মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানে পুলিশি আক্রমণের প্রতিবাদে বুধবার রাজ্যবাপী ১২ ঘণ্টা বনধের ডাক দেয় বিজেপি। যদিও স্বাভাবিক জীবনযাপন সম্পূর্ণ স্তব্ধ করতে বিফল হয়েছে গেরুয়া শিবির। সকাল থেকেই কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন পরিষেবা সচল ছিল। নিত্যদিনের মতো এদিনও সাধারণ মানুষকে পথে নামতে দেখা গিয়েছে। তবে সেই সংখ্যাটা তুলনামূলকভাবে কম। বাস, রেল পরিষেবা আংশিকভাবে ব্যাহত হলেও পুলিশি তৎপরতায় বেলার দিকে তা স্বাভাবিক হয়েছে। বুধবার সকাল থেকেই বনধকে সফল করতে তৎপর হয়ে পড়ে বিজেপি নেতা, নেত্রী এবং কর্মী সমর্থকরা। তবে কিছু কিছু জায়গায় বনধকে ঘিরে কার্যত খন্ডযুদ্ধের আকার নেয়।
প্রসঙ্গত বনধ কর্মসূচিতে দিকে দিকে পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের বিক্ষিপ্ত বচসা, ধস্তাধস্তির ছবি ধরা পড়ে। বুধবার কোলে মার্কেটে বনধের সমর্থনে নেমেছিলেন বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষ। সেখানে তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। উত্তেজনার পরিস্থিতির মধ্যেই লেবুতলা পার্কের বাড়ি থেকে বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষকে আটক করে পুলিশ।
Advertisement
অন্যদিকে গড়িয়াহাটে বন্ধের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিলেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। বাস চালক ও যাত্রীদের কাছে তিনি অনুরোধ করেছিলেন, যাতে তাঁরা বনধকে সমর্থন করেন। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই গড়িয়াহাট থেকে রূপা গঙ্গােপাধ্যায় এবং অগ্নিমিত্রা পালকে আটক করে পুলিশ। বনধের সমর্থনে বড়বাজার এলাকায় জোর করে দোকানপাট বন্ধেরও অভিযোগ উঠেছে পদ্মশিবিরের বিরুদ্ধে।
Advertisement
একই পরিস্থিতি শিয়ালদহের টালা সেতুতে। এখানে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। তবে এই বনধ কর্মসূচিতে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়েছে রেল পরিষেবায়। মুর্শিদাবাদে গৌরীশংকর ঘোষ, কল্যাণীতে অশোক কীর্তনীয়াদের নেতৃত্বে রেল অবরোধ করা হয়। যার ফলে চূড়ান্ত সমস্যার মুখে পড়তে হয় নিত্য যাত্রীদের। সকাল ৭টা থেকে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার আপ ও ডাউন লাইনে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যায়। নিত্যযাত্রীরা কর্মক্ষেত্রের উদ্দেশে রওনা হয়েও চূড়ান্ত হয়রানির শিকার। হৃদয়পুরের এক যাত্রী জানালেন, ”সকালে একঘণ্টা ধরে স্টেশনে অপেক্ষা করছি। ট্রেন বন্ধ। টিকিট কাউণ্টারে গিয়ে জানতে পারলাম, আপ-ডাউনে কোনও ট্রেন চলছেই না। এমনকি কাউন্টার থেকে টিকিটও দেওয়া হচ্ছে না। কখন স্বাভাবিক হবে, তা কিছুই বলতে পারলেন না রেলকর্মীরাও।” শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখাতেও ব্যাহত হয় রেল পরিষেবা। নামখানা স্টেশনে রেল অবরোধ করেন বিজেপি কর্মীরা।
আসানসোল ও বীরভূমেও একই চিত্র ধরা পড়ে। সকাল থেকে বন্ধের প্রভাব পড়ে হাওড়া স্টেশনেও। ব্যান্ডেল ও কাটোয়া রেল অবরোধের জেরে বিঘ্নিত হয়েছে ট্রেনের স্বাভাবিক পরিষেবা। তবে বেশ কিছু জায়গায় রেল পুলিশের তৎপরতায় অবরোধকারীদের তুলে ট্রেন চলাচল ফের স্বাভাবিক হয়েছে। শুধু রেল নয়, বনধ কর্মসূচি সফল করার প্রচেষ্টায় বাস এবং মেট্রো পরিষেবাও ব্যাহত করার চেষ্টা বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের। সকাল ৯ টা নাগাদ এসপ্লানেড মেট্রোর সামনে অবরোধের চেষ্টা করে বিজেপি কর্মীরা। এমনকি মেট্রো স্টেশনের শাটার নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতেই বাধা দেয় পুলিশ।
শ্যামবাজার থেকে বেশ কয়েকজন বিজেপি কর্মীকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পদ্মশিবির। তবে শহরের প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলার চিত্র ছিল কিছুটা অন্যরকম। বনধের সকালে ধর্মতলা চত্বরে সরকারি বাসের পাশাপাশি দেখা মিলেছে প্রচুর বেসরকারি বাসেরও। ট্যাক্সি ও অন্যান্য গাড়ির সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম হলেও, তা একেবারে নগণ্য নয়। পাশাপাশি, মোতায়েন রয়েছে পর্যাপ্ত পুলিশও।
অন্যদিকে, সল্টলেকের করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড থেকেও স্বাভাবিক রয়েছে পরিষেবা। সকাল থেকেই চলছে বাস। তবে যাত্রী সংখ্যা অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা কম। কিছুটা একই চিত্র হাওড়া বাস স্ট্যান্ডেও। সকাল থেকে এই বাস স্ট্যান্ডে অন্যদিনের তুলনায় বাসের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তবে শ্যামবাজার চত্বরে সকাল থেকে বেসরকারি বাসের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। হাওড়া ও যাদবপুর এইট বি-তেও বাস পরিষেবা ছিল স্বাভাবিক। তবে বুধবার সকাল থেকেই কলকাতায় রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশকর্মী।
Advertisement



