নিজেকে ‘বিশ্বগুরু’ বলে ভাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু স্ব-আরোপিত সেই ভাবমূর্তিতে নিজেই কালি লাগিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এর আগেও বারবার নিজেকে ‘বিশ্বের নেতা’ হিসেবে তুলে ধরতে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছেন। এবারেও নিজের ইউক্রেন সফর নিয়ে ‘ভারসাম্যের রাজনীতি’ করতে গিয়ে কার্যত হোঁচট খেলেন তিনি।
গত ২৩ আগস্ট ন’ঘণ্টার ইউক্রেন সফরে কিয়েভ গিয়েছিলেন মোদি। তারপরে একদিকে যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়বস্তু নিয়ে মোদির ভাষ্যে জোরালো প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, তেমনই ইউক্রেন সফর শেষে সেদেশের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি যেসব মন্তব্য প্রকাশ করেছেন, তা ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সম্মান বাড়ায়নি বলেই মনে করা হচ্ছে। জেলেনস্কির মন্তব্য সম্পর্কে ভারতের অসন্তোষের কথা ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে জানিয়ে দেওয়া হলেও, কূটনৈতিক মহলে এ নিয়ে গুঞ্জন থামছে না। অনেকেরই বক্তব্য, বিশ্বের নানান সমস্যায় আগ বাড়িয়ে মাথা গলাতে গিয়ে ‘বিশ্বগুরু’ বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন, কিন্তু শিক্ষা নিচ্ছেন না।
এর মধ্যেই নিজের ইউক্রেন সফর নিয়ে জানাতে গিয়ে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধরত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টকে কিয়েভ সফরের অভিজ্ঞতা জানানোর ফোনটিকে ‘ভারসাম্যের রাজনীতি’ বলেই ব্যাখ্যা করেছেন কূটনীতিকরা। এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করে মোদি নিজেও জানান, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে পুতিনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। সাম্প্রতিক ইউক্রেন সফরে আমার যা ধারণা হয়েছে, তা পুতিনকে জানিয়েছি। তাঁকে বলেছি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে শান্তি ফেরাতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
প্রসঙ্গত, ২২তম রুশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে গত ৮ জুলাই মস্কো গিয়েছিলেন মোদি। মনে করা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমী দেশগুলিকে ‘সন্তুষ্ট’ করার লক্ষ্যে দেড় মাসের মধ্যেই গত ২৩ আগস্ট এই প্রথমবার ‘রাশিয়ার শত্রু’ দেশেও সফর করেন তিনি। কিন্তু গোল বাঁধল তারপরই।
ইউক্রেন সফরের অভিজ্ঞতা জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে ফোন করেছিলেন মোদি। তারপরেই এক্স-হ্যান্ডলে পোস্ট করে মোদি নিজেই লেখেন, ‘বাইডেনের সঙ্গে ইউক্রেনের পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেছি। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের, বিশেষত হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেছি।’
মোদির এই পোস্টের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাৎপর্যপূর্ণভাবে হোয়াইট হাউসও একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। পাশাপাশি, আগামী সেপ্টেম্বরে নির্ধারিত রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশনের কথা থাকলেও মার্কিন বিবৃতিতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গের বিন্দুমাত্র উল্লেখ নেই। এরপরেই ভারতের কূটনৈতিক মহলে যুগপৎ চাঞ্চল্য এবং বিতর্ক তৈরি হয়। প্রশ্ন ওঠে, মোদি কি নিজের পোস্টে বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করলেন?
অন্যদিকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক সেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী কিয়েভ ছাড়া মাত্রই সাংবাদিকদের সামনে এসে কটাক্ষের সুরে জেলেনস্কি বলেছিলেন, ‘মোদি গত মাসে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। সেখানে নাকি ইউক্রেনের হামলা বন্ধের জন্য সওয়াল করেছেন। কিন্তু ওরা তো মোদিকে সম্মানই করে না। উনি মস্কো থাকাকালীনই ইউক্রেনের হাসপাতালে হামলা চালিয়ে শিশুদের পর্যন্ত মেরে ফেলেছে রাশিয়া।’
জানা গিয়েছে, মোদির সফর শেষ হওয়া মাত্রই ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের এই প্রকাশ্য মন্তব্যে যথেষ্ট ক্ষুব্ধ ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের তরফে তৎক্ষণাৎ কূটনৈতিক চ্যানেলে প্রতিবাদ জানানো হয় ইউক্রেনের কাছে। তবে কূটনৈতিকদের একাংশের বক্তব্য, প্রতিবেশী দেশগুলিকে তো মোদি আগেই বিরূপ করে তুলেছেন, এবার রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে মোদির মধ্যস্থতার বহু প্রচারিত বিজ্ঞাপনও মুখ থুবড়ে পড়ল।