএইচইউ-তে গণধর্ষণের ঘটনায় যুক্ত নিগ্রহকারীদের দুজন ৭ মাস পর পেয়ে গেল জামানত। কেন? বিজেপির আইটি সেলে খোদ অমিত মালব্য তাঁদের যুক্ত করেছিলেন বলে? শত ধিক্কার বিজেপি। দেশের কলঙ্ক আপনারা।”
প্রসঙ্গত, অভিযুক্ত সক্ষম পটেলের জেল-মুক্তি হয়নি এখনও, তাঁর জামিনের পরবর্তী শুনানি রয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসেই। উল্লেখ্য, বারাণসী আদালতে তিন অভিযুক্তের জামিনের আবেদন একাধিকবার খারিজ হলেও অবশেষে এলাহাবাদ হাইকোর্ট শর্তসাপেক্ষে কুণাল পাণ্ডে এবং অভিষেক চৌহানের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেছে। এবার প্রশ্ন হলো, প্রধানমন্ত্রীর লোকসভা কেন্দ্রে ঘটা এই লজ্জাজনক ঘটনায় অমিত মালব্যকে কেন আক্রমণ শানিয়েছে তৃণমূল? আদতে তিন অভিযুক্তই বিজেপির আইটি সেলের বারণসী শাখার পদাধিকারী বলে অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধী দলগুলি। অভিযোগ, বিজেপির আইটি সেলের বারণসী শাখায় তাঁদের নিয়োগ করেছিলেন অমিত মালব্য খোদ। তাই গ্রেফতারির ৭ মাসের মধ্যেই দুই অভিযুক্তের জামিন প্রসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে অমিতের বিরুদ্ধেই তোপ দাগলো তৃণমূল। এক্স হ্যান্ডেলে এ প্রসঙ্গে তৃণমূল লিখেছে, “ধর্ষক নিয়োগকারী অমিত মালব্য কর্তৃক নিয়োগ করা ধর্ষকেরা এলাহাবাদ হাইকোর্টে জামিন পেয়েছেন — মোদীর মডেল।”
প্রসঙ্গত, গণধর্ষণের ঘটনা ঘটার পরের দিনই বারাণসীর লঙ্কা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন ওই পড়ুয়া। দিন কয়েকের মধ্যেই তিন অভিযুক্তকে চিহ্নিতও করা হয়েছিল। তবে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার তো দূর, আটকও করেনি। একটি সূত্রের অভিযোগ, ধৃত তিনজনই বিজেপির আইটি সেলের বারাণসী শাখার পদস্থ কর্তা বলে পুলিশ তাদের প্রথম দিকে ধরার চেষ্টাই করেনি। দোষীরা গ্রেফতার না হওয়ায় পথে নেমেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। এরপরেই ঘটনার দু’মাস পর তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। গ্রেফতারির ক্ষেত্রে পুলিশি গাফিলতি নিয়ে পূর্বেও বিজেপিকে আক্রমণ করেছিল তৃণমূল, এবার জামিন প্রসঙ্গে ফের একই সুর চড়ালো রাজ্যের শাসকদল।